ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত কমিশন গঠনের ছয় বছর পরও বিচার পায়নি নির্যাতিতরা

বিএনপি-জামায়াত আমলে শুরু সংখ্যালঘু নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৯ নভেম্বর ২০১৬

বিএনপি-জামায়াত আমলে শুরু সংখ্যালঘু নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে স্বাধীন দেশে সর্বপ্রথম শুরু হয় সংখ্যালঘু নির্যাতন। ওই সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট ক্যাডারদের হামলা, মামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, খুন ও লুটের ঘটনা ছিল বহুল আলোচিত ঘটনা। সূত্রমতে, ওই সময় বিএনপি ও জামায়াত ক্যাডারদের তা-ব ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পাক সেনাদেরও হার মানিয়েছিল। সেই সন্ত্রাসীরা এখনও সংখ্যালঘু নির্যাতনে তৎপর রয়েছে। ওইসব সন্ত্রাসীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের তকমা লাগিয়ে এখন সংখ্যালঘু কিংবা আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দমনে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা। সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ের নির্মম নির্যাতনের ঘটনাগুলো তদন্তে বর্তমান সরকারের সময় গঠন করা হয়েছিল ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত কমিশন’। ওই কমিশনের কাছে সরাসরি ঘটনার বর্ণনা ও লিখিত অভিযোগ দায়ের করার ছয় বছর পরও কোন বিচার পাননি নির্যাতিতরা। ফলে সারাদেশের ন্যায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক রয়েই গেছে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে সরকারের গঠিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত কমিশন। এ কারণেই একের পর এক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সূত্রমতে, ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ শাহাবুদ্দিন, সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনোয়ার হোসেন আখন্দ, সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মীর শহীদুল ইসলাম বরিশাল নগরীসহ জেলার গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও বানারীপাড়াসহ কয়েকটি উপজেলা পরিদর্শন করে নির্যাতিতদের কাছ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি ও জামায়াত ক্যাডারদের নির্মম নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা শোনেন লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেছিলেন। সূত্রমতে, ২০১২ সালে কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্ব স্ব থানাকে অভিযোগের তদন্ত ও মামলা রুজু করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ওই সময় থানা থেকে মামলা রুজু তো হয়ইনি, বরং থানা পুলিশ তদন্তে গিয়ে ২০০১ সালের হামলাকারীদের কাছেই হামলার কাহিনী শুনতে চাওয়ায় ওই সময় এলাকায় ফের উত্তেজনা দেখা দেয়। কয়েক মাস পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলার কয়েকটি থানা পুলিশ নিজ উদ্যোগে মামলা রুজু করে কয়েকজন হামলাকারীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দদের অভিযোগ, মামলার সঠিক তদারকি না করার কারণেই আইনের ফাঁকফোকর পেরিয়ে কয়েকদিনের ব্যবধানেই গ্রেফতারকৃতরা জামিনে বেরিয়ে যাওয়ায় এক প্রকার ধামাচাপা পড়ে যায় তদন্ত কমিশনের সকল কর্মকা-। পরবর্তীতে বিএনপি ও জামায়াতের ২০০১ সালের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কৌশলে নেতৃত্বদানকারী স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করার কারণেই লোমহর্ষক ঘটনাগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়। ওই সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে কৌশলে এখন সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নিধনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলে ঘাপটি মেরে থাকা ওইসব হাইব্রিড নেতারা বর্তমানে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে ৫ ফেব্রুয়ারির পেট্রোলবোমা হামলার পর জঙ্গী হামলায় ব্যর্থ হয়ে এখন দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দলীয়ভাবে কোণঠাসা করে রাতের আঁধারে নিধন করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় জেলার বানারীপাড়া, উজিরপুর ও ঝালকাঠীর পোনাবালিয়া এলাকার মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাংচুরের পাশাপাশি উজিরপুর পৌর সদরের কুমারবাড়ি বাজারের শীতলা মন্দির, সার্বজনীন দুর্গা ও কালী মন্দির, মুক্তিযোদ্ধার সমাধীসহ প্রায় ২০টি সংখ্যালঘু পরিবারকে উচ্ছেদের জন্য ওই চক্রটি মরিয়া হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলের দুর্দিনের একমাত্র কা-ারি মুক্তিযোদ্ধা কালিয়া দমন গুহর কনিষ্ঠ পুত্র যুবলীগ নেতা সলিল গুহ পিন্টুকে হত্যার উদ্দেশ্যে দুইবার প্রকাশ্যে ও রাতের আঁধারে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে হাইব্রিড আওয়ামী লীগ কর্মীরা।
×