ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সব রাজনৈতিক দল এক নারীসহ ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন করবে ;###;রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের ভেতর থেকে বাছাই কমিটি কিছু নাম প্রস্তাব করবে, তাদের ভেতর থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন

ভিত্তি হবে ঐকমত্য ॥ নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে বেগম জিয়ার প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

ভিত্তি হবে ঐকমত্য ॥ নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে বেগম জিয়ার প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এজন্য তিনি সকল রাজনৈতিক দলের বিশেষ করে যারা সংসদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তাদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একজন নারী সদস্যসহ ৫ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি করার কথা বলেন। বাছাই কমিটি রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সৎ, যোগ্য ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করবেন রাষ্ট্রপতির কাছে। বাছাই কমিটির প্রস্তাবিত নামের মধ্য থেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান-২ এ হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি নতুন ইসি গঠনের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এমনকি তিনি নির্বাচন কমিশনকে অধিক শক্তিশালী করার জন্য আরপিও জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ) সংশোধন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নির্বাচনকালনীন দায়িত্ব পালনে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান, ভোটগ্রহণ, ফল প্রকাশ বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন এবং কয়েক বছরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কমিশনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা ও পক্ষপাতহীন আচরণ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে জাতিকে চরম হতাশ ও আস্থাহীন করে তুলেছে। গণতন্ত্রের স্বার্থে এ ধরনের পরিস্থিতি আর চলতে দেয়া যায় না। জনগণ পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন চায়। কমিশনের সক্ষমতা, নিরপেক্ষতা এবং দায়িত্ব পালনের ন্যায়পরায়ণতা দেখতে চায়। তারা চায় অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এমন একটি নির্বাচন যাতে ভোটের মাধ্যমে সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তাদের দেয়া রায় যাতে কেউ কৌশলে বদলে দিতে না পারে। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন পরিচালনায় গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্থায়ী ব্যবস্থা প্রয়োজন। আগামী ফেব্রুয়ােিত বর্তমান বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নিরপেক্ষ, সৎ ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এমন রাজনৈতিক দলের মহাসচিব বা সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন। তবে যেহেতু দেশে প্রধান দুটি রাজনৈতিক জোট বিদ্যমান রয়েছে; এসব জোটের পক্ষ থেকে একজন মূল প্রতিনিধি এবং তাকে সহায়তাকারী আরও দুজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পৃথক আলোচনায়। নির্বাচন কমিশন গঠনে ঐকমত্যের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈক দলের দঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন। সংবাদ সম্মেলনে বাছাই কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে রাজনৈতিক দলের পক্ষ বাছাই কমিটির সদস্য নিয়োগে প্রতিপদের বিপরীতে ২ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করবেন। একই সঙ্গে এসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনার পদের বিপরীতে দুজনের নাম প্রস্তাব করবেন। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলের নিকট থেকে প্রাপ্ত এসব নাম থেকে কমিশন গঠনের জন্য বাছাই কমিটির কাছে প্রেরণ করবেন। বাছাই কমিটির এসব নাম থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশার পদের জন্য দুজন এবং অন্য কমিশনের জন্য ৮টি নাম বাছাই করবেন। এ প্রক্রিয়ায় বাছাই কমিটি প্রথম প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের কমিশনের নিয়োগে বিচার- বিশ্লেষণ করবে। তাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তির নাম সব রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবনায় অভিন্ন রয়েছে তার নাম রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণের জন্য চূড়ান্ত করবেন। তবে এই প্রক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কশিনার পদে অভিন্ন নাম পাওয়া না গেলে বাছাই কমিটির ইসির নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল অথব সংসদের প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বার বার বৈঠক করবেন। এ প্রক্রিয়ায় কোন রাজনৈতিক দল নতুন নাম প্রস্তাব করতে চাইলে বাছাই কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছার স্বার্থে প্রস্তাবিত নতুন নামগুলো গ্রহণ করবেন। এভাবে বাছাই কমিটি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাক্রমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাকি নাম বা নামসমূহ নির্ধারণ করবেন। এবং কমিশনের নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করবেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রস্তাব করেনÑ রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটি কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য বাছাইকৃত ২ জনের মধ্য থেকে ১ জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং বাছাইকৃত ৮ জনের মধ্য হতে ৪ জনকে নির্বাচন কমিশনার পদে চূড়ান্ত করবেন। চূড়ান্ত ব্যক্তিদের সম্মতি গ্রহণ এবং তাদের জীবন-বৃত্তান্ত ও সম্পদের বিবরণী জনসমক্ষে প্রকাশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তাদের নিয়োগ প্রদান করবেন। তবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক চূড়ান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কমিশনে নিয়োগে সম্মত না হলে বা অন্য কোন