ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম ভূমি অফিস

অবৈধ অর্থ আদায় চলছেই

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

অবৈধ অর্থ আদায় চলছেই

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে মহানগর ও সহকারী কমিশনার ভূমির দফতরগুলোতে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ভূমি মালিকদের হয়রানি করে এ ধরনের অর্থ আদায় করছেন সরকারী কর্মচারী ও কর্মকর্তারা। ভূমির খতিয়ান তৈরি, নামজারি ও জমা ভাগসহ বিভিন্ন ইস্যুতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভূমি মালিক ও ক্রেতারা। এছাড়াও সহকারী ভূমি অফিসের আওতায় তহসিল অফিসগুলোতেও চলছে খাজনা আদায়ের নামে নানান অজুহাতে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা। তবে এমন অভিযোগ প্রতিনিয়ত জমা পড়ছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। অভিযোগ রয়েছে, ষোলোশহরের মহানগর ভূমি অফিসের প্রত্যেকটি সার্কেলেই চলে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে স্বার্থসিদ্ধির নানা প্রক্রিয়া। ভূমিদস্যুরা অসাধু সহকারী কমিশনার থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত সকলকেই অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে হাতিয়ে নিচ্ছে অন্যের ভূমি। আবেদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে নামজারি খতিয়ান তৈরি পর্যন্ত দফায় দফায় এমনকি প্রতি টেবিলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া রয়েছে। অন্যথায় ভুক্তভোগীদের আবেদন ফাইল চাপা পড়ে বন্ধ হয়ে যায় প্রশাসনিক কার্যক্রম। প্রশ্ন উঠেছে, এ দফতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ বেতন পেলেও বদঅভ্যাসের পরিবর্তন ঘটেনি। শুধু তাই নয়, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক শ্রেণীর সিন্ডিকেট ওতপেতে থাকে দফতরে আগতদের সমস্যা সমাধানে নানা প্রক্রিয়া নিয়ে। এ ধরনের প্রক্রিয়ায় আগতদের পরামর্শ দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে নিয়ে যায়। নামজারি ও জমাভাগ এমনকি ভূমির খতিয়ান সংশোধনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মোটা অংকের অর্থ দাবি করে আদায়ের অপচেষ্টা চলে। মালিকানা সম্পত্তিকে খাসজমি বানিয়ে আবার খাসজমিকে মালিকানা সম্পত্তিতে রূপান্তরের মতো অনৈতিক চেষ্টার বিনিময়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ভূমি অফিসের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা। পরিত্যাক্ত সম্পত্তিকে মালিকানায় রূপান্তর ও অর্পিত সম্পত্তি না হলেও কারসাজির মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে হয়রানি করছে। এ ব্যাপারে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (চট্টগ্রাম-১) সহকারী পরিচালক এইচএম আখতারুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই মূলত দুদক গোপনে অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে। এক্ষেত্রে অভিযোগর সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযান চালানো হয় বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়। ভূমি অফিসের অনিয়মের বিষয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। গত ২২ নবেম্বর পরিচালিত অভিযানে সরকারী কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (চট্টগ্রাম-১) উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেইন মৃধার নেতৃত্বে সর্বশেষ গত ২২ নবেম্বর এক অভিযান পরিচালিত হয়। এ অভিযানে আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) দফতরের অফিস সহকারী সঞ্জীব কুমারকে ঘুষের ১০ হাজার টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। নামজারি খতিয়ানের বিপরীতে হাজী মোহাম্মদ সফির কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুদক এ অভিযান পরিচালনা করে। গ্রেফতারকৃতকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পাঁচলাইশ থানায় দায়েরকৃত এ মামলার তদন্ত করবে দুদক। সরকারী দফতরের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে ও অভিযোগের আওতায় থাকা কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনতে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় (চট্টগ্রাম-১) উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেইন মৃধার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি ফাঁদ দল গঠন করা হয়। এই দলে সহকারী পরিচালক এইচএম আখতারুজ্জামান, উপসহকারী পরিচালক দেলোয়ার হোসেন, কোর্ট সহকারী এসআই হাবিবুর রহমান ও আবু মোহাম্মদ আনোয়ারুল মাসুদ, কনস্টেবল মোঃ মাকসুদুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম। হাজী মোহাম্মদ সফির কাছ থেকে এক হাজার টাকা মূল্যের ১০টি নোট ইনভেন্টরি করে দুদক এ অভিযান পরিচালনা করে।
×