ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরায় ১০ টাকার চাল নিয়ে চালবাজি

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৯ নভেম্বর ২০১৬

সাতক্ষীরায় ১০ টাকার চাল নিয়ে চালবাজি

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ কাশিমাড়ী আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হাই। ভাগ্যবান তিনি। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকার চালের কার্ড পেয়েছেন তিনি। তার কার্ড নম্বর-১২০৩। শুধু আব্দুল হাই নয়, এই কার্ড পেয়েছেন কাশিমাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আব্দুর রউফের ভাই ঘের ব্যবসায়ী হান্নান, সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শাজাহান ও ঘের ব্যবসায়ী হুমায়ুন। এছাড়া অসংখ্য নাশকতা মামলার আসামি, কোটিপতির ছেলে আক্তার ফারুকের স্ত্রী শামিমা আক্তার রানীকেও দেয়া হয়েছে কার্ড। এভাবেই সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকার চাল নিয়ে দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চালবাজির অভিযোগ উঠেছে যুদ্ধাপরাধী মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পালিত ছেলে বলে পরিচয় দেয়া সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কাশিমাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে। এই আব্দুর রউফ হচ্ছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতাকারী পিস কমিটির সদস্য মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে এবং সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দারের ফুফাত ভাই। জামায়াতের কোন পদে তিনি না থাকলেও তার কার্যক্রম স্বাধীনতাবিরোধী। আর এ কারণেই নির্বাচিত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ইউপি সদস্যরা পড়েছেন বিপাকে। তার এই অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কাশিমাড়ী ইউপির চার সদস্য। মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে লিখিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান এসএম আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে অনিয়মের তথ্যগুলো তুলে ধরে ১০ টাকার চালের কার্ডধারীদের তালিকা তৈরিতে সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে ধরে সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কাশিমাড়ীর ৭নং ওয়ার্ড সদস্য শাহাবাজ আলী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কাশিমাড়ী ইউনিয়নে দুস্থদের বাদ দিয়ে ধনী, সম্পদশালী, চাকরিজীবী ও চেয়ারম্যানের আত্মীয়স্বজনদের ১০ টাকার চালের কার্ড দেয়া হয়েছে। এ তালিকায় যেমন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম রয়েছে, তেমনি নাশকতা মামলার আসামি, বন্দুকযুদ্ধে নিহতের স্ত্রীকেও কার্ড দেয়া হয়েছে। বাদ যায়নি চেয়ারম্যানের ভাই, ভগ্নিপতিরাও। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ছয় থেকে সাত শ’ ধনী মানুষ ১০ টাকার চালের কার্ড পেয়েছেন। অসংখ্য ভুয়া কার্ডও রয়েছে। ওই সব ভুয়া কার্ডের চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত ইউপি নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পালিত ছেলে বলে পরিচয় দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন আব্দুর রউফ। এলাকার সংসদ সদস্যের ফুফাত ভাই হওয়ায় সুবিধা পান মাঠপর্যায়ে। এরপর নির্বাচনে জয়লাভ করে অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে থাকেন আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর। নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের চারজন ইউপি সদস্যকেও পরিষদের সকল কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। সংশ্লিষ্টরা প্রতিবাদ করলেও কোন কাজ হয় না। বরং হয়রানির মাত্রা বাড়তে থাকে। এ সময় আরও বলা হয়, চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ সংসদ সদস্যের ভাই হওয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে গত ঈদ-উল-ফিতরে দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত ৬৬৮০ ইউনিট চালের মধ্যে চার হাজার ইউনিট বিতরণ করেছেন। একই সময় প্রতি ইউনিটে ২০ কেজির পরিবর্তে চাল দিয়েছেন ১২ থেকে ১৩ কেজি করে। বাকি চাল আত্মসাত করা হয়েছে। ঈদ-উল-আযহায় ৩৭০০ ইউনিটে ১০ কেজি করে চাল বিতরণের ক্ষেত্রে দেয়া হয়েছে ৫ থেকে ৬ কেজি করে। এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করেছে জামায়াতের রোকন সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর রওশন আরা বিথি। সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতবাজ ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে তাকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়েছে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- কাশিমাড়ীর ৮নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সবুর মোল্লা, মহিলা সদস্য পাপিয়া হক ও মহিলা সদস্য সীতা রানী বৈদ্য। এ ব্যাপারে কাশিমাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আব্দুর রউফের সাথে মোবাইলে (০১৭১৫৮৩৩৩০৮) যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
×