ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ামত হোসেন

চক্ষু মেলিয়া

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

চক্ষু মেলিয়া

বাতিল টাকা গছাতে গিয়ে... ক’দিন আগে ভারত সরকার সে দেশের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করেছে। বোঝাই যায়, তাদের এই কাজ করতে হয়েছে তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক কারণে। তবে থাকতে পারে কোন রাজনৈতিক কারণও। আর সেটা যদি থাকেও তা তাদের ব্যাপার। মিডিয়ার খবরে এই নোট বাতিলের বিষয়ে কিছু কিছু আলোচনা- সমালোচনা সে দেশের কোন কোন মহল থেকে উঠেছে বলে জানা যায়, সেটাও তাদের ঘরোয়া ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। তবে এই বাতিল নোটের কারণে সে দেশের এক বয়স্ক ব্যক্তিকে যে কয়েদ খাটতে হয়েছে সেটা নিঃসন্দেহে বেশ কৌতুকপ্রদ খবর। কলকাতার এক ভদ্রলোক। বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। স্ত্রীর সঙ্গে চলছে খোরপোষের মামলা। ব্যবস্থা অনুযায়ী স্ত্রীকে টাকা দিতে হয়। সে দিন সেই টাকাই পাঠিয়ে ছিলেন খোরপোষ হিসেবে। পাঠিয়েছিলেন বাতিল হওয়া টাকা। স্ত্রী সে টাকা নেবেন না। ফলে অভিযোগ। পারিবারিক আদালতের নির্দেশে স্বামী বেচারির ১ মাসের কারাদ-! বাতিল করা নোট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হয়ত সে দেশের অনেকে। তবে কলকাতার এই স্বামীপ্রবর বাতিল নোট স্ত্রীকে গছাতে গিয়ে এমন বিড়ম্বনায় পড়বেন তা হয়ত বুঝতে পারেননি। এখন আফসোস করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। টাকাগুলো বদলে দিতে পারলে ল্যাঠা চুকে যেত! সাপ চুরি নিউইয়র্কের একটি মার্কেট। বন্যপ্রাণী বিক্রি হয় এমন এক দোকানে একটা লোক ঢুকল। ঢুকে লোকটি সাধারণ সব ক্রেতার মতো এটা ওটা দেখতে শুরু করছে। দোকানে যেসব প্রাণী বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে সেগুলোর দিকে এক নজর দেখে নিয়ে লোকটি দেখতে লাগল দোকানের লোকজন কে কোথায়। এখানে দোকানের লোকজন থাকে মাত্র দু’একজন, বেশি লোক থাকে না অনেক দোকানেই। এমন কিছু কিছু জিনিস ওসব দেশে বিক্রি হয়, যেগুলো বিক্রির দোকানে পারতপক্ষে কোন লোকই থাকে না। এমন ধরনের দোকান ও বিক্রয় কেন্দ্র আছে যেগুলোতে লোকজন এসে জিনিসপত্র নিয়ে যায় এবং পয়সা রাখার স্থানে দাম রেখে যায়। যাই হোক নিউইয়র্কের ওই দোকানটিতে সেই লোকটি এদিক-ওদিক তাকিয়ে ঝট করে একটি বাক্সের ডালা খুলে ভেতরে থাকা একটি সাপকে তুলে নিয়ে চট করে ভরে ফেলল তার জ্যাকেটের পকেটে। ব্যস, তারপর দোকান থেকে বেরিয়ে একেবারে হাওয়া। দোকানের মালিক টের পেলেন অনেক পরে। প্রথমে এটা-ওটা দেখতে গিয়ে দেখা যায়, সাপের বাক্সটি খালি। কে যেন সেটিকে নিয়ে গেছে। সেখানে ছিল সিসি ক্যামেরা। তাতে পরিষ্কার দেখা গেল, জ্যাকেট পরিহিত এক ব্যক্তি সাপের বাক্সের ডালা খুলে সাপটিকে ঢোকাচ্ছে তার জ্যাকেটের ভেতরের পকেটে। পরিষ্কার হয়ে গেল সবকিছু। এ-ও জানা গেছে, পুলিশ চোরটিকে পাকড়াও করার জন্য সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে। পরের দ্রব্য না বলিয়া লইলে চুরি করা হয়। এই চুরি জগতে কোথায় না হয়! কত জনই না করে! কত কিছুই না চুরি হয়। মার্কিন মুল্লুকে দেখা গেল সেখানে সাপও চুরি হয়েছে। উল্লিখিত এই চুরির খবর প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। তারই মাধ্যমে জানা গেছে। সাপটি ছিল দুর্লভ জাতের, তাই