ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ৩ উইকেটে জয়ী রাজশাহী, টানা দ্বিতীয় হার সাকিবের দলের

আবার ঢাকাকে হারিয়ে চমক রাজশাহীর

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২২ নভেম্বর ২০১৬

আবার ঢাকাকে হারিয়ে চমক রাজশাহীর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ম্যাচের শেষদিকে টানটান উত্তেজনা। চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) এত রান তাড়া করে জেতেনি কোন দল। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজনীয় ১২ রান তুলতে গিয়ে ২ উইকেট হারিয়েছিল রাজশাহী কিংস। এরপরও ৩ উইকেটে ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়ে জয়ের ধারায় ফিরেছে রাজশাহী। টানা তিন ম্যাচ হারের পর ড্যারেন সামির দল জয় তুলে নিল। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সোমবার দিনের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ১৮২ রানের বড় সংগ্রহ গড়েছিল ঢাকা। ১ বল হাতে রেখেই (১৯.৫ ওভার) ৭ উইকেটে হারিয়ে ১৮৪ রান তুলে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে দ্বিতীয় জয় ছিনিয়ে নেয় রাজশাহী। ঢাকা পর্বটা ভাল গেলেও টানা দুই ম্যাচ হেরে চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করল সাকিব আল হাসানের ঢাকা। ৭ ম্যাচে ৩ হারে ৮ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত দুই নম্বরে আছে তারা। আর রাজশাহী ৬ ম্যাচে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ৬ নম্বরে। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিরুদ্ধেই নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে এবার বিপিএলে একমাত্র জয় পেয়েছিল (৬ উইকেটে) রাজশাহী কিংস। তবে এরপর হারের হ্যাটট্রিক পূরণ হয়েছিল তাদের। এমন অবস্থায় নিজেদের চট্টগ্রাম পর্বের শেষ ম্যাচে সোমবার মুখোমুখি হয় শক্তিশালী ঢাকার। আগের ম্যাচে খুলনা টাইটান্সের কাছে ৯ রানে হেরে প্রথমবার দুই নম্বরে নেমে যায় তারা। তাই ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ঢাকা টস জেতার পরই ব্যাট হাতে নেয়। কারণ দলের ব্যাটসম্যানরা আছেন দারুণ ফর্মে। সেটা শুরুতেই বোঝা গেল। উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৫১ বলে ৭১ রান যোগ করলেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মেহেদি মারুফ ও শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা। চলতি বিপিএলে আগের ৬ ম্যাচে তেমন আহামরি কোন ইনিংস খেলতে পারেননি সাঙ্গাকারা। তবে এদিন জ্বলে উঠলেন। মারুফ চিরাচরিত আক্রমণাত্মক মেজাজে খেললেও সাঙ্গাকারা কিছুটা দেখেশুনেই খেলছিলেন। মারুফ ২৫ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ রান করার পর আবুল হাসানের বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলে জুটি ভাঙ্গে। কিন্তু উড়ন্ত শুরুর ফলটা পেয়েছে তারা। অবশ্য তিন নম্বরে নেমে এদিন রানের মধ্যে থাকা তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন ১৩ রান করেই ফিরে গেছেন। তবে সাঙ্গাকারাকে আটকানো যায়নি, তিনি চলতি আসরে নিজের প্রথম অর্ধশতক পেয়ে যান ৩৮ বলে। ফরহাদ রেজা ১৫তম ওভারের প্রথম বলে মোসাদ্দেককে ফেরানোর পর চতুর্থ বলে সাঙ্গাকারাকেও ফেরান। সাঙ্গাকারা ৪৬ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৬ রান করেছিলেন। এরপরও বড় সংগ্রহ পেতে সমস্যা হয়নি ঢাকার। সিকুজে প্রসন্ন ১৬ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৪ রানের একটি হার না মানা টর্নেডো ইনিংস খেলেন, শেষ পর্যন্ত তাকে সঙ্গ দেন অধিনায়ক সাকিব ১২ বলে ৩ চারে ১৮ রান করে। পঞ্চম উইকেটে দু’জন যোগ করেন ৪ ওভারে ৪৪ রান। ৪ উইকেটে ১৮২ রানের বড় সংগ্রহ পায় ঢাকা। রাজশাহীর শুধু ফরহাদ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। জবাব দিতে নেমে দুই পেসার মোহাম্মদ শহীদ ও ডোয়াইন ব্রাভোর জোড়া আঘাতে শুরুতেই হোঁচট খায় রাজশাহী। দলীয় ৩১ রানেই সাজঘরে ফেরেন জুনায়েদ সিদ্দিকী (৪) ও অন্যতম নির্ভরতা সাব্বির রহমান (৭)। শুরুর এই ধাক্কা অবশ্য সামলে দলকে জয়ের পথে রাখেন মুমিনুল হক ও ইংলিশ অলরাউন্ডার সামিত প্যাটেল। তৃতীয় উইকেটে ১০০ রানের জুটি গড়েন তারা মাত্র ১০ ওভারে। টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক পেয়ে যান দুর্দান্ত খেলা মুমিনুল। তিনি ৪২ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৫৬ রান করে শহীদের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। কিন্তু সামিতকে থামাতে পারেননি কোন বোলার, তার ব্যাটিং তা-বে তছনছ হয়ে যায় ঢাকার বোলিং বিভাগ। সবচেয়ে বড় ঝড়টা গেছে ১২তম ওভারে বল করতে আসা ম্যাট কোলসের ওপর। ওই ওভারে একটি ছক্কা ও তিনটি চারে ২০ রান তুলে নেন সামিত, মাত্র ২৬ বলেই অর্ধশতক পেয়ে যান। তিনি যখন থামলেন তখন জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে রাজশাহী। মাত্র ৩৯ বলে ৫ চার ও ৬ ছক্কায় ৭৫ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন তিনি সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে। তখন জয় থেকে ২৫ বলে ২৯ রান দূরে রাজশাহী। তবে দ্রুতই উমর আকমল (১২) ও ড্যারেন সামি (৯) দু’জনকে ফিরিয়ে দেন ব্রাভো, জিতে প্রতিশোধ তুলে নেয়ার আশায় জেগে ওঠে ঢাকা। শেষ দুই ওভারে সমীকরণটা হয়ে যায় শ্বাসরুদ্ধকর- ১২ বলে ১২ রান, রাজশাহীর হাতে উইকেট তখনও ৫টি। কিন্তু ১৯তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়েছিলেন ব্রাভো। সে ওভারে ব্রাভোর এবং ২০তম ওভারের প্রথম বলে কোলসের আঘাতে পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে যায় রাজশাহী। ৫ বলে ৯ রান প্রয়োজন তখনও। ওভারের তৃতীয় বলে ফরহাদ ও পঞ্চম বলে মেহেদি হাসান মিরাজ চার হাঁকিয়ে জয় ছিনিয়ে আনেন দলের পক্ষে। দুইবারের মোকাবেলায় দু’বারই রাজশাহীর কাছে হারল ঢাকা। ১ বল হাতে রেখেই ৩ উইকেটের জয় পায় তারা ৭ উইকেটে ১৮৪ রান তুলে। চলতি আসরের এটিই সর্বাধিক রান তাড়া করে জেতা। ব্রাভো ৩৫ রানে ৩টি ও শহীদ ২৯ রানে ২টি উইকেট নেন।
×