ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্গীতসুধা, অক্ষরের আলো

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

সঙ্গীতসুধা, অক্ষরের আলো

সঙ্গীত পরিশুদ্ধ করে হৃদয় আর একটি ভাল বই পথ দেখায়, পথের সন্ধান দেয়। একটির সঙ্গে অন্যটির প্রত্যক্ষ সমন্বয় না থাকলেও রয়েছে পরোক্ষ বন্ধন। এক অর্থে গান ও বই দুটোই আনন্দ দান করে, জ্ঞানতৃষ্ণা বাড়ায় এবং মানুষকে আরও মানবিক করে তোলে। মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব- সেটি সে অনুধাবনে সমর্থ হয়। কথায় বলে, যে গান ভালবাসে সে খুন করতে পারে না। কথাটা মিথ্যে নয়। ১৯৪৭-এর পাঞ্জাবে সংঘটিত দাঙ্গার পর ওস্তাদ আবদুল করিম খাঁ বলেছিলেন, ‘সঙ্গীতে চর্চা করলে দেশ বিভাগ হতো না, দাঙ্গাও পরিহার করা যেত।’ আর বই যার নিত্যসঙ্গী তার পক্ষেও সম্ভব নয় মানুষের ক্ষতিসাধন। দেশে তাই গানের উৎসব এবং বই পড়ার আয়োজন হতে দেখলে সমাজের অভিভাবকমণ্ডলী খুশি হন, আশ্বস্ত বোধ করেন। রাজধানীতে চলমান উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব বেশ সাড়া ফেলেছে। ভারতে ছোট পরিসরে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের উৎসব হয়। সেগুলোতে আড়াই বা তিন হাজার মানুষ হয়। আর ঢাকার বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবে পঞ্চাশ হাজার পর্যন্ত লোকসমাগমের রেকর্ড রয়েছে যার সিংহভাগই তরুণ-যুবা। কে ভেবেছিল এদেশের তরুণরা যারা ব্যান্ড গানে উন্মাতাল হয় তাদেরই বড় একটি অংশ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুধাপানে আগ্রহী হবে! তবে এটা তো ভুলে গেলে চলবে না উপমহাদেশের বড় বড় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পণ্ডিতদের অনেকে এ দেশের মাটিতেই বেড়ে উঠেছিলেন। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই শিকড় বাংলাদেশে। আলাউদ্দিন খাঁ, আলী আকবর খাঁ, রবিশঙ্কর, উদয় শঙ্কর, নিখিল ব্যানার্জি, অজয় চক্রবর্তী, বেলায়েত খাঁ, ইমদাদ খাঁÑ এঁরা সবাই এদেশেই মাটিতে বেড়ে উঠেছেন। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব এখন সকল সঙ্গীতপ্রেমীর তীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশ এবং বিদেশের অনেকেই এই উৎসবে যোগ দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী ও বিদেশী এই অনুষ্ঠানের কথা ভেবে তাঁদের বাংলাদেশ সফরের সময়সূচী নির্ধারণ করছেন। দেশ-বিদেশে ধর্মান্ধদের উগ্র আক্রমণ ও হুমকির জন্য এই উৎসব অনুষ্ঠান নিয়ে অনেকের মনেই শঙ্কা ছিল। কিন্তু সকল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে উপেক্ষা করে প্রতিবারই যথারীতি আয়োজিত হয়ে আসছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের এই মহা-অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একই ভেন্যুতে শুরু হলো পঞ্চম বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৬। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে কবি সৈয়দ শামসুল হককে। ক’দিন আগেই চলে গেছেন গত উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করা বালমুরালিকৃষ্ণ। তাঁকে এবং ওস্তাদ আলী আহমেদ হোসেনকে এই উৎসবে স্মরণ করা হলো শ্রদ্ধাভরে। শঙ্কার দোলাচল কাটিয়ে শুদ্ধ সংস্কৃতি দিয়েই সব অশুভকে জয় করার প্রত্যয়ে উদ্বোধন হলো কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতে আবিষ্ট থাকার পঞ্চম বর্ষ। এবারের উৎসবে বিশেষভাবে লক্ষণীয় হলো দেশের শিল্পীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ। শিল্পী সঙ্গতকারী মিলে এবার পরিবেশনায় থাকছেন দেশের ১৬৫ ও ভারতের ৮২ জন। দেশে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের এই জাগরণ কাক্সিক্ষত সাফল্য ধরে রাখুকÑ এটাই প্রত্যাশা। শিশু-কিশোরদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজধানীর গেণ্ডারিয়া কিশলয় কচি-কাঁচা মেলা প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী বইমেলা। যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি ও গেণ্ডারিয়া কিশলয় কচি-কাঁচার মেলা। বাংলা একাডেমির এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এ ধরনের বইমেলা সারাদেশেই আয়োজিত হতে পারে। সেজন্য জাতীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশিত। গে-ারিয়ার বইমেলার উদ্বোধক অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, বই হোক আমাদের নিত্যসঙ্গী।
×