ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে আটক চার নব্য জেএমবির স্বীকারোক্তি

সংখ্যালঘু নির্যাতন করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৬ নভেম্বর ২০১৬

সংখ্যালঘু নির্যাতন করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটে পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের পর অস্ত্রসহ আটক চার নব্য জেএমবি সদস্য আদালতে চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সুযোগে পরিকল্পিতভাবে হামলা, হত্যা, নাশকতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন চালিয়ে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির নতুন পরিকল্পনা নিয়ে তারা (নব্য জেএমবি) কাজ করছে। তাদের মধ্যে আত্মঘাতী সদস্য এবং আইটি বিশেষজ্ঞ রয়েছে। এমনকি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তারা পৃথক সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। শনিবার বিকেলে বাগেরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় এ কথা জানান। গত বুধবার গভীর রাতে শহরের দড়াটানা ব্রিজের নিচে পুলিশের সঙ্গে জেএমবি সদস্যদের গুলি বিনিময়ের পর অস্ত্রসহ চার জেএমবির সদস্য আটকের পর পুলিশ সুপার এসব প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস, সহকারী পুলিশ সুপার জিয়াউল ইসলামসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সুপার বলেন, বাগেরহাট, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর এ পাঁচ জেলা নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির পৃথক ইউনিট বা সাংগঠনিক এলাকা রয়েছে। এ অঞ্চলে তারা দীর্ঘদিন ধরে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। এখানে তাদের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশ ও তবলিগ জামাত তাদের প্রধান টার্গেট ছিল। উল্লেখিত ৫ জেলার মধ্যে বাগেরহাট তাদের নিরাপদ ঘাঁটি। তাদের মূলহোতার আস্তানা ছিল বাগেরহাটে। ২০০৪ সালে বাংলাভাই বাগেরহাটের মোল্লাহাটে আওয়ামী লীগ নেতা ও সংখ্যালঘু সমাজপতি তপন পোদ্দার ও তার পিতাকে খুন করতে এসে বোমা-অস্ত্র-জঙ্গী পোশাকসহ ধরা পড়েছিল। সেই থেকেই এ জেলায় জঙ্গীদের আস্তানা গড়ে ওঠে। তখন গিয়াস উদ্দিন নামে এক জঙ্গী আটক হয়ে গত ১২ বছর যাবত জেলে রয়েছে। কিন্তু তার ছেলে মোরশেদ আলম (২০) পিতার হয়ে জঙ্গী তৎপরতায় যুক্ত হয়। গত বুধবার রাতে ৪ জঙ্গীর মধ্যে সেও রয়েছে বলে পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের সুযোগে এরা এক নেতাকে হত্যা করে অন্য নেতার ওপর দায় চাপিয়ে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করেছিল। আটক ওই ৪ নব্য জেএমবি সদস্য আরও অনেক চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিলেও তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে তা প্রকাশ করতে রাজি হননি এসপি পংকজ রায়। তবে তিনি বলেন, আটক চার জেএমবি সদস্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তাদের নিকট থেকে উদ্ধার হওয়া ডেস্কটপে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের বিরুদ্ধে অশ্লীল প্রচারণার এবং জেএমবির লিফলেট পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, আইসিটি, অস্ত্র আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে কচুয়া থানায় পৃথক চারটি মামলা করা হয়েছে। বাংলাভাইয়ের সঙ্গে কাজ করা এক জেএমবি নেতা আটক এই ৪ জঙ্গীর ‘বড়ভাই’ হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। পুলিশ নব্য জেএমবির এই টিম লিডার বড়ভাই সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়েছে, তাকে আটকের জোর চেষ্টা চলছে। জঙ্গীবাদের শিকড় উপড়ে ফেলার জন্য এবং নাশকতা ও পরিকল্পনাকারীদের আটকে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, গত বুধবার গভীর রাতে বাগেরহাটের দড়াটনা ব্রিজের নিচে গুলি বিনিময়ের পর সাতক্ষীরা জেলা সদরের গড়েরকান্দা গ্রামের জুম্মান আলী সরদারের ছেলে মোঃ মাকসুদুর রহমান ওরফে তোতা (২৪), ইটগাছা গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৬), কদমতলা বাজার এলাকার জঙ্গী গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোরশেদ আলম (২০) ও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের আশরাফুল আলী ফরাজীর ছেলে জহিরুল ইসলাম (২২) অস্ত্রসহ আটক হয়।
×