অসঙ্গতি দেখা দিলে বাছাই কমিটি মনোনীত অবশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্য হতে রাষ্ট্রপতি একই প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রদান করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য বাছাইকৃত ২ জনই অসম্মতি প্রকাশ করলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনোনয়নের জন্য একই প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে নতুন করে বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। একইভাবে কমিশনার পদে মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্যে অসম্মত ব্যক্তির সংখ্যা যদি এমন হয় যে, কমিশনার পদে বিবেচনার জন্য বাছাই কমিটি কর্তৃক মনোনীত আর কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট নেই, তাহলে কমিশনার পদে মনোনয়নের জন্য একই প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে নতুন করে বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। বাছাই কমিটি ॥ বাছাই কমিটি গঠন প্রসঙ্গ বেগম খালেদা জিয়া বলেন, রাষ্ট্রপতি সর্বজনশ্রদ্ধেয় সৎ, নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ এবং নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে ৫(পাঁচ) সদস্যবিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটি গঠন করবেন। বাছাই কমিটির আহ্বায়ক হবেন দেশের অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মক্ষম একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি। তবে তিনি যিনি বিতর্কিত হবেন না। অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন না। বাছাই কমিটির সদস্য হবেন আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি। যিনি বিতর্কিত নন। লাভজনক পদে ছিলেন না। সরকারের অবসরপ্রাপ্ত, সৎ এবং দলনিরপেক্ষ একজন সচিব যিনি বিতর্কিত নন। তবে অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কোন কর্মকর্তা বাছাই কমিটির সদস্য হতে পারবেন না। অবসরপ্রাপ্ত, সৎ এবং দলনিরপেক্ষ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসেবে সুখ্যাত এবং যিনি অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন না। অথবা দলনিরপেক্ষ সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন বিশিষ্ট নাগরিক। সর্বজনশ্রদ্ধেয় দলনিরপেক্ষ একজন সৎ, দক্ষ ও যোগ্য জ্যেষ্ঠ নারী। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা ও কমিশন গঠন ॥ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা ও অন্যান্য কমিশন গঠন সম্পর্কে বেগম জিয়া সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়, সৎ, মেধাবী, দক্ষ, সাহসী, প্রাজ্ঞ এবং নৈতিকতা, ব্যক্তিত্ব ও কর্ম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং সকল বিচারে দলনিরপেক্ষ এবং বিতর্কিত নন এমন একজন ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, অথবা বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব যিনি অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে নিয়োজিত ছিলেন না, অথবা একজন বিশিষ্ট নাগরিক-প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন। তবে অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কোন কর্মকর্তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে পদায়নের যোগ্য হবেন না। বাংলাদেশ সরকারের সচিব যিনি অবসরগ্রহণের বা পদত্যাগের বা অপসারণের পর, কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ সমাপ্তি বা চুক্তি বাতিলের পর তিন বছর সময়কাল অতিবাহিত করেননি। তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে পদায়নের যোগ্য হবেন না। একজন নারীসহ সর্বজনশ্রদ্ধেয়, সৎ, মেধাবী, দক্ষ, প্রাজ্ঞ, সাহসী, নৈতিকতা, ব্যক্তিত্ব ও কর্ম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও সকল বিচারে দলনিরপেক্ষ এবং বিতর্কিত নন এমন ব্যক্তিদের মধ্য হতে চারজন নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হতে পারবেন। ন্যূনপক্ষে জেলা জজের মর্যাদাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, ন্যূনপক্ষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, ন্যূনপক্ষে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষাবিদ এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্য হতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। তবে যিনি প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের, বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের কোন চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ বা পদত্যাগের বা অপসারণের পর কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ বা চুক্তি বাতিলের পর তিন বছর সময়কাল অতিবাহিত করেননি তিনি নির্বাচন কমিশনার পদে পদায়নের যোগ্য হবেন না। এ সময় বেগম জিয়া নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী ও সংস্কারের নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন। বলেন, নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালীকরণ এবং আরপিওসহ অন্যান্য নির্বাচনী বিধি-বিধান সময় উপযোগী ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। আইনের সংজ্ঞায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে ডিফেন্স সার্ভিস অব বাংলাদেশ পুনঃ স্থাপন করতে হবে। নির্বাচনের ভোট প্রসঙ্গে উল্লেখ করে বলেন, ভোট চলাকালে ব্যালট বাক্স পরিপূর্ণ হয়ে গেলে ব্যালট ভর্তি বাক্স বা বাক্সগুলো সংশ্লিষ্ট বুথেই রাখতে হবে, যাতে তা সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং নির্বাচনী এজেন্ট এবং অথবা পোলিং এজেন্টদের নিকট দৃশ্যমান থাকে। ভোট শেষে ব্যালট গণনার জন্য কেবলমাত্র ভোটগ্রহণে ব্যবহৃত ব্যালট বাক্সসমূহ খোলা হবে। প্রিজাইডিং অফিসার তার স্বাক্ষরিত ফলাফল শীট ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টকে হস্তান্তর না করে ভোট কেন্দ্র ত্যাগ করবেন না। