ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে অন্য ধর্মের ওপর আঘাত সহ্য করা হবে না ॥ হানিফ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২ নভেম্বর ২০১৬

ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে অন্য ধর্মের ওপর আঘাত সহ্য করা হবে না ॥ হানিফ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে অন্য কোন ধর্মের ওপর আঘাতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোন স্ট্যাটাস বা গুজবের ওপর ভিত্তি করে অন্য কোন ধর্মের ওপর কোন আঘাতকে কখনও মেনে নেয়া হবে না। মঙ্গলবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির পক্ষ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে অন্য কোন ধর্মের ওপর আঘাতকে বরদাশত করা হবে না। গত ২৯ অক্টোবর বাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়ি-ঘরে হামলার সঙ্গে জড়িতরা অবশ্যই শাস্তি পাবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশে আছি আমরা। এজন্য আমাদের একটি প্রতিনিধি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গেছে। আমরা তাদের ক্ষতির পরিমাণ জেনে তা পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। প্রসঙ্গত, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মারুফা আক্তার পপি ও গোলাম রাব্বানী চিনু এই চারজন মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে হানিফ বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র হিসেবে ফেসবুকের কোন স্ট্যাটাস বা গুজবের ওপর ভিত্তি করে অন্য কোন ধর্মের ওপর কোন আঘাতকে কখনও মেনে নেয়া হবে না। নাসিরনগরে যার ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাসটি পাঠানো হয়েছিল তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে এ স্ট্যাটাস পাঠানো হলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কোন গুজব বা ষড়যন্ত্রমূলক ধর্মীয় উস্কানিতে বিভ্রান্ত হয়ে অন্য ধর্মের ওপর আঘাত কখনও কাম্য হতে পারে না। ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ারী থানা ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারের কথা উল্লেখ করে হানিফ বলেন, তারা যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়েছে তা তাদের বৈধ না অবৈধ অস্ত্র তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দেখবে। তবে তাদের প্রকাশ্যে ফাঁকা গুলি করার কোন অধিকার নেই। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশ নষ্ট সময় পার করছে’ মর্মে সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে হানিফ বলেন, দেশে নষ্ট রাজনীতি শুরু করেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তিনি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতিকে জটিল করে দিয়েছিলেন। দেশে গণতন্ত্র নেই বিএনপির মহাসচিবের এমন বক্তব্যের জবাবে হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর রাতে কারফিউ জারি করে দেশ শাসন করেছেন। তাই তাঁর দলের নেতাদের কাছে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। তিনি বলেন, নির্বাচন বানচালের নামে বোমা মেরে মানুষ হত্যা, সরকার পতনের জন্য পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা ও জঙ্গীবাদ তৈরি করে বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করা কখনও গণতন্ত্র হতে পারে না। বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্য করে হানিফ আরও বলেন, আগে গণতন্ত্র কি তা জানুন, গণতান্ত্রিক আচার-আচারণ শিখুনÑ তারপর গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলুন। আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে সংগঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সফলতার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় ছিটমহলবাসীরা এবারই প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সমর্থ হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ছিটমহলবাসীরা ৬৮ বছর পর তারা তাদের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে এবং তারা তাদের রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করেছে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদিকা ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন, আমিরুল আলম মিলন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, রেমন্ড আরেং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×