ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সেনা মোতায়েনের পরিস্থিতি হয়নি ॥ ইসি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

সেনা মোতায়েনের পরিস্থিতি হয়নি ॥ ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দাবি জানালেও সেনা মোতায়েনের চিন্তাভাবনা করছে না নির্বাচন কমিশন। কমিশন মনে করছে নারায়ণগঞ্জে বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। এ অবস্থায় নিয়মিত অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। প্রয়োজনে নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোন সম্ভাবনা দেখছেন না। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে ভোটের আগে-পরে চারদিনের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রাখা হতে পারে। প্রয়োজনে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হতে পারে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা ভাবছে না ইসি। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণা থেকে এখন পর্যন্ত কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পর্যন্ত ওঠেনি। বৃহস্পতিবার সুষ্ঠু পরিবেশেই মনোনয়নপত্র জমাদানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল থেকে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হচ্ছে। ৪ ডিসেম্বর প্রত্যাহার শেষে শুরু হবে নির্বাচনী প্রচার। নির্বাচনে বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে। বিকল্প কিছুর চিন্তভাবনা করতে হবে না। ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটিসহ সারাদেশে জেলা পরিষদ নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচনী পরিবেশও বেশ ভাল। সেনাবাহিনী দেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। ইসি সচিব বলেন, এ পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জে সেনা মোতায়েনের আপাতত কোন ভাবনা নেই। সামনে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক রয়েছে। তাতে সব সংস্থা ও নির্বাচনী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা হবে। তখন এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। পরিস্থিতি এমন নেই যে সেনা মোতায়েন করতে হবে। গত ১৪ নবেম্বর এ সিটি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। সে সময় তিনি সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সবার সঙ্গে বৈঠকের পরেই কেবল এলাকার ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি জানা যাবে। তার আগে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে খোঁজখবরের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, এ নির্বাচন সামনে রেখে পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখতে যখন যেখানে যে ব্যবস্থা দরকার সে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নজরদারি বাড়ানো হবে এবং টাইম টু টাইম অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২০১১ সালের নির্বাচনেও নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। ওই নির্বাচনে সেই সময়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদা নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোন সাড়া প্রদান করেনি। সে সময়েও সেনাবাহিনী ছাড়াই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্ঘলা পরিস্থিতি যতই জটিল হোক না কেন সেনাবাহিনী মোতায়েনের মতো সিদ্ধান্ত ইসি কখনও নেবে না। বৃহস্পতিবার শেষদিনে এ সিটির সদ্য সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভী ও বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নিজ নিজ দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নির্বাচনও হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। যদিও বিএনপি প্রথম থেকেই এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে আসছে। শুধু সিটি করর্পোরেশন নির্বাচন নয় গত ইউপি নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচনসহ আগের উপজেলা এবং ঢাকা সিটি নির্বাচনেও বিএনপির পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করা হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু ইসি বিএনপির কথায় কান দেয়নি কখনও। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবশ্যই সেনা মোতায়েন চাই। সেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং তাদের স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করা প্রয়োজন। কারণ, এমনিতেই নারায়ণগঞ্জ সিটির গডফাদারদের শহর হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ যদি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ পায় তাহলে তাদের পছন্দমতো লোককে তারা ভোট দেবে; গডফাদারকে ভোট দেবে না। সুষ্ঠু, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জোর দাবি জানান তিনি। বৃহস্পতিবার নরায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান তার মনোণয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অস্ত্র উদ্ধারের দাবিও জানান। পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন। এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভী মনোনয়নপত্র জমা শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জে জনগণই আমার সেনাবাহিনী। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দরকার নেই। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনই সকল পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, আমি কোন আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি এবং করব না। গতবারও আমি কোন ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি। এবারও করব না। ইসি সূত্রে জানা গেছে, এ নির্বাচনে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই সম্পন্ন হলেই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হবে। এছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আর কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নারায়গঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হচ্ছে এটি। ইতোমধ্যে নির্বাচনে সম্ভাব্য সব প্রার্থীই তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল সম্পন্ন করেছেন। আগামীকাল শনিবার থেকে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। ৪ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া যাদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়বে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবেন। এর আগে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটিতে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সেলিনা হায়াত আীভি মেয়র নির্বাচিত হন। এবার তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
×