ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দলীয় ভিত্তিতে প্রথম সিটি নির্বাচন

মেয়র থেকে ভোটে দাঁড়ানো যাবে না

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৮ নভেম্বর ২০১৬

মেয়র থেকে ভোটে দাঁড়ানো যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে থেকে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে অবশ্যই মেয়র থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তবে কাউন্সিলর পদধারীরা পদে থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন বলে কমিশনের এক নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদ লাভজনক বিধায় এ পদে থেকে কেউ নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন। অপরদিকে কাউন্সিলর পদধারীরা লাভজনকপদে সর্বক্ষণিকভাবে অধিষ্ঠিত নয় বিধায় পদ থেকে পদত্যাগ না করেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে আইনগত কোন বাধা নেই। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে নারায়গঞ্জ সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২২ ডিসেম্বর। গত সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৪ নবেম্বর আগ্রহী প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। তবে এ সিটিতে মেয়র পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিকে পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে ২৪ নবেম্বর মনোনয়নপত্র জমা শেষ সময়ের আগেই তাকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করার পরই কেবল তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। ২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটিতে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ সিটিতে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নির্দলীয় ভিত্তিতে। ওই নির্বাচনে সেলিনা হায়াত আইভী প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি এবারও মেয়র পদে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রথমবার নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়লাভ করেন। তবে এবার তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য দলের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন। দল তাকে মনোনয়ন দিলে মেয়র পদে পুনরায় নির্বাচন করতে আগ্রহী। আর দল যদি তাকে মনোনয়ন না দেয় তাহলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে তিনি সরে দাঁড়াবেন। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটিতে মেয়র নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে তিনজনের নাম সুপারিশ করা হয়েছে তাতে সেলিনা হায়াত আইভীর নাম নেই। আওয়ামী দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সেলিনা হায়াত আইভীর জনপ্রিয়তা বিবেচনায় এবার তাকেই দল থেকে নমিনেশন দেয়া হতে পারে। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নন পেলে মেয়র পদে নির্বাচন করতে হলে আইন অনুযায়ী তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের উপসচিব ফরহাদ আহমেদ খান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকা কোন ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশন মেয়র নির্বাচনে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সিটি কর্পোরেশন একটি সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষ। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে রিট পিটিশন ৯১২৪/২০০৮ এ হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক লাভজনক পদ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এর ধারা ৯ এর উপধারা (২)(ঙ) অনুযায়ী মেয়র পদে অধিষ্ঠিত কোন ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্র্থী হিসেবে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। ওই ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাকে ওই পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে হবে। অপরদিকে কাউন্সিলর পদধারী সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, কাউন্সিলর পদধারীর লাভজনক পদে সর্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত নন বিধায় তাদের পদত্যাগ না করেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে আইনগত কোন বাধা নেই। এছাড়াও কোন ব্যক্তি ফৌজদারি আইনে কোন অপরাধে যদি আদালত থেকে দ-িত হয়ে থাকেন তাহলে তিনিও এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এতে বলা হয়েছে, কোন ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদ-ে দ-িত হন এবং তার মুক্তি লাভের বা কারাদ- ভোগের মেয়াদ পাঁচ বছর অতিক্রান্ত না হয়ে থাকে তাহলে তারা এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবেন। ফৌজদারি আইনের ধারা ৯ এর উপধারা (২)(ঘ) অনুযায়ী কোন প্রার্থী ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন ২ বছর কারাদ-ে দ-িত হলে এবং উক্ত দ-াদেশের বিরুদ্ধে আপীল হলে এবং আপীল আদালত নিম্ন আদালতে রায় বা সাজা স্থগিত না করলে অযোগ্য বলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। এতে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালত তার আপীল গ্রহণ করলেও তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবেন। আবার সংশ্লিষ্ট প্রার্থী জামিন পেলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য হবেন। আপীল আদালত তার সাজা স্থগিত না করলে বা মওকুফ না করা পর্যন্ত তিনি অযোগ্য বিবেচিতই থাকবেন। যদি কোন ক্ষেত্রে সাজা স্থগিত করা হয় সেক্ষেত্রে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এতে একজন মেয়র ছাড়া ২৭টি কাউন্সিলর ৯টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ করা হবে। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২ । এর মধ্য পুরুষ ২ লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ এবং নারী ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৮ ভোটার ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
×