ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে অনিয়ম ও দুর্নীতি

১২ হাজার টন চাল ফেরত

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৮ নভেম্বর ২০১৬

১২ হাজার টন চাল ফেরত

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ ॥ অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ গাফিলতির কারণে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দের চাল ফেরত যাচ্ছে প্রতি মাসে। গত দুই মাসে ময়মনসিংহে প্রায় ১২ হাজার টন চাল ফেরত গেছে। এতে করে বঞ্চিত হয়েছে ৪০০ কার্ডধারী হতদরিদ্র মানুষ। সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়ায় এখনও শুরু করা যায়নি সরকারের এ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী। একই অবস্থা নান্দাইলেও। ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের কারসাজির কারণে বরাদ্দের চাল পাচ্ছে না তালিকাভুক্ত কার্ডধারী। তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নাম ছাড়াও সচ্ছল পরিবারের সদস্যসহ একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নামে রয়েছে অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসন, খাদ্য বিভাগ, ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ও ডিলারদের কারসাজির কারণে ময়মনসিংহে হতদরিদ্রদের চাল নিয়ে নয়ছয় বন্ধ হচ্ছে না। ফলে শুরু থেকেই সরকারের এ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর সুফল পাচ্ছে না হতদরিদ্ররা। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাকডহর ইউনিয়নের কিসমত গ্রামের গৃহবধূ আফরোজার নাম রয়েছে হতদরিদ্রদের তালিকায়। দিনমজুর হেলালের স্ত্রী আফরোজা অথচ গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চালুর পর দুই মাসেও কোন চাল পায়নি আফরোজা। একই গ্রামের ২৯৪২ নম্বর কার্ডধারী হতদরিদ্রের তালিকাভুক্ত জালাল উদ্দিনের অভিযোগ, চেয়ারম্যান মেম্বার ও ডিলারের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও মেলেনি ১০ টাকা কেজি দরের চাল। হতদরিদ্র তালিকভুক্ত ২৯৪৬ নম্বর কার্ডধারী কিসমত গ্রামের আব্দুস সালামের অভিযোগ, তালিকাভুক্ত কার্ডধারীদের চাল তুলে আত্মসাত করেছে চেয়ারম্যান মেম্বার। কেবল তাই নয়, মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত করে কার্ড দেখিয়ে বরাদ্দের চাল তুলে নেয়া হচ্ছে। খাকডহর ইউনিয়নে এসব অনিয়ম দুর্নীতির কারণে হতদরিদ্ররা চাল পাচ্ছে না অভিযোগ করে সালাম বলেন, এসব অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত প্রয়োজন। খাকডহর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল আলম সোহাগ তালিকা ও কার্ড নিয়ে ভুলভ্রান্তির কথা অকপটে স্বীকার করে জানান, অনিয়মের কারণে চাল বিতরণ বন্ধ রেখে নতুন করে হতদরিদ্রদের তালিকা করা হচ্ছে। তবে চাল বিতরণ নিয়ে অভিযোগ স্বীকার করেননি স্থানীয় ডিলার ইউসুফ আলী। সদর উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক আজাহার আলী তালুকদার জানান, খাকডহর ইউনিয়নে গত সেপ্টেম্বর মাসে ৩৩৬০ হতদরিদ্রের কার্ডের বিপরীতে ১০০ দশমিক আট টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই মাসে ২৬৪ হতদরিদ্রের চাল ফেরত দেখানো হয়। গত অক্টোবর মাসেও ১০০ দশমিক আট টন চাল উত্তোলন করে ডিলার। অথচ অক্টোবর মাসে ফেরত দেখানো হয়েছে মাত্র ১৭ জনের চাল! অভিযোগ রয়েছে খাডহর ইউনিয়নে ৩৩৬০ হতদরিদ্রের কার্ডের বিপরীতে চাল উত্তোলন করা হলেও সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ১৭২০ হতদরিদ্র চাল পায়নি। নাম প্রকাশ করা হবে না শর্তে এক ইউপি মেম্বার জানান, খাকডহরে ৩৩৬০ হতদরিদ্রের তালিকার ১ থেকে ২৫০০ নম্বর পর্যন্ত কার্ডধারীদের চাল দেয়া হয়েছে। বাকি ৮৬০ হতদরিদ্রকে কোন চাল দেয়া হয়নি বলে দাবি এই ইউপি মেম্বারের। তিনিও দুদক তদন্ত দাবি করেন। সদর উপজেলার বোররচর, দাপুনিয়া, চরনিলক্ষ্মীয়া, চরঈশ্বরদিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের চাল নিয়েও এরকম নয়ছয় করার অভিযোগ রয়েছে। বঞ্চিতদের অভিযোগ অনেক ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার স্থানীয় ডিলারদের যোগসাজশ করে তালিকাভুক্ত হতদরিদ্রদের কার্ড নিজেদের পকেটে রেখে বরাদ্দের চাল আত্মসাত করছে। এসব অভিযোগ ইতোমধ্যে ময়মনসিংহের নান্দাইলে ২৪ জনসহ মোট ২৫ জনের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। ভালুকা হালুয়াঘাট নান্দাইল উপজেলার তিন ডিলারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নান্দাইলের খাদ্য কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। তবে হতদরিদ্রদের চাল নিয়ে নয়ছয়ে জড়িত খাদ্য কর্মকর্তা, ডিলার ও চেয়ারম্যান মেম্বারদের অনেকে রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু এই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চলতি নবেম্বরে শেষ হচ্ছে। ময়মনসিংহে তিন লাখ ১০ হাজার ২৮৩ হতদরিদ্রদের জন্য প্রতি মাসে ৯ হাজার ৩০৮ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়।
×