ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

৭ নবেম্বর কি এবং কেন?

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

৭ নবেম্বর কি এবং কেন?

১৯৭৫-এর ৭ নবেম্বর নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই এখনও। যে যেভাবে পারছেন চিত্রিত করছেন। সেই রক্তাক্ত দিনগুলোতে যারা জড়িত ছিলেন, পক্ষে-বিপক্ষে, তারা নিজেদের সুবিধামতো শিরোনাম দিয়ে পালন করছেন। সচেতন নাগরিকরা বিশ্বাস করেন ৭ নবেম্বর অনেক সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিককে হত্যা করা হয়েছে। তাই দিনটি ‘সৈনিক হত্যা দিবস’ এবং সেইসব সৈনিক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। অর্থাৎ বেদনা ও ক্ষোভের দিন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ মনে করে ‘বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার অভ্যুত্থান দিবস’, যা ব্যর্থ হয়েছিল এবং সেই জাসদও এখন স্বনামে-ভিন্ননামে বহুধা বিভক্ত। বিএনপি নামক যে দল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যার পর পাকিস্তানপন্থীদের গর্ত থেকে তুলে এনে আত্মপ্রকাশ করেছিল তারা ৭ নবেম্বরকে পালন করে ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান’ দিবস হিসেবে। যদিও সিপাই বলতে ছিলেন কিছু বিভ্রান্ত সেনা সদস্য আর জনতা বলতে ছিল স্বাধীনতার পর গর্তে লুকিয়ে থাকা কিছু পাকিস্তানপন্থী। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর, বিশেষ করে ৪ জাতীয় নেতা হত্যার পর একে একে বেরিয়ে আসছিল। শুরুতে রাজপথে নামছিল না। ভয় ছিল, মুক্তিযুদ্ধের শক্তি বুঝি রাস্তায় নামল! বরং তারা ছিল স্তম্ভিত হতভম্ব। কিন্তু যখন দেখল জিয়া নামের এক মিলিটারি জেনারেল রাস্তায় নেমে গেছে তখন তারাও নামতে শুরু করে এবং নেমেই বাংলাদেশবিরোধী সেøাগান দিতে শুরু করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় মিরপুর-মোহাম্মদপুরে আটকাপড়া পাকিস্তানী নাগরিকরা। তারা একটি অবলম্বন খুঁজে পায়। ॥ দুই ॥ মূলত বিএনপির ‘সিপাহী-জনতা অভ্যুত্থান’ এই নাম দেয়ার পেছনে বাংলাদেশবিরোধী একটি রাজনীতি কাজ করেছে। সংগ্রামী বাংলায় তাদের তো কোন শেকড় নেই, অবদান নেই। যখন দেখল স্বাধীনতার এক ভুয়া ঘোষক রাজপথে নেমেছে তখন তাদের মধ্যে আশা জাগে। দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী মুসলিম লীগ, জামায়াত, নেজামে ইসলাম পার্টিঅলারা জিয়ার পেছনে লাইন দেয়। সবার ওপরে লাইন দেয় ভাসানীপন্থী মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারীরা। ভাসানী ন্যাপের মশিউর রহমানপন্থী অংশটি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে। অন্যদিকে রাশেদ খান মেনন, কাজী জাফর, মান্নান ভুঁইয়ারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন এবং যুদ্ধ করেছেন। ॥ তিন ॥ সচেতন নাগরিক তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনতা ৭ নবেম্বরকে ‘সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করার পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে। কেননা ওইদিন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বেশ কয়েকজন সেনা নায়কসহ অনেককে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে প্রথমেই যে দুটি নাম সামনে আসে তারা হলেন মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ এবং কর্নেল আবু তাহের। তারা দু’জনই ছিলেন দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা এবং সেক্টর কমা-ার। খালেদ মোশারফের সঙ্গে দু’জন সাব-সেক্টর কমা-ার কর্নেল হুদা ও কর্নেল হায়দারকেও দুর্বৃত্তরা হত্যা করল। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তারা সর্বোচ্চ গোলন্ট্রি এওয়ার্ডও পেয়েছিলেন। অবশ্য কর্নেল তাহেরকে হত্যা করা হয় আরও পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক গোপন বিচারে। তাহের মুক্তিযুদ্ধে একটি পা হারিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতা হত্যার মাঝের সময়টা ছিল প্যালেস ক্লিক বা প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কাল। ক্যু-পাল্টা ক্যু চলছিল একের পর এক। বঙ্গবন্ধুর খুনীরা খন্দকার মোশতাককে কেন্দ্র করে বঙ্গভবনে অবস্থান করছিল। এই খুনীরা মিড লেভেলের অফিসার। তারা এমন বাড়াবাড়ি শুরু করে যে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক এবং সামরিক বাহিনীর চেইন সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে। তারা প্রচার করে কর্নেল তাহেরের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার বিবৃতি। হেডিংটা দেখেই ফারুক ও আমি বেরিয়ে পড়লাম। সেখান থেকে অফিসে গিয়ে কিছু সময় বসে সোজা বাসায় চলে গেলাম। পরদিন জানা গেল খালেদ মোশারফ, হুদা, হায়দাররা কেউ নেই। ক্ষমতায় এলো জিয়াউর রহমান আর পুরো প্রক্রিয়ায় জেনারেল এম এ জি ওসমানী পুরো সময় বঙ্গবন্ধু, ৪ নেতার খুনী এবং তাদের নেপথ্য নায়ক জিয়াউরের পক্ষে কাজ করেন। ॥ চার ॥ ৭ নবেম্বরের ভোরের আগ পর্যন্ত খালেদ মোশারফ ক্ষমতায় ছিলেন। জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বন্দীদশা থেকে উদ্ধার করে কর্নেল তাহের এবং তার শক্তির উৎস জাসদ। এই জাসদ স্বাধীনতার পরই বলেছিল বাংলাদেশে কনভেনশনাল আর্মির প্রয়োজন নেই। হতে হবে পিপলস আর্মি বা জনগণের সেনাবাহিনী। তখন বঙ্গভবনে বসে খুনীরা মোশতাককে দিয়ে যা কিছু করাচ্ছিল। বীর উত্তম মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশারফ এটি মেনে নিতে পারছিলেন না। তিন নবেম্বর একটি সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে নিলেন এবং খন্দকার মোশতাককে তাড়িয়ে দিয়ে তখনকার প্রধান বিচারপতি সায়েমকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেন। নিজে হন চীফ অব আর্মি স্টাফ। তিনি মোশতাকের কাছে আত্মসমর্পণকারী পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেন এবং ৬ মাস পর সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তিনি চেয়েছিলেন একদিকে ভেঙ্গে পড়া আর্মির চেইন অব কমান্ড পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সঙ্গে সঙ্গে সিভিল প্রশাসনও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সফল হওয়ার আগেই তাকে হত্যা করা হয়। ॥ পাঁচ ॥ খালেদ মোশারফ যেদিন ক্যু করলেন তার আগ মুহূর্তে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (৩ নবেম্বর) জাতীয় চার নেতাকে আটকাবস্থায় নির্মমভাবে হত্যা করে। খুনীরা গুলি করেও স্বস্তি পায়নি। তাজউদ্দীন সাহেব পানি পানি করছিলেন। এবার তারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। নৃশংসতার এমন উদাহরণ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়ি ছাড়া আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। একটা বিষয় বলে রাখা দরকার, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এবার ভাইস মার্শাল তোয়াব নামে এক বিমান বাহিনীর অফিসার খন্দকার মোশতাকের খুব কাছে চলে আসে। এক পর্যায়ে এই ভদ্রলোক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলন