নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৬ নবেম্বর ॥ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের সাঁওতালদের ওপর হামলা, লুটপাট ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শনিবার গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় গোবিন্দগঞ্জের সংসদ সদস্য ও দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ছয়শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। সাঁওতালপল্লী হরিণাবাড়ি নতুনপুর গ্রামের মাহিলে হেমব্রমের ছেলে সমেশ হেমব্রম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। সমেশ হেমব্রম বাগদা সাহেবগঞ্জ আদিবাসী ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য। সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে প্রধান আসামি এবং সহযোগী হিসেবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হান্নান, রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আউয়াল, গোবিন্দগঞ্জের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হোসেন ফকু, সাহেবগঞ্জ ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল, কাটাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিক, সাপমারা ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন, আইয়ুব হোসেন, শাহ আলম, সাবেক সদস্য শহিদুল ইসলাম, ইক্ষু খামারের ম্যানেজার আব্দুল মজিদ, চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মতিনসহ ৩৩ জন এবং অজ্ঞাত আরও পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ জনকে আসামি করে এ অভিযোগটি দায়ের করা হয়। অভিযোগে সাঁওতালদের অবৈধভাবে উচ্ছেদ, অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, হত্যা এবং ভূমি উদ্ধারের নামে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, আমরাও পারি, এএলআরডি, নিজেরা করি, ব্লাস্ট ও লিড নামে মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগিতায় অভিযোগটি থানায় দায়ের করা হয়। গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার তা আমলে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সাঁওতাল হত্যার নিন্দা ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি ॥ গাইবান্ধা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত উদীচীর দ্বাদশ জেলা সম্মেলন এবং স্থানীয় শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত পূজা উদযাপন পরিষদ গাইবান্ধা সদর উপজেলা সম্মেলনে বক্তারা গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত তিন সাঁওতাল হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। অবিলম্বে এ হত্যাকা-ের বিচার বিভাগীয় তদন্তও দাবি করা হয়।
দ্বিতীয় দিনেও ধান নিয়েছে সাঁওতালরা ॥ ধান কাটার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সাঁওতালদের ৫৮ বস্তা ধান বুঝিয়ে দিয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। খামারের জমি থেকে কাটা ৫৮ বস্তা ধান সাঁওতাল নেতা আনসেল হেমব্রমের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। দু’দিনে কাটা মোট ৮৪ বস্তা ধান বুঝে পেল সাঁওতালরা।
রংপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আউয়াল জানান, প্রতিদিন ধান কাটার পর বস্তায় করে তালিকা অনুযায়ী সাঁওতালদের কাছে তা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ৫৮ বস্তা ধান সাঁওতাল নেতা আনসেল হেমব্রমকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তিনি আরও জানান, বাকি জমির ধান কাটতে কয়েক দিন সময় লাগবে। সাঁওতালদের রোপণ করা ধান পর্যায়ক্রমে কেটে তালিকা অনুযায়ী তাদের দেয়া হবে।