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণ সম্পর্কে বলেন, এর জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সচিবালয় গঠন করতে হবে। সংবিধানের ৭৯ অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদের নিজস্ব সচিবালয় থাকবে বলে উল্লেখ আছে। একইভাবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জন্যও নিজস্ব সচিবালয় গঠন করতে হবে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। নতুনভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশনকে এর নিজস্ব সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং সকল পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচন কাজে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্য পোষণকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে প্রত্যাহার করতে হবে। প্রত্যাহারকৃত কর্মকর্তাদের যে কোন ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন হতে বিরত রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও তাদের মাঠপর্যায়ের যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিগত ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আরপিও ও অন্যান্য নির্বাচনী বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে তাদের তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে হবে। প্রেষণে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকাশ্য রাজনৈতিক মতাবলম্বী নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তিনি বলেন, নতুনভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশন একটি কমিটি গঠন করে বিগত ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের মধ্য হতে প্রকাশ্য দলীয় আনুগত্য পোষণকারীদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন করবে। সকল চিহ্নিত কর্মকর্তাকে ভবিষ্যতে অন্য যে কোন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত রাখতে হবে। রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় মাঠপর্যায়ে কর্মরত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তা পদায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নতুন কর্মকর্তা পদায়নে বিগত ৫ (পাঁচ) বছর বিভিন্ন পদমর্যাদায় ওই জেলায় চাকরিরত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের একই জেলায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পদে পদায়ন করা যাবে না। একই ভাবে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় প্রত্যেক উপজেলা এবং থানায় কর্মরত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইতোপূর্বে কোন সময় যে কোন পদমর্যাদায় ওই উপজেলা বা থানায় চাকরিরত ছিলেন এমন কোন কর্মকর্তাদের একই উপজেলায় বা থানায় নিয়োগ প্রদান করা যাবে না। নির্বাচনের সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময়সূচী ঘোষণার সময় নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পররাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে। সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচিত নতুন সরকার দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচনকালীন (নির্বাচন তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচিত নতুন সরকার দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত) নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত থাকবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। নির্বাচনকালীন প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করে সকল নির্বাচনী এলাকায় টহলসহ ভোটকেন্দ্রে ও বিশেষ বিশেষ স্থানে মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ব্যবস্থা ভোট গ্রহণ দিবসের ৭ (সাত) দিন পূর্ব হতে নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট প্রকাশনা পর্যন্ত স্থায়ী হবে। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও নতুন ভোটার নিবন্ধীকরণ করতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের দাবি অনুযায়ী ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য কিন্তু বিভিন্ন মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় বর্তমানে কারান্তরীণ রয়েছে, তাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক কেন্দ্রে ভোট গণনার সময় ওই কেন্দ্রের প্রত্যেক বুথে প্রার্থী কর্তৃক নিযুক্ত পোলিং এজেন্টকে অবশ্যই উপস্থিত রাখতে হবে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গণনা শুরু করতে হবে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া এবং ভোট গণনা শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে কোন বিরতি দেয়া যাবে না। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। নির্বাচনকালীন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নিজস্ব কর্মকর্তাদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (জচঙ)-এর ৮৯(এ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে বিশেষ আদেশের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নির্বাচনী আইন ও বিধি-বিধান ভঙ্গের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবিধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া আরও বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অব্যবহিত পর থেকে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত নির্বাচনী আইন, আচরণবিধি ও অন্যান্য নির্বাচনী বিধি-বিধান ভঙ্গের অভিযোগপত্র এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে দাখিলকৃত অভিযোগপত্র গ্রহণ ও লিখিত প্রাপ্তি স্বীকার করতে হবে। নির্বাচনে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করতে হবে। কোন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী কিংবা রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্য পোষণকারী পর্যবেক্ষক সংস্থাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা অসম্ভব। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যতিরেকে এ সকল সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে সে উদ্দেশ্যেই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন। নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ভবিষ্যতে যথাসময়ে জাতির সমীপে উপস্থাপন করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
×