ও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে। নাইজিরিয়া-পাকিস্তানসহ বেশ কিছু দেশের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগ দেন এবং ওয়াজ করেন। তাদের পুরো বক্তব্য ছিল বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের আদলে-আদর্শে গড়ে তোলা। এখানে একটি মজার ঘটনা আছে। এক ভদ্রলোক রুমাল দিয়ে কান ঢেকে ওয়াজ করছিল। জানা গেল মুক্তিযুদ্ধের সময় ভদ্রলোক রাজাকার ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ধরে এনে কান কেটে দিয়েছিল, তাই রুমাল দিয়ে কান ঢেকে রাখে। সাংবাদিকদের কেউ কেউ এই সিক্রেট কাগজে ছেপে দেয়। দেশময় ছড়িয়ে পড়ে এটা রাজাকারদের সমাবেশ, পাকিস্তানের পক্ষের সমাবেশ। তখন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি পিজি, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেড থেকে ‘খামুশ’ বলে এক হুংকার ছাড়লেন। প্রচার আছে সমাবেশে আগত পাকিপন্থী এবং রাজাকাররা এই সংবাদ শুনে সম্মেলন ছেড়ে পালিয়ে যায়। ॥ ছয় ॥ ৩ থেকে ৭ নবেম্বর বঙ্গভবনে চলছিল ক্ষমতার পালাবদলের খেলা। রক্তপাত। খন্দকার মোশতাককে তাড়িয়ে দেয়া হয়। ৬ নবেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) বাংলাদেশ ও ভারতের রাজপুতের মধ্যে ফুটবল খেলা। চারদিকে থমথমে ভাব, সুনশান নীরবতা। আমি ও সহকর্মী রিপোর্টার জাহিদুজ্জামান ফারুক প্রেসক্লাব থেকে বেরিয়ে স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে ইত্তেফাকে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম খেলা দেখি। ভিআইপি গেলারিতে বসলাম, দর্শক দু’চারজন। হঠাৎ দুটি ছেলে বিদ্যুত বেগে এসে ২টি লিফলেট হাতে দিল। বুঝলাম অশনিসঙ্কেত। দুই বন্ধু ইত্তেফাকে গিয়ে কিছু সময় কাটিয়ে বাসায় চলে এলাম। ॥ সাত ॥ খালেদ মোশারফ ক্ষমতা হাতে নেবার পর তার মা ও ভাই রাশেদ মোশারফের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করা হয়। ৪/৫ শত লোকের এই মিছিলে বেশিরভাগই ছিল সিপিবি এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হয়। একজন সাংবাদিক, তিনি এখন বেঁচে নেই, তাই নাম নিলাম না, তারপরও বলব এই ভদ্রলোক মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার কারণে ১৬ ডিসেম্বরের পর গ্রেফতার হন দালাল আইনে। তখনকার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১১ মাস পর মুক্তি পান। জনশ্রুতি আছে তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর পাঠান খালেদ মোশারফের ক্যু এবং এই মিছিল দুটির পেছনে রয়েছে ভারত সরকার। এমনও প্রচার করার চেষ্টা হয়েছে ‘দখল’ করতে আসছে। খালেদ মোশারফের হত্যা এবং জিয়ার ক্ষমতা দখলের পেছনে ভারত সরকারের ইন্ধন এবং সহযোগিতা রয়েছে বলে চরম মিথ্যাচার ও গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল এবং তা কাজ করেছিল। একজন দেশপ্রেমিক জেনারেল একটি গুজবকে কেন্দ্র করে নিহত হলেন এবং আরেক জেনারেল সম্পূর্ণ পাকিস্তানপন্থী হয়ে স্রেফ গুজবের পথ ধরে ক্ষমতায় এলেন। অথচ আমি জানি খালেদ, হুদা, হায়দার ছিলেন সাচ্চা দেশপ্রেমিক। একটা কথা বলা দরকার। সেই পাকিস্তান আমল থেকে সিপিবি বা ছাত্র ইউনিয়ন পায়জামা-পাঞ্জাবি, কাঁধে ঝোলা নিয়ে রাজনীতি করেছে। কখনও স্বাধীনভাবে রাজনীতি করেনি। সিপিবির কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাকে সিআইএর দলিল বলতেও দ্বিধা করেননি, আবার ৬+১১ দফাভিত্তিক ঐতিহাসিক ছাত্র গণঅভ্যুত্থানেও অংশ নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পক্ষে ছিলেন। