ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ভাগ্য নিয়ে হৈচৈ

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ভাগ্য নিয়ে হৈচৈ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ছন্দময় এবং শৈল্পিক ফুটবলের পূজারি বলা হয় ব্রাজিলকে। এই দেশের ফুটবলারদের নয়নজুড়ানো ফুটবল দেখেই অন্যরা তাদের অনুকরণ করতে থাকে। যুগে যুগে ব্রাজিলের অসম্ভব সব প্রতিভাবান ফুটবলারদের ক্যারিশমা বিশ্ব অবাক চোখে প্রত্যক্ষ করেছে। পেলে, গ্যারিঞ্জা, ভাঁভা, পেরেইরা, রোমারিও, বেবেতো, রোনাল্ডো, রোনাল্ডোনিহো, কাকা, রবিনহোর মতো ফুটবলার এসেছে দেশটিতে যুগে যুগে। এসব তারকাদের উদ্ভাসিত নৈপুণ্যে বরাবরই সাফল্য পেয়েছে ব্রাজিল। দেশটির সাফল্যে এমন অবস্থা হয়েছে যে, ব্রাজিল এবং ফুটবল একে অপরের পরিপূরকে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্বের সেরা আয়োজন বিশ্বকাপেও সেরা দলের তকমা ব্রাজিলের। কেননা রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বকাপ জয়ী তারা। সাফল্যের পরিসংখ্যানে এমন অবস্থা, ব্রাজিল মানেই সেরা হওয়া। ‘দ্বিতীয়’ হওয়াটাকেও দেশটি ব্যর্থতা হিসেবে মনে করে। ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর দীর্ঘ দুই যুগ পর ১৯৯৪ সালে আবারও বিশ্বকাপ জেতে জাগো বনিতোরা। আধুনিক যুগে এসে এ সময় থেকেই মূলত দেশটি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। ১৯৯৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টানা তিন বিশ্বকাপে ১২ বছর বিস্ময়কর সাফল্য দেখায় ব্রাজিলিয়ানরা। এ সময়ের তিনটি বিশ্বকাপের প্রতিটিতেই ফাইনালে খেলে ব্রাজিল এবং দু’টিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। এমন আকাশচুম্বী সাফল্যের পর ব্রাজিল দল যেন সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। এ কারণেই ২০০৬ বিশ্বকাপে ‘হেক্সা’ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে জার্মানি পাড়ি জমায় লুই ফিলিপ সোলারির দল। এ সময় রোনাল্ডিনহোরা এতটাই ফর্মের তুঙ্গে অবস্থান করছিলেন যে বিশ্বকাপ জয় করা নিয়ে কোন সংশয় ছিল না। কিন্তু চূড়ান্ত লড়াইয়ে খেই হারিয়ে বিদায় নিতে হয় পেলের দেশকে। এরপর দলের দায়ভার দেয়া হয় ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কার্লোস দুঙ্গাকে। কিন্তু দলের সেরা ফুটবলারদের বিশ্বকাপে না এনে তথাকথিত ‘শ্রমিক’ দিয়ে শিল্পকর্ম করতে যেয়ে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর স্বাভাবিকভাবেই অপসারিত হতে হয়েছে এই লৌহমানবকে। ২০১৪ বিশ্বকাপে নিজেদের মাঠে বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিল ব্রাজিল। কিন্তু সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হয়ে আশাভঙ্গ হয় নেইমার, ডেভিড লুইসদের। ২০০২ সালে ব্রাজিলকে ‘পেন্টা’ শিরোপা এনে দিয়েছিলেন লুই ফিলিপ সোলরি। এরপর তিনটি বিশ্বকাপে দারুণ সম্ভাবনাময় দল নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে ব্রাজিল। পরবর্তী ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপকে তাই পাখির চোখে নিয়েছে ফুটবল পাগল দেশটি। এক যুগের ব্যর্থতা কাটাতে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে তারা। ‘হেক্সা’ ট্রফি জিততে নিত্যনতুন পরিকল্পনা আটছে ব্রাজিল। এ লক্ষ্যে আপাতত সফল ব্রাজিলিয়ানরা। নতুন কোচ টিটের অধীনে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অপ্রতিরোধ্য ছন্দে আছে তারা। শুক্রবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে উড়িয়ে দিয়ে সেলেসাওরা দেখিয়েছে ফিরে আসছে সেই বিখ্যাত সাম্বা ছন্দ। ফুটবলবিশ্বেও তাই আলোচনার ঢেউ। সবার মুখেই সেই কথা, ‘আবারও বিশ্ব শাসন করবে ব্রাজিল’। কোচ টিটেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এর থেকেই সুন্দর ব্রাজিলের দেখা পাবে ভক্ত-সমর্থকরা। টিটে বলেন, দলের পারফর্মেন্সে আমি খুশি। পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই জয় প্রত্যাশিত ছিল না। এটা আমার কল্পনারও বাইরে। তবে দলের খেলোয়াড়দের আরও উন্নতির জায়গা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি তারা আরও ভাল করতে পারবে। আমার বিশ্বাস ব্রাজিলের খেলার সেই সৌন্দর্য আবারও ফিরে আসবে। ক্লাব দল লিভারপুলের হয়ে ধারাবাহিকভাবে দ্যূতি ছড়িয়ে চলেছেন ফিলিপ কুটিনহো। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে দৃষ্টিনন্দন গোল করে জাতীয় দলের হয়েও আলো ছড়িয়েছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। এখন তাকে নিয়ে হৈচৈ ফুটবলবিশ্বে। স্প্যানিশ পরাশক্তি বার্সিলোনা নাকি ইতোমধ্যে তাকে নেয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছে। স্পেনের এক ক্রীড়া দৈনিক জানিয়েছে, আগামী ট্রান্সফার উইন্ডোতে ২৪ বছর বয়সী কুটিনহোকে চায় কাতালানদের প্রতিভা অন্বেষণ কমিটি। ব্রাজিল উড়লেও ঠিক বিপরীত অবস্থা আর্জেন্টিনার। দলটি পরবর্তী বিশ্বকাপে খেলতে পারবে কিনা তা নিয়েই শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের ১০ দলের বাছাইপর্ব থেকে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে শীর্ষ চারটি দল। পঞ্চম স্থানে থাকা দলটিকে খেলতে হবে প্লেঅফ। কিন্তু ১১ ম্যাচ পরে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে আর্জেন্টিনা আছে ষষ্ঠ স্থানে। শেষ পর্যন্ত এমন অবস্থায় থেকে গেলে দুইবারের শিরোপা জয়ী আর্জেন্টিনা ও এ সময়ের সেরা ফুটবলার মেসিকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে রাশিয়া বিশ্বকাপ।
×