ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ডিপিডিসি

১৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ॥ আধুনিক বিতরণ ব্যবস্থায় আসছে রাজধানীর বিদ্যুত

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৬ নভেম্বর ২০১৬

১৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ॥ আধুনিক বিতরণ ব্যবস্থায় আসছে রাজধানীর বিদ্যুত

রশিদ মামুন ॥ সরকার বিদ্যুত বিতরণখাতের একক বৃহত প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) রাজধানীর বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে ১৯ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে। চীনের আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় চীনের সরকারী প্রতিষ্ঠান টিবাইন ইলেকট্রিক কোম্পানির কাছ থেকে ডিপিডিসি এসব ক্রয় করবে। বিদ্যুত জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইনে এসব ক্রয় করা হবে। ডিপিডিসি সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকেই ঢাকার বিদ্যুত ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। কাজ শেষ হবে পাঁচ বছর পর। কোম্পানিটি পণ্য সরবরাহের সঙ্গে সঙ্গে কারিগরি সহায়তা দেবে। এখনও ঢাকার বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা যথেষ্ট আধুনিক নয়। কয়েকটি এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন বসানো হলেও অধিকাংশ এলাকায় ওভারহেড লাইন রয়েছে। পুরনো এবং কম ক্ষমতার সাবস্টেশনের কারণেও গ্রাহককে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুত থাকলেও বিতরণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় গ্রাহক প্রায় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ভোগ করেন। বিশেষ করে গ্রীষ্মে সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বর্ষা মৌসুমে একটু মেঘ ডাকলেই বিদ্যুত চলে যায়। অথচ দেশে দেশে আধুনিক বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থায় এক মিনিটের জন্যও বিদ্যুত যায় না। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরে ঢাকার বিদ্যুত ব্যবস্থা উন্নয়নে এক দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়। ডিপিডিসি বলছে, এই ঋণের অর্থেই ঢাকার দুটি এলাকার বিতরণ লাইন চলে যাবে ভূগর্ভে। একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সাবস্টেশনও নির্মাণ করবে ডিপিডিসি। হাতিরঝিলের নান্দনিকতা ফিরিয়ে দিতে এই এলাকা দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচ দিয়ে নেয়া হবে। সংস্থার পরিচালক (প্রকৌশল) রমিজ উদ্দিন সরকার বলেন, ঢাকার হাতিরঝিলের লাইনের পুরোটা চলে যাবে মাটির নিচে আর ধানম-ি এলাকার লাইনও আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি বলেন, ১৪ টি গ্রিড সাবস্টেশন এবং ৩৩/১১ কেভির ৪০টি নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে। এতে এখনের যে বিদ্যুত বিড়ম্বনা তা দূর হবে। এর বাইরে আধুনিক ট্রেনিং সেন্টার এবং কয়েকটি বহুতল ভবন নির্মাণের প্রকল্প রয়েছে। এই ভবনগুলোর নিচে বসানো হবে সাবস্টেশন। বাংলাদেশে যা প্রথম। ডিপিডিসি সূত্র জানায়, অনেক দিন ধরেই বিদ্যুতের লাইনের পাশাপাশি সাবস্টেশনও মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ ধরনের সাবস্টেশনের সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে মাটির উপরের জমি নষ্ট হয় না। বিল্ডিংয়ের নিচে অথবা খেলার মাঠের নিচে এ ধরনের সাবস্টেশন নির্মাণ করা যায়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের সাবস্টেশন রয়েছে। ডিপিডিসির একজন কর্মকর্তা জানান, তারা জাপান এবং মালয়েশিয়ায় এ ধরনের সাবস্টেশন দেখেছেন। বিল্ডিংয়ের আন্ডার গ্রাউন্ডে সাবস্টেশন। উপরে বহুতল ভবনে স্বাভাবিক কাজ হয়। ডিপিডিসি রাজধানীতে যেসব বহুতল ভবন করছে তার সবগুলোর নিচে সাবস্টেশন বসাবে। যাতে সাধারণ মানুষ এতে আতঙ্কিত না হয়। ডিপিডিসি ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুত বিতরণ করে। ডিপিডিসি ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিদ্যুত বিতরণ করলেও তারাই উৎপাদিত বিদ্যুতের ২২ ভাগ বিতরণ করে। প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক রয়েছে কোম্পানির বিতরণ এলাকায়। প্রতিনিয়ত রাজধানী ঢাকা সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে ডিপিডিসির গ্রাহক বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিক না হওয়ায় গ্রাহক দুর্ভোগ লাঘব হচ্ছে না। ডিপিডিসি সূত্র জানায়, মূল প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ ভাগ চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ঋণ নেয়া হচ্ছে ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাকিটা সরকার উন্নয়ন খাত থেকে বরাদ্দ দেবে। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে। ডিপিডিসি বলছে, আগামী সপ্তাহেও চুক্তিটি হতে পারে। তবে এজন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নেয়া হবে। ডিপিডিসি বলছে যেসব সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে সেখানে সাবস্টেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পৃথক জায়গা রাখা হবে। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন সমস্যা না হয়। সারাদেশেই বিতরণ ব্যবস্থায় নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। সরকার বিদ্যুত উৎপাদনে যে গুরুত্ব দিয়েছে তা শুরু থেকেই বিতরণে দেয়া হয়নি। কোন কোন এলাকায় বিতরণ ব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতির কারণে বিদ্যুতের ভোগান্তি তীব্র আকার ধারণ করেছে। সরকার বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিছু এলাকা শূন্য লোডশেডিং এর আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু বিতরণ ব্যবস্থা পুরনো হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুত বিভাগ ঢাকার বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়। এজন্য এর আগে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে ঢাকার বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সাধারণত চীনের এক্সিম ব্যাংক এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে লাইবরসহ এক দশমিক ৫ থেকে ২ ভাগের মধ্যে সুদ নিয়ে থাকে। চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ পরিশোধের সময় এবং গ্রেস পিরিয়ড এখনও ঠিক হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। ডিপিডিসির একজন কর্মকর্তা জানান, আধুনিকায়নের এসব কাজ শেষ হওয়ার পর ঢাকাকে জিরো লোডশেডিং ঘোষণা করা যাবে। এখনও চিন্তা করলে বিষয়টি স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু আমরা সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে কাজ করছি।
×