ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পেশাদার সার্কিটে খেলার স্বপ্ন দেখেন মুসকান

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১০ নভেম্বর ২০১৬

পেশাদার সার্কিটে খেলার স্বপ্ন দেখেন মুসকান

রুমেল খান ॥ হিন্দি শব্দ ‘মুসকান’। এই শব্দের অর্থ হাসিমুখ। ভারতের ষোড়শী সুদর্শনা মুসকান রঞ্জনের চেহারায় প্রায়ই খেলে যায় হাসির ফোয়ারা। ‘ওয়ালটন আন্তর্জাতিক জুনিয়র টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে (অনুর্ধ-১৮) অংশ নিতে সম্ভাবনাময়ী এই টেনিস খেলোয়াড় এখন ঢাকায়। বুধবার জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপ হয় মুসকানের। মুসকানের জন্ম লক্ষেèৗতে হলেও এখন বাস করে ব্যাঙ্গালোরে। পড়াশুনা করছে দ্বাদশ শ্রেণীতে। টেনিস খেলায় আসার গল্পটা তার এরকম, ‘বয়স যখন আট, তখন থেকেই টেনিস খেলতে শুরু করি। যদিও শুরুতে এই খেলাটি তেমন পছন্দ করতাম না। তাছাড়া খেলাটি অনেক পরিশ্রমেরও। আমার পছন্দ ছিল নাচ। সব ধরনের নাচই করতাম। আমার দাদা ছিলেন ক্রীড়াপাগল মানুষ। তিনি টেনিসও খেলতেন। তিনিই আমাকে টেনিসে আগ্রহী করে তোলেন। খেলাটি সম্পর্কে সবকিছু শেখান। তখন আমি টেনিস খেলতে আগ্রহী হই। এভাবেই আমার টেনিস খেলাকে বেছে নেয়া। আমার মা কবিতা রঞ্জনও ছোট বাচ্চাদের খেলা শেখান।’ টেনিসে হাতেখড়ি হলো ঠিকই, তবে মুসকানের দরকার ছিল আরও উন্নত কোচিং। এজন্য তাকে মুম্বাইয়ের একটি টেনিস একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। সেখানে তার প্রথম কোচ ছিলেন বাজি রানী। এখন সে ব্যাঙ্গালোরের পারফর্মেন্স টেনিস এ্যান্ড একাডেমিতে আছে। মুসকানের টেনিস আদর্শ দু’জন। পুরুষদের মধ্যে সুইজারল্যান্ডের রজার ফেদেরার। আর মহিলাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেরেনা উইলিয়ামস। তার খেলার বৈশিষ্ট্য কী? মুসকানের জবাব, আগ্রাসী ভঙ্গিতেই খেলতে বেশি পছন্দ করি। ফোরহ্যান্ডে হিট করে থাকি। পেছন থেকে দৌড়ে এসে স্ট্রোক খেলে ফিনিশ করাই আমার স্টাইল। ক্যারিয়ারের স্মরণীয় ম্যাচ? ২০১২ সাল। ব্যাঙ্গালোরে একটি লোকাল টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলছি। প্রতিপক্ষ আমার চেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড়। তারপরও তাকে হারিয়ে শিরোপা জিতি। সেটাই ছিল আমার ক্যারিয়ারের প্রথম কোন ট্রফি জেতা। আরেকটি স্মরণীয় ম্যাচ হচ্ছে ২০১৩ সালে। আরেকটি টুর্নামেন্টে আমার চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা শিবানীকে (র‌্যাঙ্কিং ২) হারিয়ে দিই। মুসকানের স্মৃতিচারণ। এই প্রথম বাংলাদেশের ঢাকায় এসেছে মুসকান। সঙ্গে আছেন তার মা। খুব ভাল লাগছে সবকিছু। এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মেয়েদের খেলাও দেখেছে সে। তাদের খেলার মূল্যায়ন করতে বললে মুসকানের ভাষ্য, তাদের খেলার অবকাঠামো আরও উন্নত করতে হবে, আরও ভাল উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে হবে, নতুন টেকনিক শিখতে হবে, ফিটনেসের উন্নতি ঘটাতে হবে, বেশি বেশি খেলতে হবে দেশের বাইরে গিয়ে। একক-দ্বৈত মিলিয়ে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫টি ট্রফি জেতা মুসকান দ্বৈতের চেয়ে এককে খেলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। টেনিস খেলার সুবাদে এ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে হয়েছে তাকে। টেনিস ছাড়া তার অন্য প্রিয় খেলা ফুটবল। প্রায়ই আমি গোলরক্ষক অথবা আক্রমণভাগে খেলে থাকি। ৬০ আইটিএফ র‌্যাঙ্কিংধারী মুসকানের সহাস্য উত্তর। বাবা বিনীত রঞ্জন ব্যবসা নিয়ে প্রচ- ব্যস্ত। মা-ই মেয়েকে বেশি সময় দেন। ফলে তার কাছ থেকেই বেশি উৎসাহ পেয়ে থাকে মুসকান। মঙ্গলবারের ম্যাচে টুর্নামেন্টের শীর্ষ বাছাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাটি লাফ্রান্সের কাছে ৬-০, ৬-৪ গেমে হেরে যায় মুসকান। প্রথম সেটে কোন প্রতিরোধ গড়তে না পারলেও দ্বিতীয় সেটে একপর্যায়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল মুসকান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে যায়। কি হয়েছিল? প্রথম সেটে আমি বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে খেলব। কিছুটা চাপে ছিলাম। দ্বিতীয় সেটে আমার কোচ আমাকে খেলাটা উপভোগ করতে বলেন। এভাবেই খেলে কিছু পয়েন্ট কুড়িয়ে নিই। কিন্তু শেষের দিকে এই ছন্দটা আর ধরে রাখতে পারিনি।’ ভবিষ্যত লক্ষ্য? আমি ধাপে ধাপে এগুতে চাই। এখন আমি যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ টেনিস খেলি নিয়মিত। তারপর জুনিয়র পর্যায়ে আরও খেলে খুব শীঘ্রই পেশাদার সার্কিটে খেলা শুরু করার স্বপ্ন দেখি। এছাড়া আগামীতে বিশ্বের সেরা পাঁচ খেলোয়াড়ের একজন হতে চাই। জিততে চাই উইম্বল্ডন ওপেনের শিরোপা। হতে চাই সানিয়া মির্জার মতো। সানিয়ার সঙ্গে কখনও দেখা হয়েছে? হয়েছে মানে, আমি তো তার বিরুদ্ধে দ্বৈতে খেলেছি। তবে সেটা কোন প্রতিযোগিতামূলক কোন আসরে নয়, প্রদর্শনী ম্যাচে। তিনি আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন খেলার উন্নতির জন্য। মুসকানের একটি ছোট বোন আছে। সানস্মৃতি রঞ্জন। সেও আমার মতো টেনিস খেলে। এই মুহূর্তে সে ভারতের শীর্ষ ৩০ খেলোয়াড়ের মধ্যে আছে।’ এখন দেখার বিষয়, পেশাদার টেনিস সার্কিটে যাত্রা শুরুর সুনীল স্বপ্ন আগামীতে পূরণ হয় কি না মুসকানের।
×