ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে বেশিরভাগ টি২০, ওয়ানডে ও টেস্ট

এবার বিদেশের মাঠে পরীক্ষা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২ নভেম্বর ২০১৬

এবার বিদেশের মাঠে পরীক্ষা বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দেশের মাটিতে পরীক্ষায় পাস বাংলাদেশ। এবার বিদেশের মাটিতে কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়বে। সেই পরীক্ষা ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যাবে। ২৬ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা দিয়েই সেই পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। টানা দুই বছরের বেশি সময় বিদেশের মাটিতে কোন দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে না বাংলাদেশ। সব সিরিজ হয়েছে দেশের মাটিতে। আর তাতে করে সাফল্যও মিলেছে আকাশচুম্বী। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে খেলার পর থেকেই আর বিদেশের মাটিতে কোন সিরিজ খেলেনি বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে টানা সিরিজ খেলে গেছে। আর জয় ধরা দিয়েছে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে যে সিরিজ দিয়ে শুরু, এরপর টানা দেশের মাটিতে সিরিজ খেলে আর জিতে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলে। প্রতি সিরিজেই জিতে। এ বছর সেপ্টেম্বরে যখন আফগানিস্তানের বিপক্ষেও সিরিজ খেলে। সেটিতেও জয় তুলে নেয়। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতা যায়নি। টেস্ট সিরিজ ১-১ ড্র করে। এবার বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ কি করবে, তাই দেখার অপেক্ষায় আছেন সবাই। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দুর্দান্ত দল। সেটি বিদেশেও প্রমাণিত। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। টি২০ বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত করেছে। তবে এবার দুই বছর পর যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বিদেশের মাটিতে খেলার ধুম শুরু হচ্ছে, সেদিকেই সবার নজর থাকছে। বাংলাদেশ দলতো ব্যস্তসূচীর মধ্য দিয়েই যাবে। এরসঙ্গে বিদেশে দলের নৈপুণ্যই দেখাতে হবে। তা না হলে যে বাংলাদেশ ভাল খেলে সেটির প্রমাণ মিলবে না। বাংলাদেশ যে শুধু দেশের মাটিতেই ভাল দল নয়, বিদেশেও ভাল; সেই প্রমাণইতো দিতে হবে। টেস্ট জেতার পরই ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম বাংলাদেশকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘এই জয় অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছু। তবে এখন তাদের বিদেশের মাটিতে জিতে দেখাতে হবে। এই মুহূর্তে এটাই বাংলাদেশের জন্য অগ্নিপরীক্ষা।’ সেই পরীক্ষায় পাস করতেও প্রস্তুত বাংলাদেশ দল। তবে কঠিন পরীক্ষা যে সামনে অপেক্ষা করছে, সেটি বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমও বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘২০০৮ সালের পর বাংলাদেশ আর সেভাবে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেনি। সেটা আমাদের জন্য শেখার একটা ব্যাপার হবে। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে, এটা হবে আমাদের পরবর্তী ধাপ। আমরা একটা লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম, আমরা এমন ধারাবাহিক দল হব যেন ঘরের মাঠে আমাদের কেউ না হারাতে পারে। আমরা যেন ধারাবাহিকভাবে ফল করতে পারি। প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা সেটা করেছি। পরের বছর আমাদের অনেক সফর রয়েছে। চেষ্টা করব অবশ্যই চ্যালেঞ্জটা নিতে। আমাদের এমন কয়েকজন খেলোয়াড় আছে যারা এই চাপ সামলে নিয়ে পারফরম করতে পারবে। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের সব ফরমেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। একটা ভাল খেলোয়াড়ের গুণ থাকে কে কত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। আমার মনে হয় শুধু সিনিয়র খেলোয়াড়রা নয় জুনিয়র যারা আছে তারাও প্রতিভাবান। আশাকরি তারাও খুব তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারবে।’প্রায় ১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমেই দুর্দান্ত খেলা উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। দুই টেস্টেই জয়ের আশা তৈরি করেছেন। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় টেস্টে জিততে পেরেছেন। এখন সামনে বিপিএল। এরপরই নিউজিল্যান্ডে উড়ে যেতে হবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আবার টানা বিদেশের মাটিতে খেলার পরীক্ষাতেও পড়বে বাংলাদেশ। এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর পর্যন্ততো বিদেশের মাটিতে প্রচুর খেলা রয়েছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে, তিন টি২০ ও দুই টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হবে খেলা। একমাসের এ সফর শেষে ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটি খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে খেলার পরই আবার শ্রীলঙ্কা সফর রয়েছে বাংলাদেশের। দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও দুই টি২০ খেলতে শ্রীলঙ্কা যাবে বাংলাদেশ। সফরটি মার্চ পর্যন্ত চলবে। এ সফর শেষে জুনে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য মে মাসে প্রস্তুতিমূলক টুর্নামেন্ট খেলবে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি নিতে মে মাসে আয়ারল্যান্ডে একটি তিনজাতি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। যে সিরিজে বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ছাড়াও থাকবে নিউজিল্যান্ড। ডাবল লীগ পদ্ধতির এ সিরিজে ১২ মে বাংলাদেশ খেলতে নামবে। ২৪ মে সিরিজ শেষে ১ জুন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচেই স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচটি দিয়েই ২০০২ ও ২০০৪ সালের পর তৃতীয়বারের মতো টুর্নামেন্টের গ্রুপপর্বে খেলবে বাংলাদেশ। ৫ জুন অস্ট্রেলিয়া ও ৯ জুন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা দিয়ে গ্রুপপর্বের খেলা শেষ হবে বাংলাদেশের। যদি নকআউট পর্বে ওঠে বাংলাদেশ, তাহলে আরও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে এসেই আবার আরেকটি সিরিজের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে। এবার পাকিস্তান খেলতে আসবে বাংলাদেশে। দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও ১ টি২০ ম্যাচ খেলতে জুনের শেষেই বাংলাদেশে পা রাখার কথা পাকিস্তান ক্রিকেটারদের। জুলাই মাসটি জুড়েই হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ। এখানেই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের শেষ নয়। আছে আরও খেলা। আগস্টের শুরুতেই আবার অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। আইসিসির ভবিষ্যত সফরসূচী অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২ টেস্ট ও তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলার কথা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। আবার এর মধ্যে গতবছর অক্টোবরে যে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে এসে খেলে যায়নি, সেই টেস্টটিও হতে পারে। অবশেষে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা খানিকটা বিরতি পাবে। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুরো মাসজুড়েই বিরতি পাবে। ২০১৭ সালের আগস্টে গিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অক্টোবর-নবেম্বরে ২ টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও ২টি২০ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সিরিজটি দক্ষিণ আফ্রিকায় হবে। নবেম্বরের মাঝামাঝি সিরিজটি শেষ হবে। এরপর ২০১৭ সালে আর কোন সিরিজ নেই। আগামী বছর শুরু হবে বিদেশের মাটিতে খেলা দিয়ে। শেষও হবে তাই। এরসঙ্গে আরও কঠিন সব সফরতো রয়েছেই। এখন দেখা যাক, এ কঠিন পরীক্ষায় নিজেদের কতটা মেলে ধরতে পারে বাংলাদেশ।
×