ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ামত হোসেন

চক্ষু মেলিয়া

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৪ নভেম্বর ২০১৬

চক্ষু মেলিয়া

গল্প নয়, সত্যি এক সুন্দরী তরুণী। ... পথে একা দাঁড়িয়ে। অসহায়ের মতো। কোন পথিক একা যাচ্ছেন- পায়ে হেঁটে বা কোন যানবাহনে। একটু কাছে এসে মেয়েটি অসহায়ভাবে পাশে দাঁড়ালো। তার করুণ মুখ। পথিক জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? তরুণী করুণ মুখ করে বলল, আমার ব্যাগটা চুরি হয়ে গেছে। বাড়িতে ফোন করতে হবে, মাকে বা বাবাকে ফোন করব, একটু সাহায্য করুন? লোকটি নিজ বোমাইল ফোনটি তরুণীর হাতে দিয়ে বলল, এই নিন, ফোন করুন। তরুণীটি ফোন হাতে নিয়ে সরে গেল খানিকটা দূরে। তারপর সে ফোন করার ভঙ্গি করল। কিন্তু অতি অল্প ক্ষণ এরই মধ্যে সাঁ করে একটা গাড়ি কোথা থেকে এসে পড়ল তার পাশে। গাড়ির দরজা খুলে গেল। তরুণীটি সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ল গাড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি সরে পড়ল দ্রুতবেগে। ঘটনাটি ঘটতে সময় নিল মাত্র কয়েক সেকেন্ড! মোবাইলওয়ালা পথিক এক্কেবারে ভ্যাবাচ্যাকা! কী ঘটল বুঝতেই পারলেন না। প্রথমে মনে হলো কোন দুর্বৃত্ত মেয়েটিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে পালাল! এটাও সেকেন্ড কয়েকের ভাবনা। পরক্ষণেই বুঝতে পারল সে আসল ঘটনা। ছিনতাই হয় গেছে তার মোবাইলটি! এমনি ঘটনা ঘটে চলেছে একটার পর একটা। ছিনতাই হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই কারও না কারও মোবাইল ফোন। এসব ঘটনা মোটামুটি একই ধরনের। সুন্দরী তরুণী। অসহায়ভাবে নিজের ব্যাগ হারিয়েছে। ব্যাগে মোবাইল ছিল, তাই বাড়িতে তার ফোন করা দরকার- এই কাহিনী বলে লোকের মোবাইল নিয়ে খানিক দূরে ফোন করার জন্য গেলেই দূর থেকে চলে আসবে একটা গাড়ি। তারপর তাকে নিয়ে সাঁ করে ভোঁ দৌড়! ভারতের রাজধানী দিল্লীর একটি এলাকার ঘটনা এটি। দু’-একদিন পর পর এক দুর্ধর্ষ তরুণী কর্তৃক ছিনতাই হচ্ছে লোকজনের বোমাইল ফোন। পুলিশ কর্তাদের কাছে আসতে লাগল অভিযোগ। সঙ্গে সঙ্গে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে নির্দেশ গেল সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায়। কেন একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে! এই তরুণী ছিনতাইকারী ও তার গোটা চক্রকে ধরতে দেরি হচ্ছে কেন? সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ কর্তা বহু চেষ্টা করছেন তরুণীটিকে ধরার জন্য। ওপর থেকে তাগাদা পেয়ে আরও ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। তার লোকজনকে কড়া ভাবে অর্ডার দিলেন যে ওই তরুণী ছিনতাইকারীকে পাকড়াও করতে হবে। যেভাবেই হোক, আটক করতেই হবে তাকে। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নানা এলাকায়। তাদের নজরদারি সব খানে সতর্ক চোখ। যে ভাবেই হোক এই চক্রটিকে ধরতে হবে। নইলে চাকরি নিয়ে হবে টানাটানি। এলাকার থানার লোকজনের ঘুম নেই চোখে। এলাকাজুড়ে চলল পুলিশের নজরদারি। অবশেষে একদিন ধরা পড়ল ছিনতাইকারী চক্রের সেই সুন্দরী তরুণী... ধরা পড়ল পুরো গ্যাং। সুন্দরী তরুণীকে আনা হলো থানায়। খবর গেল থানার বড় কর্তার কাছে। পুলিশের এই সাফল্যে মহাখুশি তিনি! কোথায় রেখেছ ওকে? এক্ষুণি আসছি ওকে দেখতে! থানার যে ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল ওই তরুণীকে, কর্তাকে নিয়ে যাওয়া হলো সেই ঘরে। ঘরে ঢুকেই তাকালেন তিনি মেয়েটির দিকে। যে মেয়েটি দিনের পর দিন ব্যতিব্যস্ত রেখেছে তাকে, তাকে যখন ধরা হয়েছে তখন আর দুশ্চিন্তা কী। এখন তার সুনাম হবে। উপরের কর্তারা বলবেন এই থানার কর্তা কত যোগ্য, দক্ষ। খুশি মনে ধরা পড়া সেই মেয়েটির ঘরে ঢুকতেই চমকে গেলেন তিনি। তার চোখের পলক আর পড়ে না গলার স্বর বন্ধ হয়ে গেছে। কী দেখছেন তিনি! সামনে দেখছেন কাকে এ যেন তার প্রিয় আদরের কন্যা। তাঁর চোখের মণি আদরের ধন! এটা গল্প নয়, একেবারে সত্যি ঘটনা। ...