ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

চোলাইমদে মেশাচ্ছে পশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত অক্সভেট

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৬ নভেম্বর ২০১৬

চোলাইমদে মেশাচ্ছে পশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত অক্সভেট

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী অঞ্চলে হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবার পাশাপাশি চোলাইমদের (দেশীয় তৈরি মদ) কারবার বেড়েছে। এসব চোলাইমদ তৈরিতে ইথাইল এ্যালকোহলের সঙ্গে পিরিডিন জাতীয় জৈবখার, মিথানল, ইউরিয়া, নিশাদল, বাখরবড়ি, এনজেল পাউডার ও গুলের মতো ক্ষতিকর পদার্থের ব্যবহার দীর্ঘদিনের। তবে হালে এ মদের আসক্তি বাড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে গবাদি পশুর জন্য তৈরি এ্যান্টিবায়োটিক ‘অক্সভেট’। মদে নেশার মাত্রা বাড়াতে পশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে চোলাইমদ উৎপাদকরা। আর এ সব চোলাইমদ পানে মাঝে মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন মাদকাসক্তরা। ফলে চরম হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। জানা গেছে, শুধু চলতি বছর জেলায় চোলাইমদ পানে ১২ জনের মৃত্যুর হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে চারঘাট উপজেলায় ৮, অক্টোবরে তানোরে ১ ও দুর্গাপূজায় মহানগরীতে ৩ জনের মৃত্যু হয়। এদের সবাই চোলাইমদ পান করেছিলেন। সূত্রমতে, চোলাইমদ ব্যবসায়ীরা চুলার আগুনে ভাত ফুটায়। রীতিমতো পচা ভাত ফুটানো হয় যে পাতিলে ওই পালিতের উল্টো অংশে আরও একটি পাতিল উল্টোভাবে বসিয়ে সংগ্রহ করা হয় বাষ্প। তা থেকেই তৈরি হয় চোলাইমদ। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এ মদ সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় এবং কদরও বেশি। বিভিন্ন গ্রামে এমন দৃশ্য প্রায় সময় চোখে পড়ে। মদ এমনিতেই শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। তার উপরে নেশার মাত্রা বাড়াতে রাসায়নিক দ্রব্যের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে মুরগি ও পশুপাখির ওষুধ। ফলে ক্রমশই বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা। যোগ হচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এ সব ক্ষতিকর রাসায়নিক শরীরে ঢুকলে অসুস্থতা স্বাভাবিক। চোখ, যকৃতের অসুখ থেকে ক্যান্সারসহ যে কোন ভয়ঙ্কর রোগই সহজেই শরীরে অনুপ্রবেশ করতে পারে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে মৃত্যু হতে পারে। মিথানল চোখের দৃষ্টি নষ্ট করে দেয়। আর গবাদি পশুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত অক্সভেট এ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট মানব শরীরে ঢুকে কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। জানা গেছে, জেলার চারঘাট, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাগমারা, পবা, মোহনপুর, তানোর, গোদাগাড়ী উপজেলায় হরহামাশেই পাওয়া যাচ্ছে এসব চোলাইমদ। বিশেষ করে তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় আদিবাসী পল্লীগুলোতে চোলাইমদ বেশি তৈরি হয়। তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার একাধিক চোলাইমদ কারবারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মদের আকর্ষণ বাড়াতে সম্প্রতি তারা মুরগি-পশুপাখির ব্যবহত অক্সভেট ওষুধ মেশাচ্ছেন। তাতে চোলাইমদ খাওয়ার পর অল্প সময়েই নেশায় বুঁদ হয়ে যাচ্ছেন আসক্তরা। নেশার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায়, বাড়ছে খদ্দের সংখ্যাও। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার পশু চিকিৎসক ডাঃ সাইফুল ইসলাম জানান, অক্সভেট হচ্ছে গবাদি পশু চিকিৎসার উচ্চ মাত্রার এ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট। গবাদি পশু যখন ঝিম ধরে নাজেহাল হয়ে পড়ে ঠিক তখনই তাদের খাওয়ানো হয়ে থাকে। এ ওষুধ শুধু গবাদি পশু শোষণ ক্ষমতা রাখে। এটি মানব শরীরে প্রবেশ করলে কয়েক মাসের মধ্যে কিডনিকে ড্যামেজ করে দিতে পারে এবং তার মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
×