ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কোন্ আইনে মোনায়েম খান ৫ বিঘা জমি বরাদ্দ পায় জানতে চেয়ে রুল

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

কোন্ আইনে মোনায়েম খান ৫ বিঘা জমি বরাদ্দ পায় জানতে চেয়ে রুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতাবিরোধী পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গবর্নর মোনায়েম খান ১৯৬৭ সালে কোন কর্তৃত্ব বলে বনানীতে ৫ বিঘা ১৬ ছটাক ভূমি বরাদ্দ পেয়েছিলেন, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। রাজউক চেয়ারম্যান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মোনায়েম খানের বাড়ির রাস্তার পাশে সবুজায়নের (গ্রীন বেল্ট) জন্য বরাদ্দকৃত ৫০ ফুট বাই ২০০ ফুট জায়গা রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনের যৌথ জরিপের মাধ্যমে চিহ্নিত করার পর দখলমুক্ত করে ১৫ নবেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেন। আদালতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শাহজাদা আল আমিন কবির সোহেল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। আদেশের পর আইনজীবী শাহজাদা আল আমিন কবির সাংবাদিকদের বলেন, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মোনায়েম খানের পরিবার ও রাজউককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে আইনজীবী আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘হাইকোর্ট আমাদের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলেন, ব্যাখ্যায় আমরা দেখিয়েছিÑ সবুজায়নের জায়গা দখল করে নিয়েছেন মোনায়েম খানের পরিবারের সদস্যরা। হাইকোর্ট ইতোপূর্বে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তার ব্যাপারে কোন স্থগিতাদেশ ছিল না। এ বিষয়টি আদালতে জানিয়েছি। এরপর আদালত রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। বনানীর ব্লক-এ’র ১১০ নম্বরের পাঁচ বিঘা ১৬ ছটাকের প্লটটি ১৯৬৬ সালে ডিআইটি থেকে বরাদ্দ পান মোনায়েম খান। পরে ২০০৯ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন তাদের জায়গা উল্লেখ করে চিঠি দেয়। ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন মোনায়েম খানের ছেলে কামরুজ্জামান। ওই বছরের ২৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট স্থিতাবস্থা জারি করে। এ অবস্থায় গত ৩ নবেম্বর বিকেলে বনানীর ২৭ নম্বর রোডের ১১০ নম্বর বাড়িতে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নুরুজ্জামান শরীফ ও মোঃ সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। ডিএনসিসির উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আসেন মোনায়েম খানের ছেলে মোঃ কামরুজ্জামান খান। গত ৭ নবেম্বর হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা থাকা সত্ত্বেও মোনায়েম খানের বাড়ি (বনানীর ২৭ নম্বর রোডে ১১০ নম্বর বাড়ি) কেন উচ্ছেদ করা হলোÑ তার ব্যাখ্যা জানতে চায় হাইকোর্ট। সাত দিনের মধ্যে লিখিতভাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কাছে এ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে সাত দিনের জন্য সকল উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে নির্দেশ দেয় আদালত। সে অনুসারে ডিএনসিসির দেয়া ব্যাখ্যার ওপর রবিবার শুনানি শেষে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। উল্লেখ্য, ৩ নবেম্বর মোনায়েম খানের বাড়ির অবৈধ অংশ ভেঙ্গে দেয়ার পর জানা গেছে, মোনায়েম খানের দখলে ছিল প্রায় দশ কাঠা জমি। এর আয়তন ছিল লম্বায় ২০২ ফুট ও প্রস্থে ৩৬ ফুট। উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শন করেন ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম, ৩ নম্বর অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুজ্জামান শরীফ প্রমুখ। এ সময় উত্তরের মেয়র আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুনেছি এ দেশে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সরকারীভাবে যিনি সবচাইতে বেশি করেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন তাদেরই পরিবারের কাছে এখানে একটি জমি গত ৫০ বছর পড়ে আছে। তাই আমার রিকোয়েস্ট থাকবে যদি এটা সত্যি হয়, সেই জমি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন, যদি তাদের কারও নামে হয়, তাহলে সেটি এখনই ক্যানসেল (বাতিল) করা হোক। রাজধানীর বনানী কবরস্থান সড়কে সরকারী ৫ বিঘা জমি দখল করে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় দেশবিরোধী অন্যতম কুচক্রী মোনায়েম খান গড়ে তোলেন ‘বাগ-ই-মোনায়েম’। কিন্তু কোন বৈধ নথি দেখাতে না পারায় মূল সড়ক থেকে ১৬ ফুট ভেতরে ভবনের সামনের অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়। বাড়ির ভেতরের দুই দিকের গেট লাগোয়া যে দুটি ঘর ছিল সে দুটিও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এদিকে ১২ নবেম্বর রাজধানীর বনানীতে স্বাধীনতাবিরোধী কুখ্যাত মোনায়েম খানের বরাদ্দকৃত বাড়িটির স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরির দাবি জানিয়েছেন দেশের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। একাত্মতা প্রকাশ করেছেনÑ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ ৯টি সংগঠন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। একই সঙ্গে তারা সকল স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও মৃত সকল রাজাকার আলবদরদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে মরণোত্তর বিচার দাবি করেন ও তাদের অর্জিত সকল সম্পত্তি বাজেয়াফত করে যুদ্ধাহতসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানান। এ সময় ডিএনসিসি মেয়র রাজধানীর অবৈধভাবে দখলকৃত হাজার হাজার একর জমি পুনরুদ্ধারে একটি আলাদা কমিশন গঠন করতে প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানান।
×