ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

শিক্ষার মান উন্নয়নকরণ ও প্রকৃত শিক্ষক

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

শিক্ষার মান উন্নয়নকরণ ও প্রকৃত শিক্ষক

বাংলাদেশের শিক্ষায় আন্তর্জাতিকীকরণ, মুক্তচিন্তা, কর্মপরিবেশবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থা ও দক্ষতা এবং উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া বাঞ্ছনীয়। শিক্ষার মান উন্নত না হলে তা কুশিক্ষা হয়। এদেশে উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে গত কয়েক বছর ধরে সরকার নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। শিক্ষা হচ্ছে একমাত্র বিনিয়োগ, যা জাতির উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি এক শ্রেণীর বেনিয়া অবশ্য বিদেশী শিক্ষা-শিক্ষক আনয়নকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তারা আউটার ক্যাম্পাস খোলার ধান্ধায় অযোগ্য শিক্ষক দ্বারা পাঠদান করাচ্ছে। বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমনকি আমাদের জাতীয় ইতিহাস পড়ানোর জন্য বিদেশী শিক্ষক নিয়োগ করছে। যোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক ভিন্ন দেশী রঙের কদর থাকা কোন কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কাছে কদরের অভাব নেই। এদিকে বাংলাদেশে একমুখী শিক্ষার বদলে প্রাইমারি-মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বিরাজমান। শিক্ষা আর সেবামূলক নয়। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষা আজ পণ্য বিপণন ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সমাজ-জাতি-প্রগতির ক্ষেত্রে শিক্ষার চাহিদা ও সরবরাহ পুরোপুরি কার্যকর এ কথা বলা যাচ্ছে না। বরং শিক্ষাবিদদের একাংশ দলাদলি ও তেলবাজির কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। আবার আরেক দল এমন বিপজ্জনক খেলায় মত্ত তারা জাতীয় ইতিহাস বিকৃতি থেকে শুরু করে ঢাহা ভুল তথ্য ছাত্রছাত্রীদের মস্তিষ্কে ঢুকাচ্ছে। যারা ইংরেজী মাধ্যমে অর্থাৎ সম্পূর্ণ ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পড়ছে তাদের অনেকে সঠিকভাবে জাতীয় ইতিহাস ও মাতৃভাষা জানতে পারছে না। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষায় বিশাল ফেল করাটা আসলে দুঃখজনক। প্রাইমারি পর্যায়ে বাংলা মাধ্যমের বইগুলো কয়েকদিন আগে সম্মিলিত নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে একটু নিরীক্ষার সৌভাগ্য হয়েছিল। বইগুলো নিরীক্ষা করে সত্যি তাজ্জব হয়েছি। কোথায় আদর্শ, সুন্দর, সোঁদা মাটির গন্ধ, সততা, অসাম্প্রদায়িকতা, নীতি কথার সুস্পষ্ট বিবরণ থাকবে- তা নয়। বরং এক ধরনের নির্লিপ্ততা ও সেলফ সেন্সরশিপ লেখক/সম্পাদকদের মধ্যে বিরাজমান। তারা যেন কোনমতে, তাদের দায়সারা দায়িত্ব পালন করেছে। আসলে দেশপ্রেম হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠে না। শৈশব থেকে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে গেঁথে দিতে হয় দেশপ্রেম। আদর্শ মাটির সন্তান হতে হলে দেশকে ভালবাসা শিখতে হয়। কিন্তু এদেশে বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার বদৌলতে কেউ কেউ ভুলে যান- এদেশের সুন্দর ইতিহাস-কৃষ্টি-সংস্কৃতির কথা, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার কথা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের কথা; ৬ দফা আন্দোলনের কথা আবার ছাত্রদের দেয়া ১১ দফার কথা। অথচ এখন গোয়েন্দাদের ব্যস্ত থাকতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিক্যাল কলেজ-প্রকৌশল থেকে নিউ জেএমবি সমর্থক শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী ও কর্মকর্তা নির্ধারণে। একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে দেখেছি ৫০% ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে এ্যাসেম্বলী ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। অধিকাংশ মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। দেশে নব্য রাজাকাররা বহুদিন ধরেই গোপনে কাজ করে চলেছে। তারা দেশ ও জাতির উন্নয়নকে সহ্য করতে পারে না। ফলে ব্রেনওয়াশ করে থাকে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায়। আজ কেবল মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রী নয়, বরং ইংরেজী মাধ্যমে শিক্ষিত থেকে শুরু করে সাধারণ স্তরের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া শুরু হয়েছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। অথচ ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তরুণ-তরুণীর মনকে বিভ্রান্ত করে চলেছে। এটি কিন্তু একদিনে শুরু হয়নি। পঁচাত্তর পরবর্তী যে ভুল ও মিথ্যে ইতিহাস রচনার দায়িত্ব তৎকালীন শাসকবর্গ পর্যায়ক্রমে পালন করে চলেছিলেন তা ঘটনাপ্রবাহে ব্যাপ্তি লাভ করেছে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা সবসময়ই ধর্মের অপব্যাখ্যায় সচেষ্ট। আর জ্ঞানপাপীরা কি অবলীলায় সন্ত্রাস ও জঙ্গী তৈরির প্রয়াস নিয়েছিলেন বলে পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে। যখন জাতি হিসেবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তখন মিথ্যে ও বিভ্রান্তির সূচনা করা হচ্ছে। শিক্ষাবিদদের কাউকে কাউকে দেখেছি অবলীলায় মিথ্যে উচ্চারণ করতে। নিজের স্বীয় স্বার্থে ভুলভাবে মগজধোলাই করতে রত রয়েছেন। সামাজিক প্রতিরোধই পারে দেশ ও জাতির উন্নয়নে শান্তি-শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে। একজন আদর্শ শিক্ষক কেবল সময়মতো ও সুন্দরভাবে পাঠদান করবেন না, বরং ছাত্রছাত্রীদের নৈতিক বিকাশ ও সততা এবং নিষ্ঠা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান দেয়ার পাশাপাশি নিজেকেও সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কোন কোন শিক্ষাবিদকে সুন্দর সুন্দর কথা বললেই হবে না, বরং সুন্দর সুন্দর কথার বাস্তবায়ন করতে হবে। সততার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করতে হবে। অথচ ইচ্ছে করে, অবহেলা করে যখন ভুল মূল্যায়ন করে তখন তা ঠিকমতো কাজ করে না। আবার নির্দিষ্ট দায়িত্বে অবহেলা করে বেশকিছু যশধারী শিক্ষক একের পর এক কনসালটেন্সি করে চলেছেন। অথচ জাতীয়ভাবে ঘোষিত দায়িত্ব পালনে তীব্র অনীহা ও দীর্ঘসূত্রতা লাগাচ্ছেন। তারা ধরাকে সরাজ্ঞান করে থাকেন। বিভিন্ন কনসালটেন্সিতে সময় দিয়ে আসল কাজ থেকে বিরত থাকেন। ছেলেবেলায় পড়ায় একটি প্রবাদ বাক্য মনে পড়ে: ‘বিদ্বান দুর্জন হলেও পরিত্যাজ্য।’ আসলে এসব শিক্ষাবিদ ইচ্ছামতো মনগড়া পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেন, দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের কথা মোটেও ভাবেন না। বরং তারা দেশে এমন একটি অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মাফিয়া চক্র তৈরি করেছেন তা ভেঙ্গে ফেলা দরকার। কোচিং ব্যবসা থেকে শুরু করে নকল বই আর ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ কাজে এক ধরনের অনৈতিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে শিক্ষক নামধারী কতিপয় দুষ্কৃতকারীর গভীর ও নিবিড় সখ্য থাকে। এদের গভীর যোগসূত্রে দেশে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিদেশে উচ্চশিক্ষার একটি বেনিয়া চক্র গড়ে উঠেছে- তারা দেশ ও জাতির শত্রু। বিদেশে উচ্চশিক্ষার নামে মানব ও অর্থপাচারে এদের ভূমিকা সেটি তদন্ত করে গোয়েন্দারাই বলতে পারবেন। সম্প্রতি দেশের উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ালিটি এসুরেন্সের পিআর রিভিউর হিসাবে কাজ করতে গিয়ে সত্যি চমৎকৃত হলাম। সেখানে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এ্যাডুকেশন বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের রীতিমতো এ্যাসেম্বলী ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আসলে আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকেই যদি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতাম তবে আজ দেশে একটি নিরাপদ ও সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ গড়ে উঠত। চক্রান্তকারীরা প্রথম থেকেই ভুল পথে দেশকে পরিচালনা করতে চেয়েছে। এদিকে বৈশ্বিক যুব উন্নয়ন সূচকে যুবকদের কর্মসংস্থান হিসেবে ১৮৩টি দেশের হিসাবে বাংলাদেশের স্থান ১৭৭। বেসরকারী খাতে চাকরির প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী কর্মসংস্থান তৈরি করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। সুখবর হচ্ছে দেশে একটি এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে। এতে দেশের উচ্চশিক্ষার মান বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি মিথ্যে তথ্য দিয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয় বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে থাকে। শিক্ষার মান উন্নয়নে গবর্নেন্স একটি মূল চালিকাশক্তি। অথচ এ গবর্নেন্সের ক্ষেত্রে নানারকম ফাঁকফোকর বের করতে অনেকে সচেষ্ট থাকে। আবার আধুনিক যুগোপযোগী পাঠ-পঠনের ব্যবস্থা করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার জন্য ভৌত অবকাঠামো বিনির্মাণ করা একটি জরুরী। এ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে দেশের অধিকাংশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে রীতিমতো অনীহা। কেবল ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বিশাল এলাকাজুড়ে সবুজ ক্যাম্পাস তৈরি করেছে। কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ ব্যস্ত থাকে নানারকম ফাঁকফোকর গলিয়ে বিভিন্ন অস্বস্তিকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার। ফলে ভৌত অবকাঠামো গড়া হচ্ছে না। শিক্ষাকে অবশ্যই ছাত্রছাত্রীদের মান উন্নয়নের সূচক হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, যাতে করে পাঠ শেষে চাকরি পায়। দেশে চাকরি নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই সৃজনশীলতার সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য প্রদান করার ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। আবার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের প্রতি আনুগত্য ও মানবিকমূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়োজন রয়েছে। গবেষণা কর্মকা-েও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেক বেশি সৃজনশীল, কর্মচঞ্চল ও নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক যে, গবেষণা কর্মকা-ে সে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বঞ্চিত। হেকেপ আইকিউসির মাধ্যমে বর্তমানে ৬১টি স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বনির্ধারণী মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করেছে। এক বছর পর এ স্বনির্ধারণী মূল্যায়নের ভিত্তিতে চার বছরব্যাপী উন্নয়নমূলক কর্মকা- পরিচালিত হবে। তারপর আবার পঞ্চম বছরে এসে নতুন করে স্বনির্ধারণী পদ্ধতি চালু হবে। আশা করি দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসমূহে এ স্বনির্ধারণী পদ্ধতি চালু হবে। ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজ ও ইনস্টিটিউটগুলোর নিম্নমান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। আমার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল আমেরিকান সিস্টারদের কাছে। এখনও মনে পড়ে তারা কখনও ছেলে-মেয়েতে প্রভেদ শেখায়নি। তারা ছেলেবেলায় শিক্ষা দিয়েছিলেন মেধা দিয়ে, মনন দিয়ে, প্রতিভা দিয়ে একজন আরেকজনকে পরাস্ত করতে। ফলে গোড়াতে আমাদের মধ্যে শিক্ষার বীজ বপন হয়েছিল। সেটি পরবর্তী জীবনে মানস গঠনে অনেক সহায়তা করেছে। অন্যদিকে পরিবার থেকে অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করেছিল সেটি এখনও সত্যিকারে মানুষ হিসেবে চলতে সহায়তা করে থাকে। অথচ এখন এমনও প্রগতিবাদী ব্যক্তিত্বকে টিভি টকশোতে বলতে শোনা যায় যে, সনাতন ধর্মাবলম্বী। অথচ আমরা ছেলেবেলায় এমনটি শুনিনি। ভাল শিক্ষক তৈরি করা সহজ নয়, তবু এখনও আশার কথা প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান, প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান (চেয়ারম্যান, ইউজিসি), প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী (উপাচার্য, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি), প্রফেসর ড. মিজানুর রহমানের (উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) মতো শিক্ষাবিদরা আছেন- যারা দেশ ও জাতিকে দিয়ে চলেছেন। এরাই তো আদর্শ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে যেভাবে সরকারের উন্নয়নের গতিধারায় নিয়ে এসেছেন সেজন্য প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান বিশেষভাবে ধন্যবাদের যোগ্য। তার মতো মহৎ শিক্ষক ও সাংগঠনিক ব্যক্তিত্বের পক্ষেই