অতি সম্প্রতি খবর হয়েছে সংবাদ মাধ্যমের। সত্যিকারের ঘটনা হলেও বোঝাই যায়, ওই দেশের বোম্বাই চলচ্চিত্রে সাধারণত যেসব ঘটনা দেখানো হয়, এই ঘটনা ঠিক যেন সেই তেমনি, যেন সে সব ঘটনার দ্বারাই অনুপ্রাণিত। বোম্বাইয়ে তৈরি হয় অনেক ভাল সিনেমা। যেগুলো দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়। আবার এমন সিনেমাও সেখানে তৈরি হয়েছে বহু যেগুলো দেখে সেখানকার নতুন প্রজন্ম শিখছে বোম্বেটেপনা! এই ঘটনা কি তারই নমুনা নয়? বিস্ময় বালিকা রাশিয়ান মেয়ে নাম বেলা দেভিয়াতকিনা। বয়স চার বছর। রাশিয়ান, ইংরেজী, জার্মান, ফরাসী, স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, চাইনিজ এবং আরবী এই আটটা ভাষায় কথা বলতে পারে বেলা। কথা জড়িয়ে যায় না। বলে সে সাবলীভাবে। ওই আটটা ভাষায় কেউ প্রশ্ন করলে সে সঙ্গে সঙ্গে সেই ভাষাতেই দিয়ে দেয় উত্তর। একটুও আটকাবে না। অতি সম্প্রতি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে বেলাকে আনা হয়েছিল। সে তার ভাষাজ্ঞানের পরিচয় দিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের অবাক করে দিয়েছে। টিভির অনুষ্ঠানে তাকে ওই ভাষাগুলো দিয়ে প্রশ্ন করা হলে সে সঙ্গে সঙ্গে সেই ভাষাতেই তার উত্তরও দিয়েছিল। বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে অনুষ্ঠানে আনা হয়েছিল। শুধু প্রশ্নের উত্তর দেয়া নয়, একেকটি ভাষায় বেলাকে প্রশ্ন করতে বলা হয়েছিল সে সেটাও করেছে। এই বয়েসেই তার ৮টি ভাষার জ্ঞান দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেছে। বেলার বাবা-মা বলেছেন, বেলার বয়স যখন দুই বছুর, তখন সে শুরু করে ইংরেজী শিখতে। তারপর একে একে আরও সাতটি। এই চার বছর বয়সেই বেলা আটটি ভাষায় পারদর্শিনী। রাশিয়ান শিশু বেলার ওই প্রতিভার খবর জেনে যে কেউ অবাক হবেন এতে সন্দেহ নেই। বেলা যে বিস্ময় বালিকা তাতে সন্দেহ নেই। একেবারে প্রথম থেকে চর্চা করেছে বলেই সম্ভবত এটা সম্ভব হয়েছে। তবে এ কথাও ঠিক, চর্চা করলেও অনেক শিশুর ক্ষেত্রে আটটি ভাষা রপ্ত করা সম্ভব হয় না। মেয়েটির নিজস্ব মেধা ও তার স্মরণশক্তির প্রশংসা করতেই হয়। তবে তার এই বয়সে এমন ক্ষমতার সঠিক কারণ বলতে পারবেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বিশেষজ্ঞ না হয়েও যে কেউ এটুকু বলতে পারে আজকালের শিশুদের প্রতিভা ও মেধা অনেক বেশি। এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলা যায় : অনেক শিশু এমন উন্নত মেধাশক্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ভাল পরিবেশ, ভাল সুযোগ-সুবিধা পেলে দুনিয়ার বহু দেশের বহু শিশু বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী হতে পারে বলা যায়। এদের একটা অংশ ভাল পরিবেশ পাচ্ছে, ভাল সুযোগ পাচ্ছে, তাই নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারছে। অপর অংশ যারা তা পারছে না পরিবেশের অভাবে এবং দারিদ্র্যের কারণে। এদিকে আমাদের সবার দৃষ্টি দেয়া দরকার। এর জন্য সমাজের নীতি হওয়া উচিত : আমাদের যা কিছু ভাল তার সবই শিশুদের জন্য। ওদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ওদের যতœ করতে হবে। তা হলেই আমাদের সমাজ হবে উন্নত। এ প্রসঙ্গে আরও একটি কথা। আমরা ছোট বেলা থেকে একাধিক ভাষা শেখার চেষ্টা করি। যেমন মাতৃভাষা বাংলা এবং ইংরেজী। কিন্তু বহুকাল পড়াশোনা করেও অনেকের ভাল করে শেখা হয়ও না একাধিক ভাষা। অনেকেরই ভাল করে শেখা হয় না মাতৃভাষাও! আমাদের মাতৃভাষা ভাল করে শিখতে হবে, তেমনি শিখতে হবে বিদেশী ভাষাও। এটা যুগের প্রয়োজন। রুশ কন্যা বেলার জন্য শুভ কামনা!
×