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরের পর একবার বঙ্গবন্ধুর ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ ছিঁড়ে ফেলেন, আবার বঙ্গবন্ধুর পদতলে আত্মসমর্পণ করেন এবং বঙ্গবন্ধুর ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ ফেরত দেয়ার জন্য ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য আয়োজন করেন। কিন্তু ওই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তারপর যখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলেন তখন সিপিবির নারী থেকে ছাত্র, জননেতা সব জিয়ার সঙ্গে খাল কাটার জন্য কাছামেরে নেমে পড়েছিল। যাদের নেতা কমরেড মণি সিংকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দাদা আমি সমাজতন্ত্রের ট্রেনটা রেললাইনে তুলে দেব, আপনারা ঠেলে মনজিলে-মকসুদে নিয়ে যাবেন।’ বঙ্গবন্ধু ঠিকই রেল তুলে দিয়েছিলেন, তারা রেল ঠেলবেন কি, নিজেরাই ঠেলাঠেলিতে ব্যস্ত। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জাসদকে যতখানি দায়ী করা হয়, তার চেয়ে সিপিবি কম যায় না। অর্থাৎ পরিবেশ সৃষ্টিতে। শেখ ফজলুল হক মণি, শেখ কামাল সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা কারাগারে, কে তাকে চ্যালেঞ্জ করবে। যে কারণে তিনি বাধাহীনভাবে কতগুলো কাজ করেন। ক. বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিদেশী দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পাঠিয়ে দেন। এখানেও তার দুটি লক্ষ্য ছিল- ১. অভ্যুত্থানের সমপর্যায়ের বন্ধুদের রাখতে নেই। ২. জিয়া যে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ফারুকরা দেশে থাকলে ফাঁসি হয়ে যেতে পারেন। খুনী ফারুক বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে (সম্ভবত) ব্যাংককে এক টিভি সাক্ষাতকারে যা বলেছিলেন তা হুবহু তুলে ধরছি: - ও ধস ধ ংবহরড়ৎ ধৎসু ড়ভভরপবৎ, ও পধহ হড়ঃ রহাড়ষাব রহ রঃ ফরৎবপঃষু. ওভ ুড়ঁ ধিহঃ ঃড় ফড় রঃ, মড় ধযবধফ. এর অর্থ কি দাঁড়ায়। বাংলাদেশে থাকবে ‘পিপলস আর্মি’, অর্থাৎ গণসেনাবাহিনী। যতদূর বুঝতে পেরেছি তখন জনগণ ও সেনাবাহিনী হবে একাকার। কর্নেল তাহের তার লোকজনকে নিয়ে জিয়াকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে আনেন। কিন্তু জিয়া সবাইকে ল্যাং মেরে তথাকথিত ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান’-এর সুযোগে প্যালেস ক্লিকে সামনে চলে আসেন। নিজেকে প্রথমে স্বঘোষিত মার্শাল ল’ এ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং পরে প্রেসিডেন্ট সায়েমকে অসুস্থ ঘোষণা করে নিজেই প্রেসিডেন্ট হয়ে সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। কর্নেল খালেদ মোশারফকে তো হত্যাই করা হয়েছে। রয়েছেন আরেক শত্রু কর্নেল তাহের। তাকে তো বাঁচতে দেয়া যায় না। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক গোপন প্রহসনের বিচারে তাকেও ফাঁসি দেয়া হলো। এবার তার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ রইল না। বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতার হত্যা, জিয়ার তথাকথিত ‘সিপাই-জনতার অভ্যুত্থান’-এর চেহারা আরও পরে পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রচলিত কথা হলো, জিয়াউর রহমানের আমলে নাকি ১৯টি ক্যু হয়েছিল এবং সেসবের বেশিরভাগের খেলোয়াড় জিয়া নিজে। কিন্তু এই খেলায় তিনিও কুপোকাত হবেন ভাবেননি- ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে জিয়া প্যালেস ক্লিকের শিকার হন। ঢাকা : ১৬ নবেম্বর ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব নধষরংংযধভরয়@মসধরষ.পড়স
×