ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ১৪ দলের সমন্বয়ক নাসিম

সরকারকে বিব্রত করতে নাসিরনগরে মন্দিও বাড়িঘরে ভাংচুর

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১০ নভেম্বর ২০১৬

সরকারকে বিব্রত করতে নাসিরনগরে মন্দিও বাড়িঘরে ভাংচুর

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির-বাড়িঘরে হামলাকারীরা যেই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না। সকল অপরাধীর বিচার করা হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে বিব্রত করতেই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ লুটেরা খুনীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে তা-বের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্থানীয় গৌরমন্দিরে ১৪ দল আয়োজিত সভায় এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা করে দুর্বৃত্তের দল নাসিরনগরের মানুষকে কলঙ্কিত করেছে। এখানকার মন্ত্রীকে ছোট করে দিয়েছে। যেসব মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো মেরামত করে দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদেরও সহায়তা করা হবে। আনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্বে অবহেলা করলে কারও চাকরি থাকবে না। শেখ হাসিনার নেতত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া আটকাতেই একের পর এক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তবে আমরা জঙ্গীদের ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছি। তিনি এ হামলার জন্য জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের মন্দির পুনর্নিমাণসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, সরকার যখন জঙ্গীবাদবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে, যুদ্ধপরাধীদের বিচার করছে, সেই সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্যই নাসিরনগরে এ হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা কেউ ছাড় পাবে না। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, নাসিরনগরে সংখ্যালঘুদের ওপর যারা হামলা করেছে তাদের একচুলও ছাড় দেয়া হবে না। বাংলাদেশ যখন বিদেশের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুনাম অর্জন করছে ঠিক সেই সময় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য আগুনসন্ত্রাসী খালেদা জিয়ার দোসররাই এ কাজ করেছে। ফলে এ হামলায় যারা জড়িত তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। শেখ হাসিনার সরকার এদেশের ওপর একটি অসাম্প্রদায়িকতার ছাতা ধরে রেখেছেন। ফলে যারা এ অসাম্প্রদায়িকতা নষ্ট করতে চায় তারাই হামলা করেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, পার্শ্ববর্তী উপজেলা মাধবপুর থেকে ১৪ ট্রাক বহিরাগত লোক এনে যারা হামলা করেছিল তাদের শনাক্ত করতে পারলেই আসল রহস্য বের হয়ে যাবে। জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের সভাপতিত্বে ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপির পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, সাবেক মন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, অধ্যাপক ড. প্রাণ গোপাল দত্ত, অসীম কুমার উকিল, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, বাসদের রেজানুর রশীদ খান, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ মুক্তাকিন বিল্লাহ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, এসকে সিকদার, ড. অসিত বরণ রায় প্রমুখ। সভায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নাসিরনগরে জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ ॥ জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে দেশের সংখ্যালঘুদের জীবনের নিরাপত্তা ছিল। ওই সময়ে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে অনেক কাজ হয়েছে। নাসিরনগরের ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত। এ কাজের সঙ্গে জড়িত অপরাধী যেই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ ঘটনার বিচার হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বুধবার দুপুর একটার দিকে নাসিরনগরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে এসে স্থানীয় গৌরমন্দিরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দকে নাসিরনগরের হামলার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে প্রশাসনকে সহায়তা করার অনুরোধ জানান। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তিন লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন। এছাড়া অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত সরকারী সাহায্য দেয়ার আহ্বান জানান। এর আগে দুপুর ১২টায় রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে জাপার একটি প্রতিনিধি দল নাসিরনগরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও জাপার ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা, এরশাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টা সুনীল শুভ রায়, উপদেষ্টা কাজী মামুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফয়সাল ইসলাম, যুগ্মমহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ।
×