ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ামত হোসেন

চক্ষু মেলিয়া

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১১ নভেম্বর ২০১৬

চক্ষু মেলিয়া

মাতৃ স্নেহ একটি গাড়ি দাঁড় করানো রাস্তার পাশে। লোকজন যাচ্ছে-আসছে। সবাই দেখছে। খালি গাড়িটি পড়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে। লোকজনের কৌতূহল হলো কেউ কেউ উঁকি দিয়ে কাঁচের ভেতর দৃষ্টি দিয়ে দেখল ভেতরে সিটের ওপর একটি শিশু। আহারে, এমন ফুট ফুটে বাচ্চাটিকে একা গাড়িতে ফেলে চলে গেছে রাস্তায়! কারও কোন খোঁজ নেই গাড়ির মালিক বা চালকের? লোকজন জমতে শুরু করল সেখানে। খুব মায়া হলো সবার ওই শিশুটির জন্য। কী করবে, কিছু করার নেই। খবর দেয়া হলো পুলিশকে। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এলো সেখানে। দরজা খোলার চেষ্টা করল। পারল না। জানালার কাঁচ ভাঙ্গার চেষ্টা করল, পারল না। শেষে আনা হলো বিশেষ যন্ত্র। তাই দিয়ে ভাঙা হলো শক্ত কাঁচ। সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে তোলার জন্য চেষ্টা। কিন্তু একী! শিশুটি যে নড়াচড়া করছে না! দারুণ উদ্বিগ্ন লোকজন। শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়েছে কিনা তা দেখার জন্য বা পরীক্ষা করার জন্য তার নাক-মুখের কাছে হাত বাড়াতেই মধুর স্বরে হেসে উঠল শিশুটি। আরে এ যে মানবশিশু নয়, পুতুল-শিশু। অনেক সময় পার হয়ে গেছে। এমন সময় কাছে এসে অবাক হয়ে পুরো ঘটনাটি দেখতে লাগলেন এক ভদ্রমহিলা। তিনি জানালেন এটা তার গাড়ি। তিনি এটাকে এখানে রেখে গিয়েছিলেন কাছের এক মার্কেটে। কিন্তু একী হাল তার গাড়ির! পুলিশকে তিনি সব জানালেন। পুলিশ জানাল তাকে পূর্বাপর সব কিছু। পুলিশের বক্তব্য। গাড়ির যে ক্ষতি হয়েছে তা তাকে দিতে তারা প্রস্তুত। কিছু দিন আগে ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের এক অঙ্গরাজ্যের একটি শহরে। জানা গেল, ভদ্রমহিলার শিশু সন্তান মারা যাওয়ায় তিনি এই পুতুলটি কিনে সন্তানের মতোই তাকে সঙ্গে সঙ্গে রাখেন। পুতুলটি অনেক কিছু বলতে পারে, হাসতে পারে! হায়রে মাতৃস্নেহ দুঃখিনী মায়ের এমন মমতায় হৃদয়-মন ছুঁয়ে যায়। থানায় ইঁদুরের জ্বালা! ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ির এক থানার পুলিশের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ইঁদুরের জ্বালায় অতিষ্ঠ। এই মর্মে এক খবর বেরিয়েছে প্রচার মাধ্যমে। দেশে দেশে যুগ যুগ ধরে পুলিশের ভয়ে যেখানে লোকে ইঁদুরের গর্তে সেঁধোয়, সেখানে গর্ত থেকে বেরিয়ে ইঁদুররা খোদ পুলিশকেই জ্বালিয়ে মারছে এমন খবরে কে না অবাক হবে! বোঝা যায়, সেখানে ইঁদুরের উপদ্রব যেমন বেড়ে চলেছে, তেমনি বেড়ে চলেছে তাদের সংখ্যা। তাদের কত ধরনের উপদ্রব! এই যেমন, হঠাৎ করে বেরিয়ে এলো কোনখান থেকে, তেমনি কাউকে দেখলে হঠাৎ দিল ছুট! যেই দেখছে