ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা বার্নিকাটের

মিয়ানমারে সহিংসতার নিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের, নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

মিয়ানমারে সহিংসতার নিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের, নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিয়ানমার সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষিতে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সেখানকার সহিংসতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বিগ্ন বলেও জানিয়েছে দেশটি। বাংলাদেশ ও সমমনা দেশগুলোকে রাখাইন প্রদেশের শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করারও আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান। এছাড়া বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। সোমবার ধানম-ির এ্যাডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টারে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিক্যাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান। ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে মার্শা বার্নিকাট বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তের ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। সেখানকার সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশসহ সমমনা সকল দেশকে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক অভিযানের পর সেখানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই সেখানে কী ঘটছে, তা আমরা পুরোপুরি জানি না। এ কারণে সেখানকার সমস্যা সমাধানের জন্য একটি স্বাধীন, পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সংঘটিত সহিংসতায় নিন্দা জানান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। তিনি বাংলাদেশ ও সমমনা দেশগুলোকে রাখাইন প্রদেশের শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করারও আহ্বান জানান। বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে জানতে চাইলে মার্শা বার্নিকাট বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা থাকবে বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন কমিশনটি একটি নিরপেক্ষ, শক্তিশালী ও দল নিরপেক্ষ হবে, যা একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে। রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের ওপর প্রভাব নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত সপ্তাহে ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিকদের জানিয়েছিলেন। ওই ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছিলেন। ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে মার্শা বার্নিকাট বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ যে অবস্থান নিয়েছে, সেটা সঠিকই রয়েছে বলেও তিনি জানান। উল্লেখ্য, ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা করে। এতে সীমান্তের পুলিশের ৯ সদস্য নিহত হয়। সেই হামলার জন্য রোহিঙ্গাদের দায়ী করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইন রাজ্যে হামলা চালায়। এরপর থেকেই সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা। এক প্রশ্নের উত্তরে মার্শা বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব বাড়ছে। তারই অংশ হিসেবে দুই দেশ সামরিক সহযোগিতাও বাড়াতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর দক্ষতা বাড়াতে লজিস্টিক সহায়তা বাড়াতে চায়। সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ, তথ্য বিনিময়, অভিজ্ঞতা বিনিময় ইত্যাদি বিষয়ে সহায়তা করা হবে। এই লজিস্টিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশ চাইলে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তিও হতে পারে বলে জানান তিনি। পহেলা জানুয়ারির পর ঢাকার কূটনীতিকদের নিরাপত্তা জোরদারে সরকারের পদক্ষপের ওপর মন্তব্য জানতে চাইলে মার্শা বার্নিকাট বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করছে। তাদের পদক্ষেপে আমি সন্তুষ্ট। তবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে শুধু নিরাপত্তা জোরদারই যথেষ্ট নয়। সন্ত্রাস ও জঙ্গী প্রতিরোধে বহুমুখী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক উদ্যোগও জরুরী। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা আনা জরুরী বলেও জানান তিনি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের বিজয়ে মার্কিন অভিবাসন নীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে কি-না জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈধভাবে অভিবাসনকে সব সময় স্বাগত জানিয়ে আসছে। আমাদের অভিবাসন নীতিতে কোন ধর্মীয় বা বর্ণের প্রভাব নেই। আপনাদের আরও বলতে চাই, বাংলাদেশের প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক শিল্প ছাড়াও অন্যান্য খাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে কি-না জানতে চাইলে মার্শা বার্নিকাট বলেন, পোশাক শিল্প ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি-শক্তি, বিমান খাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে।
×