ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টিকফা বৈঠক দু’মাস পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে

টিপিপি চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে যাওয়ার ঘোষণায় গার্মেন্টস খাত চাপমুক্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

টিপিপি চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে যাওয়ার ঘোষণায় গার্মেন্টস খাত চাপমুক্ত

এম শাহজাহান ॥ টিপিপি চুক্তি থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নেয়া হবে- ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ঘোষণায় চাপমুক্ত হয়েছে দেশের গার্মেন্টস খাত। আপাতত স্বস্তি বিরাজ করছে প্রধান রফতানিমুখী এ শিল্পে। একই সঙ্গে টিকফা ফোরামের বৈঠক দু’মাস পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে করার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বাণিজ্য দফতর ইউএসটিআর থেকে বলা হয়েছে, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর টিকফা ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ইউএসটিআর থেকে নতুন প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবেন। তারাই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন। ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে জিএসপি পুনর্বহাল করার বিষয়ে নতুন করে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া সব শর্ত পূরণ হওয়ায় আগামী বছরের মধ্যে জিএসপি পুনর্বহাল হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা প্রশাসনের নেতৃত্বে করা ১২ দেশের মধ্যে টিপিপি চুক্তি পোশাক খাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। শুধু তাই নয়, টিপিপি বাতিল হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো তৈরি পোশাকের বড় বাজারে ভিয়েতনামের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে না বাংলাদেশকে। গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী এখন ভিয়েতনাম। টিপিপি (ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ) চুক্তির ফলে দেশাটি বিনা শুল্কে পোশাক রফতানির সুযোগ পেলেও বাংলাদেশকে ১৬ শতাংশ শুল্ক গুনতে হচ্ছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকায় রফতানি সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় ভবিষ্যতে টিপিপি চুক্তি কার্যকর না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জাপানসহ আরও কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলে টিপিপি চুক্তির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশের মধ্যে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি চুক্তি করা হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনাম নিয়ে নতুন এ অর্থনৈতিক জোট গঠন করা হয়েছে। এতদিন ডেইরি পণ্য ও ওষুধশিল্প খাতের সুরক্ষা নিয়ে ১২টি দেশের মতপার্থক্য থাকলেও চুক্তির মাধ্যমে অবশেষে তা দূর হয়েছে। এ চুক্তির ফলে দেশগুলো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনা শুল্ক সুবিধা পাবে। এ দেশগুলো নিয়ে সৃষ্ট মুক্তবাজারের আকার হবে ৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমান বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ। এছাড়া সম্প্রতি ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এ জোটে অন্তর্ভুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, টিপিপি নিয়ে আমরা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছি। বাংলাদেশের রফতানি খাতের যে সক্ষমতা তাতে টিপিপি থাকা না থাকা নিয়ে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই। বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও আমাদের ভাল যাবে। তিনি বলেন, টিকফা ফোরামের বৈঠক পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বৈঠক করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আগামী বৈঠকে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা যোগ দেবেন। জানা গেছে, তৈরি পোশাকের ওভেনের (শার্ট, প্যান্ট) মোট রফতানি আয়ের ৩০ শতাংশের বেশি আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। টিপিপির ফলে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রসহ জোটভুক্ত অন্যান্য বাজারেও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। অথচ বিদ্যমান ১৬ শতাংশ শুল্ক দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করতে হবে বাংলাদেশকে। বর্তমানে বাংলাদেশী পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক আদায় করা হয় গড়ে ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ হারে। ভিয়েতনামকে দিতে হয় ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে ভিয়েতনামের চেয়ে তিন ধাপ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে টিপিপি বাতিল হলে বাংলাদেশের রফতানি সক্ষমতা বাড়ার নতুন সুযোগ তৈরি হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, টিপিপি নিয়ে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা চিন্তিত ছিলেন। প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় ভিয়েতনাম থেকে পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ঘোষণায় আশার আলো দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাম্প বড় ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। তাই তার কাছ থেকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী। বিশেষ করে স্থগিত হওয়া জিএসপি পুনর্বহাল হওয়া জরুরী হয়ে পড়ছে। টিকফা বৈঠকে নতুন করে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। এদিকে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীনকে কোণঠাসা করতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আলোচনার পর গত বছর টিপিপি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির আওতায় দেশগুলো নিজেদের মধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা বা কম শুল্কে পণ্য রফতানির সুযোগ পাবে। তবে চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এখনও অনুসমর্থন পায়নি। চুক্তিটি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ জাপান ও কানাডায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় পোশাক রফতানির সুযোগ পাবে ভিয়েতনাম। টিপিপি স্বাক্ষরের পর ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শিল্প মালিকরা ভিয়েতনামে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও ভিয়েতনামের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
×