পুলিশ- দারোগা অমনি দে দৌড় কোন কিছুর আড়ালে। যেই দেখে কেউ নেই তমনি থানা জুড়ে বসে যায় তাদের রাজত্ব। দামী ফাইলপত্র কাটছে। আলনায় ঝুলিয়ে রাখা কাপড় বা নিচে খুলে রাখা জুতোয় ঢুকে খেলা করছে! কেউ নিরিবিলি কাজ করছে অমনি তার পায়ের কাছে এসে ঘুরঘুর করছে। যেই একটু শব্দ, অমনি ছুটা! এ তো মহাজ্বালা! অনেক চেষ্টা-তদ্বির করা হলো। কাজ হচ্ছে না তেমন। শেষে আনা হলো বিড়াল। কিন্তু বিড়ালও ফেল! বিড়াল দেখে একটু–আদটু লুকো-চুরি চলল। এ রকম কয়েক দিন। তারপর ইঁদুরেরা মরিয়া! বিড়াল খেদাতে হবে। সবাই একত্রিত হলো- ধেড়ে নেংটি সবাই। ব্যতিব্যস্ত করে তুলল বিড়ালকে। অবশেষে রণে ভঙ্গ দিল বিড়াল। কে যায় এমন ঝামেলায়। পালাল বিড়াল। এই হচ্ছে অবস্থা। জানা গেছে এটুকুই। ইঁদুরকে বলা হয় ক্ষতিকারক প্রাণী। জমির অনেক ধান ও অন্যান্য ফসল ইঁদুরের পেটে যায়। কিছুকাল আগেও দেশে চলত ইঁদুর নিধনের উৎসব। সেটা হতো গ্রামীণ কৃষকদের মধ্যে। ইঁদুর ধরো, লেজ কাটো জমা দাও। লেজ গুনে ঠিক বোঝা যাবে কয়টা ইঁদুর মারা হয়েছে। সেই অনুযায়ী টাকাও মিলবে! সে সময় একটা মজার কথাও চালু হয়ে গিয়েছিল। সেটা হচ্ছে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে প্লাস্টিকের লেজ। কেউ কেউ নাকি সেই লেজ জমা দিয়ে দুর্নীতি করছে। কথাটা কতখানি ঠিক কে জানে! ইঁদুর যে মানুষকে বহুকাল ধরে জ্বালাচ্ছে সে কথা শোনা যায় পুরনো গল্পে, উপকথায়। হ্যামিলনের বংশীবাদকের কথা সবার জানা। এক নগরীতে ইঁদুরের প্রচ- উপদ্রব। কিছুতেই ইঁদুর তাড়ানো যাচ্ছে না। তখন এক বাঁশি বাদককে পারিশ্রমিক তথা পুরস্কার দেয়ার কথা বলে ইঁদুর তাড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হলো। বংশীবাদক বাঁশিতে সুর তুলল। বাড়িঘর ও আনাচে-কানাচ থেকে দলে দলে বেরিয়ে আসতে লাগল ইঁদুর। বাঁশিওয়ালা পথ দিয়ে বাঁশি বাজাতে বাজাতে হেঁটে যায় আর সুরে মুগ্ধ ইুঁদরগুলো চলতে থাকে তার পেছনে পেছনে। এভাবে নগরীর সব ইঁদুর চলল তার পিছু পিছু। শহরের প্রান্তে নদী। বাঁশিওয়ালা নামল সেই নদীর পানিতে। সঙ্গে সঙ্গে ঝুপঝাপ করে পানিতে লাফিয়ে পড়ল ইঁদুরগুলো। তারপর ভবলীলা সাঙ্গ ওদের। ইঁদুর যে কী রকম জ্বালাতনকারী প্রাণী তা শহর-গ্রামের বহু মানুষই জানেন। ঘরে ঘরে লেপ-তোষক কাটছে, কাপড় কাটছে, বইপত্র কাটে, তা এমনকি টেলিফোন বা ইন্টারনেটের তারও কাটে! এদের ব্যবহার সম্পর্কে স্মরণ করা যায় বিখ্যাত সেই কবিতার কয়েকটি চরণ : ‘উই আর ইঁদুরের দেখ ব্যবহার/ যাহা পায় তাহা কেটে করে ছারখার/ কাঠ কাটে বস্ত্র কাটে, কাটে সমুদয়/ সুন্দর সুন্দর দ্রব্য কেটে করে ক্ষয়।’ এই হচ্ছে ইঁদুরের আচরণ। নিউ জলপাইগুড়ির সেই ইঁদুরগুলোর কী হয়েছে জানা যায়নি। বিড়াল থেরাপি ব্যর্থ হওয়ার পর ওখানে অন্য কোন থেরাপি প্রয়োগ হয়েছে কিনা তাও জানা যায়নি। পুলিশের দফতর যেহেতু, তখন একদিন তাদের আক্কেল হবে, ভয় পাবেই।
×