ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিনা বিচারে জেলে ১৬ বছর!

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১১ নভেম্বর ২০১৬

বিনা বিচারে জেলে ১৬ বছর!

বিনা বিচারে বছরের পর বছর ধরে কারাগারে বন্দী জীবন কাটানোর কথা পাওয়া যায় গল্প-উপন্যাসে। জনপ্রিয় বাংলা ছায়াছবি ‘সবার উপরে’ এর সম্যক প্রমাণ মেলে। সময়ে সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারেও মিলেছে অনুরূপ উদাহরণ। হতভাগ্য মোঃ শিপন এরকম একজন। দীর্ঘ ২২ বছর আগের অনিষ্পন্ন একটি হত্যা মামলায় ১৬ বছর ধরে আটক আছেন তিনি কাশিমপুর কারাগারে। এতদিন প্রায় সবার অগোচরে ছিল বিষয়টি। ২৬ অক্টোবর বেসরকারী একটি টিভি চ্যানেল মোঃ শিপনের ঘটনাটি নিয়ে একটি সংবাদ প্রচার করে। ৩০ অক্টোবর ওই প্রতিবেদনের অনুলিখন ও সিডি আদালতের গোচরে আনেন সুপ্রীমকোর্টের এক আইনজীবী। অতঃপর ওই প্রতিবেদন মানবিক বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট উক্ত হত্যা মামলার নথি তলব করে। ৮ নবেম্বর শুনানি শেষে হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই হত্যা মামলা নিষ্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেয় মোঃ শিপনকে। তদুপরি উচ্চ আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি করারও নির্দেশ দেয়া হয় ঢাকার বিচারিক আদালতকে। এর পাশাপাশি জামিননামা দাখিলসহ শিপনকে সব ধরনের আইনগত সহায়তা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ঢাকার লিগ্যাল এইড কার্যালয়কে। আদালত মোঃ শিপনের জামিন আদেশের শুনানিতে যা বলেছে, তাও সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। আদালত বলেছে, সংবিধান অনুসারে দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ব্যর্থ হয়েছেন। এর দায় এড়াতে পারে না বিচার বিভাগও। এটি সবার জন্যই লজ্জাকর। নথিপত্রে দেখা যায়, মাহতাব নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ১৯৯৪ সালের ২৫ অক্টোবর সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা হয়। পরের বছর ১০ মে ৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলার ২ নম্বর আসামি মোঃ শিপন ২০০০ সালের ৭ নবেম্বর গ্রেফতার হন। এরপর থেকে তিনি আছেন কারাগারে। আদালত ২০০২ সালের ২৪ মার্চ অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিরুদ্ধে। এ পর্যন্ত মাত্র দু’জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। উচ্চ আদালতকে মোঃ শিপন জানান, ঘটনার পর বাদী তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। এরপর তার বাঁ হাতের কব্জি কেটে দেয়। বিচারিক আদালতে শিপনের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিল না। জামিন পাওয়ার পর তিনি কোথায় যাবেন তাও জানেন না। কেননা দীর্ঘ কারাবাসে তার মা-বাবা ও বোনেরা কে কোথায় আছে, তিনি জানেন না। সে অবস্থায় উচ্চ আদালত কারাগার থেকে বেরুনোর পর মোঃ শিপনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সামাজিক পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসক ও সমাজকল্যাণ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। এ নিয়ে আমরা কোন মন্তব্য করতে চাই না। মোট ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত দু’জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে মোঃ শিপন সুবিচার তথা ন্যায়বিচার পাবে বলেই প্রত্যাশা। এটি কোন সাধারণ মামলা নয়; একটি হত্যা মামলা। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা অনিষ্পন্ন থাকা প্রত্যাশিত নয়। অবশ্য সারাদেশের সর্বস্তরের আদালতগুলোতে অগণিত মামলা জট এবং বিচারক ও এজলাসের সমস্যা-সঙ্কটের বিষয়টিও সুবিদিত। আদালতপাড়ায় একটি কথা খুব প্রচলিত আছে, ‘জাস্টিজ ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’। বিলম্বিত বিচার বিচার না পাওয়ার শামিল। সে অবস্থায় দীর্ঘদিন থেকে ন্যায় বিচার বঞ্চিতদের হাহাকার ও প্রতিকার অবসানই প্রত্যাশিত।
×