ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এসএম মুকুল

একজন শিক্ষকের প্রতিকৃতি

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

একজন শিক্ষকের প্রতিকৃতি

শিক্ষকতা মহান পেশা হলে শিক্ষক হচ্ছেন মহত্তম। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা স্বমহিমায় বিশুদ্ধ জ্ঞান, মানবিক আর নৈতিক শিক্ষায় দিক্ষীত করে গড়ে তুলেন দেশের যোগ্য নাগরিক। প্রতিটি শিক্ষিত মানুষের জীবনে শিক্ষকের আদর্শিক প্রভাব নানাভাবে প্রেরণার পথ দেখায়। যদিও বর্তমান সময়ে শিক্ষকতার পেশায়ও আদর্শের অনুপস্থিতি প্রকট রূপ নিয়েছে। তারপরও কালের আয়নায় এখনও আলোকিত মানবতা বোধের পথ দেখায় বহু মহৎ শিক্ষকের রেখে যাওয়া আদর্শ আর দেখিয়ে দেয়া পথ। তেমনি একজন শিক্ষক শাহ আজিজ স্যার (মরহুম)। যিনি তাঁর শিক্ষকতা পেশায় রেখে গেছেন অজস্র মানবীয় দীক্ষার নজির। গ্রামের নামানুসারে শাহ্ আজিজ স্যার প্রিয় ছাত্র ও অভিভাবকদের কাছে সিংধার আজিজ স্যার নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। হাস্যোজ্জল, সদালাপী, রঙ্গরসময় এবং সরল-কোমল মনের অধিকারী ছিলেন তিনি। ছাত্রছাত্রীরা ছিল তার সন্তানের মতো। বন্ধুর মতো প্রাণখোলা সরলতায় মিশতেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। নেত্রকোনা জেলায় স্কাউটিং বিকাশের অগ্রদূত ছিলেন শাহ আজিজ স্যার। শরীরচর্চা এবং ক্রীড়াঙ্গনে শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ছিলেন প্রেরণার প্রতীক। তিনি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়কে সংস্কৃতি, ক্রীড়াঙ্গন এবং স্কাউটিংয়ে অনন্যমাত্রায় পরিচিতি দিয়েছিলেন। নিজের সবটুকু শ্রম, মেধা, সেবা আর দক্ষতাকে বিলিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের মাঝে। শাহ্ আজিজ স্যারের নিপুণ দক্ষতায় গড়ে তোলা স্কাউটার বাংলাদেশ স্কাউটিংয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল পদক অর্জন করে মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়কে গৌরবোজ্জ্বল পরিচিতি এনে দিয়েছে। শাহ্ আজিজ স্যার শুধু ছাত্রদের কাছে নয়, অভিভাবকদের কাছে ছিলেন প্রিয় একজন শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীদের যে কোনো সমস্যা আর বিপদে তিনি ছিলেন পরমাশ্রয়, পরিত্রাণদাতা। বিশেষত ভাটিবাংলার দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীদের এবং গরিব শিক্ষার্থীদের বেলায় তিনি ছিলেন একমাত্র ভরসাস্থল। যে ক্লাসের শিক্ষার্থীই হোক না কেন তিনি তার শিক্ষাসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে শ্রেণী শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রয়োজনে প্রধান শিক্ষকের কাছে অসংকোচে সুপারিশ করতে দ্বিধা করতেন না। তবু তিনি চাইতেন ছেলেমেয়েরা কোনভাবে মাধ্যমিকটা পাস করুক। তাহলেই কৃষক পিতার কিছুটা হলেও দুঃখ ঘোচাতে পারবে। অজপাড়াগাঁয়ের অসংখ্য গরিব শিক্ষার্থীর এবং তাদের অভিভাবকদের কাছে তিনি ছিলেন ভরসার কেন্দ্র। গরিব এবং মেধাবী অথচ গরিব এমন শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে তিনি শহরের ধনী শিক্ষার্থীদের পুরনো বই সংগ্রহ করে দিতেন যাতে নতুন বই কিনতে না পারলেও তারা পড়া চালিয়ে যেতে পারে। তিনি বাসা বাড়িতে যেতেন অভিভাবকদের আহ্বানে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানের পড়াশোনা ও ভবিষ্যত সম্পর্কে স্যারের পরামর্শ নিতেন। তিনি স্কুলের সৌন্দর্য এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতেন। ছাত্রছাত্রীরা ছিলেন স্যারের অনুগত এবং ভক্ত। তেমনি স্যারও ছিলেন ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, বন্ধুপ্রতীম। সবার প্রিয় আজিজ স্যার ১৯৯০ সালে দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়। আজকের দিনে আমাদের প্রত্যাশা শিক্ষক সমাজের প্রতিটি শিক্ষক যেন হয়ে ওঠেন সত্যিকারের নিবেদিতপ্রাণ মানুষ গড়ার কারিগর। ঢাকা থেকে
×