ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাভের মুখ দেখছে না ॥ বিটিসিএলে সম্প্রতি এমডি নিয়োগ

রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ টেলিকম কোম্পানির ৪টিতেই ভারপ্রাপ্ত এমডি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ টেলিকম কোম্পানির ৪টিতেই ভারপ্রাপ্ত এমডি

ফিরোজ মান্না ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি টেলিকম কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে আমলাতন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়েছে। পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে বিটিসিএলে সরকার সম্প্রতি নিয়মিত এমডি নিয়োগ দিয়েছে। বাকি চারটি কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়েই চালানো হচ্ছে। বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে চালানো হচ্ছে। এ কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি কোম্পানিই দিন দিন লোকসানের দিকে চলে যাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, পাঁচটি কোম্পানির কোনটিতেই নিয়মিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন না। দুটি কোম্পানিতে নিয়ম ভেঙ্গে নিচের সারির কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে সঠিক প্রকল্প হাতে নেয়া ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন করে ব্যবসা সফলও হতে পারছে না কোম্পানি দুটি। অদক্ষ ব্যবস্থাপনাই রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর করুণ অবস্থার জন্য দায়ী। আমলানির্ভর অপেশাদার পরিচালনা পরিষদের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে পেশাদার ব্যবস্থাপকদের মাধ্যমে পরিচালনার কাঠামো তৈরি করা না হলে এগুলো কখনই লাভজনক হবে না। কোম্পানিগুলোর ভেতরে কর্মকর্তাদের নানারকম গাফিলতি রয়েছে। আইনগত সীমাবদ্ধতাসহ পারিপাশির্^ক নানা কারণে বোর্ড অনেক ক্ষেত্রেই গাফিলতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সরকারী কোম্পানিতে এমডি নিয়োগ নিয়েও নানা ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। এ কারণে চাইলেই নিয়মিত এমডি নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। পাঁচটি কোম্পানিরই চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এর আগে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী হলেও কোম্পানিগুলোর সিদ্ধান্ত এবং কর্মকা- সম্পর্কে বেশিরভাগ বিষয়েই অবহিত নন। কারণ কোম্পানিগুলো কোম্পানি আইনে চলছে। তার অনুমোদন ছাড়াই কোম্পানিগুলো পরিচালনা পরিষদ নানা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিচালনা পর্ষদ কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, কিভাবে বাস্তবায়ন করছে, তা তার জানার বাইরে থেকে যাচ্ছে। জানা গেছে, গত সপ্তাহে বিটিসিএলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজ উদ্দিন আহমেদকে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই প্রথম বিটিসিএলে নিয়মিত একজন এমডি নিয়োগ দেয়া হলো। তাকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয় সরকার। এর আগে এই প্রতিষ্ঠানটি ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়েই চলেছে। টেলিকম ক্যাডারের এই কর্মকর্তা নিয়োগ পাওয়ায় বিটিসিএলের বিসিএস (টেলিকম) ক্যাডার টেলিকম সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ এ তালেব ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী হাম্মাদ মুজিব সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও বিটিসিএলে এই প্রথম কোন নিয়মিত এমডি নিয়োগ করা হলো। এর আগে এ প্রতিষ্ঠানটি চলেছে ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে। কখনও আমলারাও এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার একজন যোগ্য নেতৃত্ব পেল বিটিসিএল। প্রতিষ্ঠানটি এখন লাভের মুখ দেখবে। অনিয়ম দুর্নীতি কমবে। তিনি যখন ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখন প্রতিষ্ঠানটি গতিশীল ছিল। অনিয়ম দুর্নীতিও অনেকাংশে কমে গিয়েছিল। এদিকে বাংলাদেশ খুলনা কেবল শিল্প লিমিটেডে কোম্পানির সচিব সিরাজুল ইসলামকে একই সঙ্গে জিএম (উৎপাদন) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রাখা হয়েছে প্রায় দুই বছর ধরে। ফলে কোম্পানির চেন অব কমান্ড প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কোম্পানিটির গত এক বছরে উৎপাদনও একাধিকবার ব্যাহত হয়েছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে খুলনা কেবল শিল্প লিমিটেডে এমডি নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১১ জনের কাছ থেকে আবেদনও নেয়া হয়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া থেমে আছে প্রায় দেড় বছর ধরে। টেলিফোন শিল্প সংস্থা টেশিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন বিটিসিএলের একজন বিভাগীয় প্রকৌশলী কবীর হাসান। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে। কারও বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চললে সংস্থা প্রধানের দায়িত্বে রাখা হয় না। অথচ তিনিই দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। টেলিটকেও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। তিনি বিটিসিএলের পরিচালক ছিলেন। গত প্রায় চার বছর ধরে তিনি এই পদে আছেন। এখন পর্যন্ত টেলিটক দেশের প্রধান পাঁচটি অপারেটরের মধ্যে পঞ্চম। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, গ্রাহকসেবা সবকিছুতেই পিছিয়ে আছে টেলিটক। এভাবেই চলছে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম কোম্পানিগুলো। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের তেমন কোন উদ্যোগও নেই। তবে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত এমডি নিয়োগ করা হবে। পেশাদার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে চালানো সম্ভব হয়, সেই চেষ্টাই করা হবে। কারণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বসিয়ে আসলে এসব প্রতিষ্ঠান গতিশীল করা সম্ভব হবে না। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ কারণে বিটিসিএলে নিয়মিত এমডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোও একইভাবে পূরণ করা হবে।
×