ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে চলছে অরাজকতা

মহীপুরে বিত্তবানের নামে কার্ড

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১১ নভেম্বর ২০১৬

মহীপুরে বিত্তবানের নামে কার্ড

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১০ নবেম্বর ॥ মহিপুর ইউনিয়নের নজিবপুর গ্রামের সেকান্দার ফকিরের ছেলে শানু ফকির কার্ড নং ৯০০, বহু আগেই মারা গেছেন। তারপরও তার নামে হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ডিলার, জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহিপুর ইউনিয়নে চাল নিয়ে এসব অনিয়ম পাওয়া যায়। একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী-পুত্র-কন্যার নামে কার্ড বিতরণের অভিযোগও করা হয়েছে। বিদেশে বসবাসকারীর নামেও ইস্যু করা হয়েছে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণের কার্ড। জানা গেছে, বিপিনপুর গ্রামের ১৮৫৭ নম্বর কার্ডে নাম রয়েছে সাবেক বন কর্মকর্তা ইউনুচ হাওলাদারের। যিনি বিত্তশালী। লতিফপুর গ্রামের দ্বীন ইসলামের রয়েছে ৭টি কার্ড যার মধ্যে ১৪৯৩ নং দ্বীন ইসলামের নামে তার স্ত্রী শিরিনা বেগম ও পুত্রদের নামে রয়েছে কার্ড। লতিফপুর গ্রামের ১৫৬১ নম্বর কার্ডে শিরিনা বেগম স্বামী দ্বীন ইসলামের নামও রয়েছে। মূলাম খালে মাছ ধরে লাখোপতি সালাউদ্দিন ফরাজি ছালোর হেফাজতে রয়েছে ১১টি কার্ড যার মধ্যে নিজ শিববাড়িয়া স্কুলের ছাত্র ১৪৭৪ নং কার্ডে আলমাস (ছাত্র) পিতা সালাউদ্দিন ফরাজীর আইডি কার্ডের বদলে জন্ম নিবন্ধন নং ৭৮১৬৬২৩৫৬৩৩১২ দিয়ে চাল উত্তোলন করছে। ১৪৭৪নং কার্ডে মোহাম্মদ লিটন (ছাত্র), পিতা সালাউদ্দিন ফরাজী আইডির বদলে জন্মনিবন্ধন নং ১৯৯৪৭৮১৬৬২৩০০০২৮৫ মহিপুর ইউনিয়ন যুবদল সাধারণ সম্পাদক বিপিনপুর গ্রামের ৬০৮নং কার্ডে চাল উত্তোলন করেছে। বিপিনপুরের বিএনপি নেতা বিত্তশালী মোঃ সোহরাফ ও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে কার্ড। আঃ জব্বার মৃধার পুত্র সোহরাফ হোসেন ১৭৭৪নং কার্ডে চাল উত্তোলন করেছে। বিপিনপুর গ্রামের সোহরাব হোসেনের স্ত্রী পারভীন বেগম ১৭৭৫নং কার্ডে চাল নিয়েছে। মহিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ফরিদ খানের নামে রয়েছে ১০ টাকার চালের কার্ড। শিক্ষক, বিত্তশালী, চাকরিজীবী, ছাত্র, অন্যত্র বিয়ে দেয়া হয়েছে এমন নারীর নামও রয়েছে তালিকায়। নজীবপুর গ্রামের জামায়াত নেতা নিজাম ৮০০নং কার্ডে চাল ছাড়িয়েছে। একই গ্রামের বিত্তশালী মোঃ নুরছায়েদ ৮০৭ নম্বর, ৮১৬ নম্বরে আলাউদ্দিন, ৮২৮ নম্বর কার্ডে লাল মিয়া, ৮৪২ নম্বরে মোশারেফ খান, ৮৩৫ নম্বরে মোঃ ইব্রাহীম খান, ৮৫০ নম্বরে মোঃ কামাল শেখ, ৮৫২ নম্বরে মোঃ আলম হাওলাদার, শাহ আলম ৮১৫ নম্বর, ৮৫১ নম্বরে মোঃ দেলোয়ার হোসেন পিতা- ইব্রাহীম মাঝি, ৮৬৭ নম্বর মোঃ মোস্তফা শরীফ, ৮৬৮ নম্বরে মোঃ জাহাঙ্গীর হাফেজ। নজিবপুর গ্রামের ৮০৯ নম্বরের কার্ড রয়েছে বিদেশে অবস্থানরত নাসিমার নামে। তার নামেও চাল ছাড়ানো হয়েছে ভুয়া টিপ-সই দিয়ে। ৮১১ নম্বর কার্ডে রত্তন প্যাদা প্রবাসে রয়েছেন দীর্ঘসময়, তিনিও চাল ছাড়িয়েছেন। অন্য এলাকার বাসিন্দা ৮৮৯ নম্বরে মিলনের নামে চাল ছাড়ানো হয়েছে, ৮৮৮ নম্বরেও চাল নিয়েছে, কিন্তু নাম নেই। ধনাঢ্য ইদ্রিস মৃধা ৮৯৩ নম্বরে, জলিল খান ৯১০ নম্বরে, ৮৭৭ নম্বরে মোঃ আমির খান, ৮৭২ নম্বরে শিক্ষক মোঃ হানিফ গাজী, ৯২১ নম্বরে ইব্রাহিম, ৯২২ নম্বরে বিদেশে অবস্থানরত কামাল মৃধা, ৯২৪ নম্বরে রফিক মীর, ৯৩৯ নম্বরে বিত্তশালী ফারুক মাঝি, ৯২৫ নম্বরে মিলন মাতুব্বর, ৯২৭ নম্বরে হানিফ, ৯২৯ নম্বরে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত, ১৮৩ নম্বরে শাহআলম গাজী। এছাড়া ডাবল কার্ডের নাম তালিকায় নজিবপুর গ্রামের ১৯১১ নম্বর কার্ডে ছোরেয়া, ১৯১২ নম্বরে ফারুক, ১৯১৩ নম্বরে ইলিয়াস শরীফ, ১৯৯৪ নম্বরে জাকারিয়া শরীফ। অভিযোগ রয়েছে নামকা ওয়াস্তে ডিলার রয়েছে। যা নিয়ন্ত্রণ করছে ইউপি মেম্বার কিংবা রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আবুল হোসেন জানান, ওই ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ৭৯টি কার্ড বাতিল করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ফুলপুরে গ্রেফতার এক স্টাফ রিপোর্টার ময়মনসিংহ থেকে জানান, হতদরিদ্রদের নামে বরাদ্দের চাল পাচারের অভিযোগে ফুলপুরের ডিলার যুবলীগ নেতা বাদশা আলমগীরসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আজাহার আলী তালুকদার বাদী হয়ে বুধবার ফুলপুর থানায় এই মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলা অপর আসামিরা হচ্ছে সামাল ওরফে ছামাদ ও ট্রলি চালক ওয়াজেদুল ইসলাম। এদের মধ্যে ওয়াজেদুল ইসলামকে আটকের পর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
×