উন্নয়নের গতিধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে। আবার প্রভাবশালী শিক্ষকদের কেউ কেউ আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের সুবাদে উভয় কুল রক্ষা করে চলেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বহিঃস্থ নিরীক্ষক হিসেবে কোন শিক্ষক যখন আড়াই মাসে জমা না দিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করেন তখন দুঃখ লাগে। এদেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে জননেত্রীর যে বিশেষ উদ্যোগ তা সাফল্যম-িত হলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন, অগ্রগতি, প্রগতি আরও বেগবান হবে। মানুষের মধ্যে চিন্তা-চেতনা ও কুসংস্কারমুক্ততা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাধিত হবে। এজন্য ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ সবসময়ই শিক্ষার উন্নয়নে দিশারীর ভূমিকা পালন করে আসছেন। দেশে যে সুন্দর একটি জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণীত হয়েছে তা আরও বেগবান হওয়া দরকার। নচেত মনুষত্বের বিকাশ ঘটা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, চীনা প্রেসিডেন্টের আগমন বিমসটেক ও ব্রিকস আউটরিচ সম্মেলনে সরকারপ্রধানের যোগদান এবং অন্যদের এদেশে আগমন ভূ-রাজনৈতিক কারণে বর্তমান সরকারের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নীতি আমাদের সহায়তা করেছে। শিক্ষাক্ষেত্র আরেকটু সংযুক্ত করা বাঞ্ছনীয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নড়েচড়ে বসতে হবে। সরকার প্রাইমারি স্কুলকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করতে যাচ্ছে। এটি একটি শুভবুদ্ধির পরিচায়ক। তবে প্রাইমারি পর্যায়ে না মাতৃভাষা, না ইংরেজী, না অঙ্ক- বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ঠিকমতো বীজ বপন করা হয় না। এটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত সমস্যার সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে ইংরেজী ও অঙ্ক দুটি বিষয়েই দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। মাতৃভাষা বাংলাও অনেকে সঠিকভাবে পড়ি না। মাতৃভাষা ঠিকঠাকভাবে জানা থাকলে ইংরেজী শিক্ষাও সহজে আয়ত্ত্ব করা যায়। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাল শিক্ষক তৈরির সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। ইংরেজী ও অঙ্ক শিক্ষক তৈরির জন্য ডাটাবেজ তৈরি করে প্রাথমিক এবং মাদ্রাসা পর্যায়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা বাধ্যতামূলকভাবে মান উন্নয়নে সচেষ্ট হন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষার মান উন্নয়নে কার্যপরিধি বৃদ্ধি করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ের অধিকাংশ বইয়ে কেমন যেন লেজেগোবরে অবস্থা। অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে কুণ্ঠাবোধ করে। বর্তমান সরকার যে সুন্দর, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করতে চাচ্ছে তার প্রথম পাঠের জন্য প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শুরু করতে হবে। বইগুলোর ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। অথচ সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে, পাশাপাশি ছড়িয়ে দিতে হবে মেধা ও মনন। কিন্তু চালাক-চতুর শিক্ষক সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও ভ্রষ্ট নীতি দ্বারা অনেকে গিরগিটির মতো রং বদল করতে পারে। এ সমস্ত গিরগিটি ও তোষামদকারীদের হাত থেকে আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে ইউজিসির আওতায় কোয়ালিটি এস্যুরেন্স ইউনিটের প্রধান প্রফেসর ড. মেসবাহ উদ্দীন আহমেদ ও কোয়ালিটি স্পেশালিস্ট প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী হেকাপের সাহায্যে ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে যে কর্মপরিধি শুরু করেছেন তা যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়। মাদ্রাসার মান উন্নয়নের জন্যও চিন্তা-ভাবনা করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। ইউজিসির যে পুনর্গঠনের কথা বহুদিন ধরে শুনে আসছি তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ [email protected].
×