ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চেয়ারপার্সন খালেদা ঘোষণা দেবেন

১৮ নবেম্বর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের ফর্মুলা দেবে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

১৮ নবেম্বর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের ফর্মুলা দেবে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ ১৮ নবেম্বর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের ফর্মুলা দেবে বিএনপি। ওই দিন বিকেলে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ ফর্মুলা ঘোষণা করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এতে উপস্থিত থাকার জন্য সাংবাদিকদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে ভাল অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন লোকদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ক’জন সাবেক সচিব, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সিনিয়র আইনজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ক’জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হবে- এমনটি মাথায় রেখেই সংবাদ সম্মেলনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ফর্মুলা দেবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এতে তিনি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সচিব পদমর্যাদার নিচে নন এমন নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেবেন। এ কমিশনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সাবেক সচিব এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেবেন। বিএনপির নির্বাচন কমিশন গঠনের ফর্মুলা প্রস্তুতির জন্য ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে অভিজ্ঞ এমন দেশী-বিদেশী লোকদের মতামত নেয়া হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানসহ আরও ক’জন নেতা বেশ ক’দিন ধরে কাজ করছেন। সকল রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য শক্তিশালী একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের ফর্মুলা ঠিক করতে সুশীল সমাজের ক’জন প্রতিনিধিও বিএনপিকে সহযোগিতা করেছেন বলে জানা গেছে। বিএনপি হাইকমান্ড মনে করছেন, যেহেতু আন্দোলন করে বর্তমান সরকারের অবস্থান দুর্বল করা যাচ্ছে না, সেহেতু এ সরকারের অধীনেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন থাকলে দেশ-বিদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সরকার একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না। আর মোটামুটি সুষ্ঠু হলেও বিএনপি আশানুরূপ ফল পাবে। আর কোন কারণে হেরে গেলেও সম্মানজনক আসন নিয়ে জাতীয় সংসদে গিয়ে সরকারকে বড় রকমের চাপে রাখা যাবে। তাতে করে পরবর্তীতে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অবস্থান আরও মজবুত করে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করতে পারবে। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন করলেও নতুন নির্বাচন কমিশন যাতে সরকারের আস্থাভাজন না হয় সে চিন্তা সামনে রেখেই একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠনের ফর্মুলা দেবে বিএনপি। তবে কমিশন গঠনের আগে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনকৃত সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতামতের ভিত্তিতে সার্স কমিটি গঠন এবং এ কমিটিতে যেন প্রভাবশালী দলগুলোর প্রতিনিধি থাকে তাও ফর্মুলায় উল্লেখ থাকবে। বিএনপি সূত্র জানায়, ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সৌদি আরবে গিয়ে হজ করে আসার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দেখা হলেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করার নির্দেশ দিচ্ছেন। এছাড়া কিভাবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন হতে পারে এ নিয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দলীয় ফোরামে আনুষ্ঠানিকভাবেও তিনি এসব বিষয়ে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের ফর্মুলা তৈরির পাশাপাশি বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার করতে খালেদা জিয়া তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছানোর ব্যাপারেও নেতাদের সঙ্গে সব সময় আলোচনা করছেন। এরই ফলস্বরূপ তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই অধিকাংশ জেলা-উপজেলা কমিটি গঠনের কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি সমমনা আরও ক’টি রাজনৈতিক দলকে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটে ভেড়ানোর চেষ্টা চলছে। অতিসম্প্রতি দলীয় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে শীঘ্রই বিএনপির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেয়া হবে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এজন্য সরকারের উচিত সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ হলো ভোটারদের ভোট নিশ্চিত করা, যার মাধ্যমে দেশে একটি প্রতিনিধিত্বশীল জাতীয় সংসদ নিশ্চিত করা যায়। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই বিএনপি পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবে। অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও অনুরূপ কথা বলেন। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এক অনুষ্ঠানে বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া কখনও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে নিরপেক্ষ লোকদের নিয়ে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তাই পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সরকারের উচিত সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নেয়া। কিন্তু আমরা বার বার বলা সত্ত্বেও সরকার কর্ণপাত করছে না। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে নিরপেক্ষ সরকারের ফর্মুলা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কিন্তু তার ফর্মুলা সরকার আমলে না নেয়ায় বিএনপি কঠোর আন্দোলন শুরু করে। তবে বিএনপির আন্দোলন উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করে সরকার গঠন করে ফেলে। বিএনপি এ নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করলেও বর্তমান সরকার তাদের অবস্থান শক্তিশালী করে ২০১৯ সালের আগে আর নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা করে। আর বিএনপিও ধরে নিয়েছে মেয়াদ শেষের আগে আর এ সরকার নির্বাচন দেবে না। এ কারণে বিএনপিও এখন কিছুটা কৌশল পরিবর্তন করেছে। এ কৌশলের অংশ হিসেবেই আন্দোলন ছাড়া কিভাবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুবিধা আদায় করা যায় সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি নেতারা নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে কথায় কথায় বলত। কিন্তু এখন তাদের সে মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে। এখন তারা বলছে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন হলে তারা নির্বাচনে যাবে। আর এজন্যই বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে নানামুখী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দলটি এখন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের ফর্মুলা দিতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া কোনভাবেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। বিশ্বের অনেক দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে। তাই আমাদের দেশেও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হলে সরকার ও বিরোধী দলের জন্য নির্বাচনকালে সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে। এর ফলে জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাবে। এজন্যই আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের কথা বলছি। শীঘ্রই আমাদের দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের একটি ফর্মুলা দেবেন।
×