ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিনা বিচারে জেলে দেড় দশক;###;তিনজনের বিচার ৯০ দিন ও চাঁন মিয়ার বিচার ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ

মকবুল, সেন্টু আর বিল্লালকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

মকবুল, সেন্টু আর বিল্লালকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিনা বিচারে দেড় দশক ধরে কারাগারে থাকা চাঁন মিয়া, মকবুল, সেন্টু ও বিল্লালের মামলার বিচার শেষ করতে সময় বেঁধে দিয়েছে হাইকোর্ট। এর মধ্যে মকবুল, সেন্টু ও বিল্লাল এই তিনজনকে আদালত জামিন দিয়েছে। তবে চাঁন মিয়া নিম্ন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ায় তাকে কারাগারেই থাকতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ ওই চার আসামিকে রবিবার আদালতে হাজির করার পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আদালত বলেছে, মকবুল, সেন্টু ও বিল্লালের মামলার বিচার ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। আর নিম্ন আদালতে চাঁন মিয়ার মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে ৬০ দিনের মধ্যে। একাধিক হত্যাকা-ের ঘটনায় রাজধানীর চার থানায় পৃথক চারটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে উত্তরা থানার মামলায় মকবুল হোসেন ২০০০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি, তেজগাঁও থানার মামলায় বিল্লাল হোসেন ২০০২ সালের ২১ নবেম্বর, শ্যামপুর থানার মামলায় চাঁন মিয়া ২০০১ সালের ৭ ডিসেম্বর ও মতিঝিল থানার মামলায় সেন্টু ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান। এসব মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন। শুরু হয়েছে সাক্ষ্য গ্রহণও। কিন্তু পর্যাপ্ত সাক্ষী হাজির করতে না পারায় এখনও শেষ হয়নি বিচারকাজ। ফলে বিনাবিচারে ওই চার আসামি ১৪ থেকে ১৬ বছর ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা ও কুুমার দেবলু দে। তারা আদালতে বলেন, ফৌজদারি মামলায় বিচার না হওয়ায় পৃথক চারটি মামলার চার আসামি বিনাবিচারে কারাগারে রয়েছেন ১৬ বছর ধরে। এভাবে বিনাবিচারে কারাগারে পড়ে থাকা অমানবিক। বিচার শেষে যদি তারা নির্দোষ প্রমাণিত হন, তাহলে ওই সময়টা কে ফিরিয়ে দেবে? এ বিষয়ে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পাশাপাশি রুল জারি করেন। এর আগে ৩০ নবেম্বর বিনা বিচারে কাশিমপুর কারাগারে সাত বছর ধরে কারাবন্দী চার নারীকে আগামী ১৬ জানুয়ারি আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন একই আদালত। এরা হলেনÑ সুমি আক্তার রেশমা, শাহনাজ বেগম, রাজিয়া সুলতানা ও রানী ওরফে নুপুর। তাদের কেন জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করা হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টে লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা চার নারী কারাবন্দী থাকার বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর হাইকোর্টের এ নির্দেশনা আসে। আদেশের পর এ্যাডভোকেট আইনুন নাহার সিদ্দিকা সাংবাদিকদের জানান, মহিলা কারাগারে পৃথক হত্যা মামলায় বিনা বিচারে আটক চার নারী বন্দীকে ১৬ জানুয়ারি সকাল সাড়ে দশটায় আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। হত্যা মামলার নথিও আদালতে তলব করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৫ নবেম্বর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন ১৭ বছর বিনা বিচারে কারাগারে থাকা ঢাকার সূত্রাপুরের ৫৯, গোয়ালঘাট লেন এলাকার শিপন মিয়া। একইভাবে তার বিষয়টি গত ৩০ অক্টোবর নজরে আনা হলে শিপনকে ৮ নবেম্বর হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওইদিন বিচারপতি এম. ইনায়েতুুর রহিম ও জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ দীর্ঘ ২২ বছর আগের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ১৭ বছর ধরে বিনা বিচারে কারাগারে থাকা মোঃ শিপনকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন প্রদান করেন। সেদিন আদালত তার আদেশে বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়িত্ব দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও আদালত ব্যর্থ হয়েছে। এটা আমাদের সকলের জন্য লজ্জাকর। এই দায় রাষ্ট্রের এবং বিচারকের।’
×