ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিপাকে রেশম চাষী

ভোলাহাটে অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে রেশম পোকা

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৬ নভেম্বর ২০১৬

ভোলাহাটে অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে রেশম পোকা

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ প্রায় ২০ হাজার রেশম পোকা মারা গেছে। দেশের একমাত্র বৃহত্তম রেশম গুটি উৎপাদনকারী এলাকা বা রেশমের স্বর্ণ সূতিকাগার হিসেবে চিহ্নিত ভোলাহাটে গত দুই সপ্তাহে প্রায় দেড় কোটি টাকার পলু পোকা অচেনা রোগে মারা গেছে। পোকাগুলো মোটাতাজা না হয়ে শুকিয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে এবং একপর্যায়ে মারা যাচ্ছে। ফলে রেশম পলুচাষীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মুখে পড়েছে। এক কথায় গুটি তৈরির স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে চাষীদের। তারা স্বজন হারানোর শোকের মতো দিশেহারা বিহ্বল হয়ে পড়েছে। এসব পলু হতে শত কোটি টাকার সুতা তৈরি হতো। বছরে তিন বার এই অঞ্চলে পলু পোকার আবাদ হয়ে থাকে। স্থানীয়ভাবে এবারের বা এই মৌসুমের পলু আবাদকে ‘অগ্রণী বন্দ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। আর আগে চাষীরা জ্যৈষ্ঠ ভাদুরী বন্দেও একইভাবে না হলেও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবার ক্ষতির পরিমাণ একেবারে সম্পূর্ণটা হওয়ার ফলে রেশম পলুচাষীরা একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা গ্রাম্য মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে যে ঋণ গ্রহণ করেছিল। পাশাপাশি ব্যাংক যে ঋণ দিয়েছিল তা এখন কিভাবে পরিশোধ করবে ইতোমধ্যেই ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি। প্রায় দুইশত পলুচাষী ২০ হাজারের কাছাকাছি ডিম নিয়ে চাষ শুরু করেছিল। তার মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার ৪শ’ ডিম এবার পলুচাষীদের মধ্যে বিনা পয়সায় বিতরণ করা হয়েছিল। বাকি প্রায় পাঁচ হাজার ডিম পলুচাষীরা বাইরে থেকে কিনে আবাদে শরিক হয়েছিল। ভোলাহাট রেশম বোর্ড কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা যে ১৫ হাজার ডিম সরবরাহ করেছিল তাতে চাষীরা প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয় করতে পারতেন। কিন্তু চাষীদের অভিযোগ সরকার সরবরাহকৃত ডিম ত্রুটিমুক্ত ছিল না। যার কারণে রেশম ডিম থেকে পোকা বের হওয়ার পর পূর্ণতা পাওয়ার মুহূর্তে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। প্রায় ১৫টি গ্রামের প্রতিটি পলুচাষীর ঘরে পোকা মরার মড়ক শুরু হলে তারা দ্রুত ছুটে জান স্থানীয় রেশম বোর্ডের উপ-পরিচালকের কাছে। কৃষকদের অভিযোগ গত ২৫ বছরেও তারা এই ধরনের মড়কের সম্মুখীন হননি। কারণ পোকা বড় হয়ে গুটি তৈরি করার উপযোগী মুহূর্তে মড়কের কবলে পড়ে। রেশম বোর্ড কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত টিম গঠন করে মাঠপর্যায়ে তদন্ত শুরু করেছে। সিনিয়র রিসোর্স অফিসার মুনসুর আলী তদন্ত শুরু করলেও এখন পর্যন্ত এর উৎস খুঁজে পাচ্ছে না। তিনি মাঠ পরিদর্শন শেষে অচেনা এই রোগের কারণ শনাক্ত করা তার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এদিকে ভোলাহাটের রেশম চাষীরা তাদের ক্ষতি কিভাবে পোষাবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। সর্বোপরি ভোলাহাটে রেশম চাষের এই সঙ্কটে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পড়বে দেশের রেশম শিল্প। রেশমের বহু তাত ও কারখানা বন্ধ হয়ে পড়বে। সুতার অভাবে পুরো দেশের রেশমের কাঁচামাল ‘সুতার’ পুরোটা আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে। বাড়বে রেশমের তৈরি কাপড় চোপড়ের দাম।
×