ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মবিশ্বাস পুঁজি করে খেলতে চান মুশফিক

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

আত্মবিশ্বাস পুঁজি করে খেলতে চান মুশফিক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল বুধবার বলেছিলেন, ‘চেষ্টা থাকবে ম্যাচটা (দ্বিতীয় টেস্ট) জেতার।’ আজ শুরু হতে যাওয়া ঢাকা টেস্টের আগে বৃহস্পতিবার একই বাণী বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের কণ্ঠেও। টস হতেই মোহাম্মদ আশরাফুল (৬১টি টেস্ট) ও হাবিবুল বাশার সুমনের (৫০টি টেস্ট) পর বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৫০তম টেস্ট খেলতে নামবেন মুশফিক। এমন টেস্টে নামার আগে বলেছেন, ‘ক্ষুধা (জেতার) আছে, আত্মবিশ্বাসও আছে।’ * বিশ্বাস বেড়েছে? মুশফিকুর রহীম ॥ অবশ্যই। ১৫ মাস পর মাঠে নেমে দল হিসেবে আমরা অবশ্যই একটু ব্যাকফুটে ছিলাম। অবশ্যই ফেবারিট ছিলাম না। ছেলেরা যেভাবে খেলেছে, অবশ্যই আত্মবিশ্বাস আছে। শুরুটা ভাল হয়েছে। চট্টগ্রামে যেভাবে শেষ করেছি, সেখান থেকেই এখানে শুরু করতে চাই।’ * মুভ অন মুশফিক ॥ মুভ অন ছাড়া কোন গতি নেই। খেলতেই হবে। আমরা যতোই ভাল খেলি না কেন, ম্যাচ হেরেছি। সেই আক্ষেপ তো অবশ্যই আছে। সবার ভেতরে সেই জেদও আছে। সবাই জানে যদি আমরা এক শতাশংও এদিক সেদিক করতে পারতাম (চট্টগ্রাম টেস্টে), তাহলে ফল পক্ষে আসত। সেদিক থেকে আমরা সচেতন। জানি যে ইংল্যান্ড অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ। তবে আমরাও চেষ্টা করব শেষ টেস্ট থেকে ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে নতুন করে শুরু করতে। * উইকেট মুশফিক ॥ ঢাকার উইকেট অবশ্যই আলাদা হবে। এখানে উইকেটের মাটি অন্যরকম। জানি না কেমন ব্যবহার করবে। তবে যেমনই করুক, আশা করব আমাদের স্পিনাররা সুবিধা পেলে সেটা নিতে পারবে এবং আমাদের ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারবে। তাহলে ভাল ফল এখানেও আসবে। উইকেটের চেয়েও বেশি নির্ভর করে আপনি কতটা ভাল করতে পারছেন। উইকেট যেমনই হোক, ভাল জায়গায় বল না করলে বা বল সিলেকশন ভাল না হলে, ভাল করা কঠিন। চেষ্টা করব, উইকেট এখানে যদি চট্টগ্রামের মতো নাও হয় কিংবা আরও ভাল হয়, যেটাই থাকুক না কেন, দু’দলর জন্য একইরকম হবে। চেষ্টা করব যত দ্রুত হোক, মানিয়ে নেয়ার। চট্টগ্রামেও যেটা হয়েছে, অনেকবার বলেছি, এখানেও প্রথম ইনিংসটা গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেদিকেই মন দিচ্ছি। * পেস বোলিং মুশফিক ॥ আমরা যেভাবে এক-দেড় বছর পরপর খেলি, সেক্ষেত্র কাজটা কঠিন। বিশেষ করে আমাদের ক’জন বোলার আছে শুধু টেস্টই খেলে? তাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। এখন ইনজুরির কারণে অনেকে নেই। অভিজ্ঞ হলেই যে ভাল করবে, সেটার নিশ্চয়তা নেই। বর্তমানে যে ভাল করছে, সেটাও ভাবতে হবে। তারা নতুন, কিন্তু শেষ ম্যাচেও অভিষিক্তরা ভাল করেছে। তার মানে এই না যে যারাই অভিষেক করবে, তারাই ভাল করবে। আবার এমনও নয় যে অভিজ্ঞ হলেই ভাল করবে। এটা কম্বিনেশনের ব্যাপার। আমরা চেষ্টা করব সঠিক কম্বিনেশন গড়ার। আউটকাম ভাল হলে তো ভাল। ভাল না হলেও আমরা ওদের ব্যাক করব। কারণ তারা যোগ্য বলেই বাংলাদেশ দলে জায়গা পেয়েছে ১৫ জনে। সেরা একাদশে যারা খেলবে তাদের জন্য শুভকামনা। আমাদের সবার সমর্থন থাকবে। * বৃষ্টি মুশফিক ॥ মনে হয় একটু হলেও হবে। সত্যি বলতে, আমি তো সকালে (বৃহস্পতিবার) দেখে ভেবেছি টানা এক-দুইদিন বৃষ্টি হবে। এখন তো মাঠে এসে দেখি ঠাটাপড়া গরম। আমার তো মনে হয় না খুব বেশি প্রভাব ফেলবে। আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল, সেদিক থেকে একটু হলেও হয়তো নড়চড় হতে পারে। হয়তো রোদ থাকলে উইকেটের ড্রাইআপ ভিন্ন হতে পারতো। কিন্তু গতকালও (বুধবার) উইকেট দেখে আমরা খুশি ছিলাম। প্রায় প্রস্তুত উইকেট। খুব একটা বেশি কাজ করার ওখানে নেই। এখানে পেস বোলারদের পাশাপাশি স্পিনাররাও অনেক সাহায্য পায়। হালকা ময়েশ্চার থাকলে ওখানেও বল স্পিন করে, গ্রিপ হয়। সেদিক থেকে বলব, যেটাই হোক আমরা চেষ্টা করব কন্ডিশন অনুযায়ী খেলার। * স্পিন মুশফিক ॥ দুইটা দুই ধরনের। ওদের যে ধরনের পেস বোলিং আক্রমণ, ওদের স্পিনারদের কিন্তু এ্যাটাক করতে হয় না। রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে লম্বা সময় বোলিং করে গেলেই হয়। আমাদের স্পিনাররাই মূলশক্তি, ওদেরই এ্যাটাক করতে হয়, উইকেট নেয়ার চেষ্টা করতে হয়। রক্ষণাত্মক বোলিং করে লাভ হবে না। সেদিক থেকে বলব যে আমাদের স্পিনাররা এগিয়ে। আমাদের স্পিনাররা অন্তত তিনটা কন্ডিশনে বল করতে পারে। পুরান বলে হোক বা নতুন বলে, এ্যাটাক করে বা ডিফেন্সিভ হলে তারা খেলতে পারে। এটা আমাদের ন্যাচারাল। আমাদের এখানে ওয়ানডেতেও স্পিনাররা নতুন বলে বল করে অভ্যস্ত। যেটা বাইরের দেশে অনেকেই অভ্যস্ত না। সেদিক থেকে আমাদের স্পিনাররা এগিয়ে। তবে তারপরও বলব, গত টেস্টে আমাদের স্পিনাররা আরও ভাল বল করতে পারতো। হয়তো ১৫ মাস পর খেলেছে, কিন্তু এরকম উইকেটে প্রথম ইনিংসে আরেকটু ভাল বোলিং করলে ওদের রান একটু কম হতো। * নিচের সারির ব্যাটসম্যান মুশফিক ॥ ওদের টেল এন্ডারদের ১০-১১টা সেঞ্চুরি আছে। সেরকম হয়তো আমাদেরও নেই ফার্স্ট ক্লাসে। ওদের কাঠামোও বোঝেন আপনারা। ওরা সেই অবদানটা রাখতে পারে। কারণ ওরা অলরাউন্ডার। ওদের ৩-৪ জন অলরাউন্ডার। আমরাও চেষ্টা করছি সেরকম একটা কম্বিনেশন গড়ে তুলতে। মিরাজ আপনারা জানেন ভাল অলরাউন্ডার। অ-১৯ দলে ভাল খেলেছে। ভবিষ্যতে আমাদের দলেও ৩-৪ জন অলরাউন্ডার থাকবে। আর যে কোন দলে এতজন অলরাউন্ডার থাকলে যে কোন ফরমেটেই অধিনায়কের জন্য অনেক বড় সুবিধা। * হতাশা মুশফিক ॥ হতাশা (প্রথম টেস্ট হারের পর) আছে। কারণ দিনশেষে আমরা জিতিনি। তবে সেই ক্ষুধাটা (জয়ের) আছে, আত্মবিশ্বাসও আছে। ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে টানা চারদিন খুব ভাল খেলেছি। আমরা জানি ইংল্যান্ড আরও স্ট্রংলি ফিরে আসার চেষ্টা করবে। তবে এখানে উইকেট আলাদা হবে। আশাকরি ওরা আগেভাগে বুঝে উঠতে পারবে না। আশাকরি আমরা ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগাতে পারব। * ফল মুশফিক ॥ এটা আর দশটা টেস্ট ম্যাচের মতোই। প্রতিটি টেস্টই আমাদের জন্য স্পেশাল। কারণ আমরা বছরে একটি-দুটি টেস্ট খেলতে পারি কেবল। ইংল্যান্ড ভাল দল, দারুণ খেলছে সব ফরমেটেই। আমাদের জন্য হবে চ্যালেঞ্জ। আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ধারাবাহিক খেলা। আমরা সেদিকেই মন দিচ্ছি। সেটা পারলে ফলও আমাদের পক্ষে আসবে। যদি জয়ের মতো সুযোগ আসে, আমরা অবশ্যই এবার হাতছাড়া করব না। আমাদের মূল লক্ষ্য অবশ্যই থাকবে, জয়ের মত সুযোগ সৃষ্টি করা এবং সেটা কাজে লাগান। প্রথম টেস্টে আমরা যে লড়াই করব, এটা অপ্রত্যাশিত নয়। বিশ্বাসটা আমাদের ছিল। বিশ্বাস ছাড়া কেউ কিছু অর্জন করতে পারে না। প্রত্যাশা সবসময়ই থাকে। আমরাও চেষ্টা করছি প্রত্যাশার চাপের সঙ্গে যেন মানিয়ে নিতে পারি।
×