ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষক সাইফুল রিমান্ডে

পার্বতীপুরের ধর্ষিত শিশুটির দায়িত্ব নিল সরকার

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

পার্বতীপুরের ধর্ষিত শিশুটির দায়িত্ব নিল সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পার্বতীপুরে ধর্ষিত পাঁচ বছরের সেই শিশু এখন মানুষ দেখলেই আঁতকে ওঠে। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। নৃশংস ও বীভৎস নির্যাতনে শিশুটি শুধু শারীরিক ও মানসিকভাবে বড় ধরনের আঘাত (ট্রমা) পেয়েছে। ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, দু’দিন ধরে মধ্যরাতেও ওসিসি থেকে শিশুটির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, ধর্ষিত শিশুটির ক্ষত গোপনাঙ্গের হাড় পর্যন্ত পৌঁছেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গভীর ক্ষত রয়েছে। তাই গায়ে হাত দিলেই সে আঁতকে উঠছে। ব্যথা অনুভব করছে। তবে শিশুটি আজকে (বৃহস্পতিবার) আগের চেয়ে অনেকটা ভাল আছে। আশঙ্কামুক্ত রয়েছে। অবশ্য শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান জানান, তাকে সব ধরনের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে দুই মাস লেগে যেতে পারে। এর পর তার অস্ত্রোপচার হবে। এখন তার হাই-এ্যান্টিবায়োটিক ও হাই-প্রোটিন ডায়েট চলছে। চলতে থাকবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল জানান, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সব ধরনের খরচ বহন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। আশা করছি, সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবে। তিনি জানান, শিশুটির ধর্ষককে আটক করা হয়েছে। তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এদিকে ধর্ষিত সাইফুলকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর পিএস শেখ আতাহার হোসেন, এপিএস মির্জা আশফাক হোসেনসহ কর্মকর্তারা হাসপাতালে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। বিদেশে অবস্থানরত মন্ত্রীর পক্ষে পিএস শেখ আতাহার জানান, ধর্ষিত শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিশুটির চিকিৎসা সহায়তার পর চিকিৎসাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বহনের কথা জানিয়েছেন ফিজার। মন্ত্রী জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান পিএস আতাহার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে শিশুটির সুচিকিৎসার্থে গাইনি ও অবসট্রেটিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ ফেরদৌসী আক্তার লিপিকে প্রধান করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত ৯ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা ওসিসিতে এসে শিশুটির সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করেন। ঢামেক হাসপাতালের ওসিসির সমন্বয়কারী ডাঃ বিলকিস জানান, শিশুটির গোপনাঙ্গের কাটা জায়গায় ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, শারীরিক ও মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত শিশুটি ওসিসির অন্যান্য রোগী দেখলে ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। এমনকি চিকিৎসক-নার্সদের দেখলেও। ডাঃ বিলকিস জানান, এজন্য বেশিরভাগ সময়ই তাকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা ওসিসিতে এসে শিশুটিকে দেখে গেছেন। কমিটির সদস্য ওসিসি সমন্বয়কারী ডাঃ বিলকিস জানান, ভর্তির পর থেকেই শিশুটির চিকিৎসা চলছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ শেষে কিছু ওষুধ পরিবর্তন করে দিয়েছেন। বোর্ড সদস্যরা এক সপ্তাহ পর ফলোআপ চিকিৎসা দেবেন। তিনি জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে অন্য রোগীদের থেকেও আলাদা রাখা হয়েছে। তার বেডের পাশে একটি পর্দা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। ইনফেকশন ঠেকাতে ওসিসিতে রোগীর স্বজনদের প্রবেশাধিকারও সংরক্ষিত করা হয়েছে। ৯ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হচ্ছেন শিশু সার্জারির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ আশরাফুল হক কাজল, ইউরোলজি প্রধান অধ্যাপক ডাঃ আমানুর রসুল, নিউরোসার্জারি প্রধান জিল্লুর রহমান, শিশু বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সাঈদা আনোয়ার, বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, মানসিক রোগ বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুন, এ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোজাফফর হোসেন। গত ১৮ অক্টোবর পার্বতীপুরের জমিরহাট তকেয়াপাড়া গ্রামে বর্বরোচিত ওই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ১৯ অক্টোবর ভোর ছয়টায় বাড়ির পাশের হলুদক্ষেত থেকে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় প্রথমে উদ্ধার করা হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে রংপুর মেডিক্যালে (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে মঙ্গলবার বেলা এগারোটায় ঢাকা মেডিক্যালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে ভর্তি করা হয়। শিশুটির মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সারা শরীরে কামড়ের দাগ এবং উরু ও গোপনাঙ্গে সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষত রয়েছে। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিশুর বাবা গত ২০ অক্টোবর মাদকসেবী সাইফুল (৪১) ও আফজাল কবিরাজকে (৪৭) আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ধর্ষক সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পার্বতীপুর থানা পুলিশ। তবে কবিরাজ এখনও পলাতক।
×