ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলবাড়িয়ায় ১৪৪ ধারা, র‌্যাব-পুলিশের টহল জোরদার ॥ নিহতের গায়েবানা জানাজা, এলাকায় আতঙ্ক

পুলিশের বাধায় ক্যাম্পাসে লাশ নিতে পারেনি সহকর্মীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

পুলিশের বাধায় ক্যাম্পাসে লাশ নিতে পারেনি সহকর্মীরা

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ কলেজ জাতীয়করণের দাবি কেন্দ্র করে ফুলবাড়িয়ায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় প্রশাসন ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদরে ১৪৪ জারি করেছে। সোমবার সকাল নয়টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা জারি করে প্রশাসন। মাইকিংয়ে বলা হয় ফুলবাড়িয়ার জোড়বাড়িয়া থেকে ভালুকজান পর্যন্ত ১৪৪ ধারা চলাকালে সব ধরনের সভা সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সোমবার সকাল থেকে উপজেলা সদরের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজ গেটসহ বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের গাড়িও এ সময় টহল দেয়। এ সময়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন মোড়ের চা স্টল ও হোটেল রেস্তরাঁর ভেতরে বাইরে কাউকে অবস্থান করতে দেয়নি পুলিশ। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজ গেটে কয়েকটি যানবাহনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। আরও ভাংচুর ও হামলার আশঙ্কায় সোমবার সকাল থেকে আলম এশিয়াসহ দূরপাল্লার সব পরিবহন সার্ভিস ফুলবাড়িয়া বাজারের বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। কালো পতাকা টানিয়ে অন্যান্য যানবাহন চলেছে সীমিতভাবে। গ্রেফতার আতঙ্কে সাধারণ মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হচ্ছে না। এদিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রবিবার রাতে বিশেষ ব্যবস্থায় ময়নাতদন্ত শেষে অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের লাশ পুলিশ পাহারায় শহরের জামতলা মোড়ের বাসায় রাখা হয়। পরে সোমবার সকালে ফের পুলিশ পাহারায় জানাজার জন্য অধ্যাপক কালামের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় নান্দাইল উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে। বেলা ১১টায় সেখানে অধ্যাপক কালামের গায়েবানা জানাজা শেষে অনুষ্ঠিত হয়। ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের বিভিন্ন স্তরের অধ্যাপক কলেজ কর্মচারী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী জানাজায় অংশ নেয়। ফুলবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের নিজ কর্মস্থলে অধ্যাপক কালামের লাশ নিয়ে আসতে পুলিশের বিরুদ্ধে বাধাদানের অভিযোগ করে অধ্যাপক আবুল হাশেম জানান, একজন প্রিয় শিক্ষকের জানাজার জন্য শত শত শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী অপেক্ষা করছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসে লাশ নিতে না দেয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে অবশ্য পৌর এলাকার বাইরে জোড়বাড়িয়া কাচারিতে বাদ আছর অধ্যাপক কালামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের সময় অধ্যাপক কালামের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া করা হয়। অধ্যাপক কালামের জানাজা ও দাফন কাফনের কারণে কলেজের পূর্ব নির্ধারিত ইন্টার মেডিয়েট শ্রেণীর নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি সোমবার। রবিবার সংঘর্ষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি এবং পথচারী সফর আলী মারা যাওয়ার ঘটনায় আরও একটিসহ ২টি আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় রবিবারে আটক গোলাম ফারুক, জুয়েল মিয়া ও নাজমুল ইসলাম এই ৩ জনকে সোমবার বিকেলে রিমান্ড চেয়ে ময়মনসিংহ আদালতে তোলা হয়। পরে তাদের মামলায় শোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়। অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর সফর আলী মারা যাওয়ার ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। স্থানীয় এমপির পুত্রের মালিকানাধীন প্রাইভেট হাসপাতালে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ আহমেদ খান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আরও তদন্ত কমিটি ॥ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ময়মনসিংহে এক কলেজ শিক্ষক নিহতের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও কলেজ) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হুদাকে প্রধান করে ওই কমিটি করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে আছেন মাউশির এক উপ-পরিচালক ও মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মামলা-মোকদ্দমার যে বিষয় সেটা তো সংশ্লিষ্ট অথরিটি করবে। যেহেতু আমাদের শিক্ষা পরিবারে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটনাটা ঘটেছে, শিক্ষক মারা গেছেন এ বিষয় সম্পর্কে আমাদের সঠিক জিনিস জানার ও করার অনেক কিছুই আছে। সেজন্য আমরা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত কমিটির এক সদস্য ইতোমধ্যে সেখানে (ময়মনসিংহ) চলে গেছেন, প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। আমরা খবর রাখছি, চেষ্টা করছি, যোগাযোগ রাখছি, আমরা সমাধানের চেষ্টা করব।
×