ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

উত্থান-পতন ভুলে স্বরূপে ফিরতে চাই ॥ মুশফিক

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৫ নভেম্বর ২০১৬

উত্থান-পতন ভুলে স্বরূপে ফিরতে চাই ॥ মুশফিক

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দারুণ এক বিজয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানীয় কোন দলের বিরুদ্ধে এই প্রথম এমন একটি জয় এসেছে মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে। এ কারণে বেশ উৎফুল্ল আর ফুরফুরে মেজাজেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। বিপিএলে সর্বাধিক ৩৬.১৩ গড়ে ৮৩১ রান করলেও আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে বেশ বাজে সময় চলছে মুশফিকের। দেশের পক্ষে সর্বাধিক ৫৭ টি২০ খেললেও এখন পর্যন্ত একটিই ফিফটি করা মুশফিক চরমভাবে ব্যর্থ গত দেড় বছর ধরে। তবে বিধ্বংসী ওপেনার তামিম ইকবাল ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা দাবি করেছেন মুশফিকই দেশসেরা টি২০ ব্যাটসম্যান। মুশফিক মনে করেন ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন আসতেই পারে। এবার সেসব ভুলে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চান। প্রত্যয় জানালেন কঠোর পরিশ্রম করে স্বরূপে ফিরে আসার। শুক্রবার সকালে অনুশীলনের ফাঁকে বরিশাল বুলসের নেতৃত্বে থাকা মুশফিক এসব কথা বলেন। গত আসরে সিলেট সুপারস্টারসের নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিক। নিজে ব্যাট হাতে খুব বেশি ভাল না করতে পারলেও দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের চেয়ে সেরা পারফর্মার ছিলেন। একাই লড়াই করেছেন। এবার সিলেট নেই, বরিশাল বুলসে গেছেন মুশফিক। তবে ঠিকানা পরিবর্তন হলেও নিজের লক্ষ্যটা ভোলেননি মুশফিক। তিনি বলেন, ‘যদিও মানুষ রেকর্ডের জন্য খেলে না, তবে সত্যি বলতে কি আমি যত বেশি রান করব দলের অবশ্যই উপকারে আসবে। আমার নিজের কিছু লক্ষ্য আছে, চেষ্টা করব এ বছর যেন ভাল খেলতে পারি এবং বরিশাল বুলসকে যেন অল দ্য ওয়ে নিয়ে যেতে পারি।’ বিপিএল আসরটা ব্যক্তিগতভাবে মুশফিকের জন্য বেশ পয়মন্ত। দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারেননি কখনও, তবে তার ব্যাট থেকে রান এসেছে প্রচুর। আগের তিনটি আসরে সবমিলিয়ে ৩৪ ম্যাচ খেলেছেন। মাত্র ৫ হাফসেঞ্চুরি করলেও সবসময়ই রানের মধ্যে ছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে তেমন সুবিধা করতে পারেননি কোন সময়ই। টেস্ট ক্রিকেট ব্যতীত ক্ষুদ্র ফরমেটের ক্রিকেটেই (ওয়ানডে ও টি২০) তিনি বেশ ব্যর্থ হয়েছেন তিনি ব্যাট হাতে। বিশেষ করে এ বছর মার্চে ভারতে অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপে মুশফিক ছিলেন চরমভাবে ব্যর্থ। বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহ দেখিয়েছেন তিনিই এখন সবচেয়ে বড় স্ট্রোক মেকার। স্বভাবজাত আক্রমণাত্মক মেজাজ নিয়ে তামিম তো ছিলেনই। তবে তামিম কিংবা মাহমুদুল্লাহ দু’জনই জোর দাবি করে সে সময় বলেন, ‘টি২০ ক্রিকেটে আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক। হয়তো এখন কিছুটা খারাপ সময় যাচ্ছে। কিন্তু তার মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান নেই।’ এর প্রমাণও দেখিয়েছেন মুশফিক। ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২৬ বলে অপরাজিত ৪১, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পাল্লেকেলেতে ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ ২৯ বলে ৩৯, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মিরপুরে ২০১৩ সালের ৬ নবেম্বর ২৯ বলে ৫০ এবং ১ এপ্রিল ২০১৪ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মিরপুরে ৩৬ বলে ৪৭ রান করেন। এ কয়েকটিই তার টি২০ ক্রিকেটে সেরা ইনিংস। আর ফিফটি মাত্র ওই একটিই। সর্বশেষ ৪৭ রানের ইনিংস খেলার পর ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু করে ২৬ মার্চ ২০১৬ পর্যন্ত ১৭ ইনিংসে ব্যাট করেছেন, একবারও ৩০ রান ছুঁতে পারেননি তিনি। এই ১৭ ইনিংসে মাত্র ১৩.৫৭ গড়ে ১৯০ রান করেছেন! এমন নৈপুণ্যে নিজের ওপরও অখুশি মুশফিক। তিনি বলেন, ‘মানুষের উত্থান-পতন থাকতেই পারে। আর টি২০ সংস্করণ মোটেও সহজ নয়। এতো শর্ট ভারসন যে অনেক সময় দেখা যায় সময় নেয়ার সুযোগ থাকে না। মারতে গিয়ে বা দলের কারণে খেলতে গিয়ে আউট হওয়ার সুযোগ থাকে। সেদিক থেকে বলব আমি অনেক অখুশি ছিলাম আমার পারফর্মেন্সে।’ কিন্তু এমন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চান তিনি। ফিরতে চান স্বরূপে এবারের বিপিএল দিয়ে। মুশফিক বলেন, ‘আমি অনেক কঠিন পরিশ্রম করছি, চেষ্টা করছি আমার আগের যে স্বরূপ সেটা এই বিপিএলে ফিরে আসতে। দল যে কারণে আমাকে নিয়েছে সেটার প্রতিদান যেন দিতে পারি।’
×