স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বনানী এলাকায় কবরস্থান সড়কে যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারেন ‘বাগ-ই-মোনায়েম’-এর ঠিকানা। এটি মোনায়েম খানের বাড়ি! কারণ, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় দেশবিরোধী অন্যতম কুচক্রী এবং অব্যবহিত পূর্বে আইয়ুব আমলে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর ছিলেন তিনি। দেশবাসী তো বটেই স্থানীয় মানুষও মানুষটিকে ঘৃণার চোখে দেখে। পারতপক্ষে এ বাড়িতে স্থানীয় মানুষদের কেউ যান না। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫বিঘা জমি দখল করে এ বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। দখলের ৫০ বছর পর এ বাড়িসহ মোনায়েম খানের সব সম্পত্তি বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার অবৈধভাবে সড়কের জমি দখলের অভিযোগে মোনায়েম খানের বাড়ির একাংশ ভেঙ্গে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত এই উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাজিদ আনোয়ার।
ডিএনসিসির এক কর্মকর্তা জানান, মোনায়েম খানের বাড়ির অবৈধ অংশের কারণে বনানী ২৭ নম্বর সড়কটি সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছিল। এর ফলে সেখানে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মেয়র আনিসুল হকের নির্দেশে সড়ক থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএনসিসি।
মোনায়েম খানের বাড়ির অবৈধ অংশ ভেঙ্গে দেয়ার পর জানা গেছে, মোনায়েম খানের দখলে ছিল প্রায় দশ কাঠা জমি। এর আয়তন ছিল লম্বায় ২০২ ফুট ও প্রস্থে ৩৬ ফুট। এখানে একতলা ভবন তৈরি করে মোনায়েম খানের উত্তরসূরিরা ভোগদখল করে আসছিলেন। সর্বশেষ এখানে গাড়ি বিক্রির একটি শোরুম ছিল। উচ্ছেদের খবর পেয়ে দোকানের মাল সরিয়ে নেয়া হয়। উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শন করেন ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম ও ৩ নম্বর অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুজ্জামান শরীফ প্রমুখ।
এ সময় উত্তরের মেয়র আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুনেছি এদেশে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সরকারীভাবে যিনি সবচাইতে বেশি কাজ করেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন তাদেরই পরিবারের কাছে এখানে একটি জমি গত ৫০ বছর পড়ে আছে। তাই আমার রিকোয়েস্ট থাকবে যদি এটা সত্যি হয়, সেই জমি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছিলেন, যদি তাদের কারও নামে হয়, তাহলে সেটি এখনই ক্যানসেল (বাতিল) করা হোক। রাজধানীর বনানী কবরস্থান সড়কে সরকারী প্রায় ৫ বিঘা জমি দখল করে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় দেশবিরোধী অন্যতম কুচক্রী মোনায়েম খান গড়ে তোলেন ‘বাগ-ই-মোনায়েম’। কিন্তু কোন বৈধ নথি দেখাতে না পারায় মূল সড়ক থেকে ১৬ ফুট ভেতরে ভবনের সামনের অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়। বাড়ির ভেতরের দুই দিকের গেট লাগোয়া যে দুটি ঘর ছিল সে দুটিও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
বিকেল ৪টার পর ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল ওই এলাকা পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, ১০ কাঠা জায়গা, যা রাজউকের সবুজ বেষ্টনীর আওতায়। জায়গাটি আমরা আজ দখলমুক্ত করলাম। এখানে গাড়ি পার্কিং, ফুটপাথ করা যেতে পারে। গাছপালা রোপণ, বসার জায়গাও করা যেতে পারে। দীর্ঘ ৫০ বছর অন্য সরকারগুলো কেন এ জায়গার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি তা খতিয়ে দেখা দরকার। বনানীর উচ্ছেদের ঘটনাকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে মেয়র বলেন, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের মতো এটি আরও একটি ঐতিহাসিক কাজ। আমরা আজ বনানীর এ জায়গাটি দখলমুক্ত করলাম।
এ সময় মেয়র বলেন, গুলশান-বনানীর প্রায় প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান কোন না কোনভাবে আমাদের জায়গা দখল করে আছে। আমাদের কর্মকর্তারা তাদের কাছে একবার না তিনবার যাচ্ছেন। আমরা বার বার রিকোয়েস্ট করেছি। আমাদের অনুরোধের সবটুকু শেষ করেছি। এর পর আর বলব না, সরাসরি বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দেব। আমরা এক ইঞ্চির বাইরে এ্যালাউ করব না।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর মোনায়েম খান ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হন। তার বরাদ্দ নেয়া জমির পরিমাণ ১০ কাঠা। ১১০/এ নম্বরে ভুয়া হোল্ডিং বানিয়ে এ জমি দখল করা হয়। কেবল তাই নয়, সেই বাড়িতেই গড়ে তোলা হয়েছে অন্বেষা নামে একটি স্কুলও।