মূল্যবান। ওটিকে অর্ধ সহস্র ডলার মূল্যে কেনা হয়েছিল আফ্রিকার একটি দেশ থেকে। সাপটির মালিকের যে আপসোসের সীমা থাকবে না তা তো বলাইবাহুল্য। এককালে জগতজুড়ে ছিল চুরির বিস্তার। এখনও চুরিমুক্ত হয়েছে এমন কোন দেশ আছে কিনা সন্দেহ। এক্ষেত্রে অবশ্য একটি তথ্যের উল্লেখ করা যায়। এক সময় বলা হতো হাওয়াই দ্বীপে কোন সাপ নেই। কথাটা কতদূর সঠিক, জানা যায়নি। জানা যায়নি এখন সেখানে সাপের অনুপ্রবেশ ঘটছে কিনা! যদি দ্বীপটি সর্পমুক্ত হয় তাহলে যে দ্বীপটি স্বাভাবিকভাবেই হবে সর্পচোরমুক্ত। লোকজন সব সময় থাকবে সর্প ভীতিমুক্ত। চুরির অবশ্য রকমফের রয়েছে। এদেশে যেমন ছিলÑ সিঁদেল চুরি, ছিঁচকে চুরি ইত্যাদি। এখন একালে এসব বিরল হয়ে উঠেছে। এত চুরির মধ্যে আরও রয়েছে পুকুর চুরি। পরের জমি-জায়গা, পুকুর এমনকি খাল-বিল নদীর জায়গাও দখল করা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে লুকোচুরি হয়েছে। চুরির ছোট ভাই ছিনতাই, বড় ভাই ডাকাতি। ছিনতাই এখনও বিলুপ্ত হয়নি জগত থেকে, ডাকাতি এককালে ব্যাপক ছিল, এখন এসব বিলুপ্তির দিকে। এককালে ডাকাতরা চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দিত অমুক তারিখে ডাকাতি করতে আসব। এক সময় ব্যবহৃত হতো রণপা। দুই হাতে দুটো বাঁশ নিয়ে বাঁশের গায়ের কঞ্চিতে পা রেখে লম্বা লম্বা বকের মতো পা ফেলে কোন গ্রামে ডাকাতি করে ডাকাতরা পালত। পাঁচ-দশ মাইল রাস্তা লম্বা বাঁশের পা ফেলে পালাত কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। চুরি-ডাকাতির ইতিহাস বড়ই প্রাচীন। যে ইতিহাস তাম্র যুগ-প্রস্তর যুগকেও হয়ত ছাড়িয়ে যাবে। যাই হোক, কবে যে এসব বিদায় নেবে চৌর্যবৃত্তি, বিদায় নেবে বাংলাভাষার জোচ্চুরি শব্দটা কে জানে! অবশেষে ধরা পড়ল গরুটি! সেদিন একটি গরু হারিয়ে গিয়েছিল। তাই নিয়ে অনেক ঝঞ্জাট পোহাতে হয়েছে বহু মানুষকে। ঘটনাটি ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানকার এক বন্দরে জাহাজে তোলা হচ্ছিল একপাল গরু। লোকজন সেখানে নিজ নিজ কাজ করছে। গরুগুলো উঠছে একের পর এক। এক সময় গোনাগুনতির পর দেখা গেল একটি গরু কম। কি হলো? কোথায় গেল একটা গরু। শুরু হলো খোঁজা। ওদিকে হয়েছে কি, জাহাজে গরুর পালের সঙ্গে উঠতে গিয়ে একটা ত্যাঁদোড় গরু লাফ দিল পানিতে। তার পর লাপাত্তা! এক পর্যায়ে দেখা গেল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে গরুটি। একটি বিশেষ যন্ত্র দিয়ে তাকে টেনে তোলা হলো কূলে। তারপর সেখান থেকেই সে লাপাত্তা। শুরু হলো ফের খোঁজা। যাকে বলে সত্যিকার গরু খোঁজা! কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না গরুটাকে। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর খোঁজ পাওয়া গেল একটা গরু দেখা গিয়েছে উপকূলের কাছে একটি পার্কে। সেখানে মনের আনন্দে চড়ে বেরাচ্ছে সে। ধরার চেষ্টা চলল কিন্তু সে, সেখান থেকে আবার লাপাত্তা। এক বার এখানে, আবার ওখানে যেন চষে বেড়াচ্ছে পুরো এলাকা। দীর্ঘ খোঁজখুঁজির পর পার্থ এলাকার একটি রেল স্টেশনে ধরা পড়ল গরুটা। বাছা ধন আর যাবে কোথায়! ধরা পড়ল অবশেষে। সাধারণ কিছু হারালে লোকের অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু গরু হারালে কি যে কষ্ট হয়, মনের অবস্থা কেমন হয় গরু যাদের হারায়নি তার তা বুঝবেন না। এ ব্যাপারে শুধু এটুকুই বলা যায় হারানো গরুটিকে পেয়ে গরুর মালিক যে সুখ পেয়েছেন তার কথা তাঁর সারা জীবন হয়ত মনে থাকবে।
×