ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় ‘কায়ান্ট’ দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

ঘূর্ণিঝড় ‘কায়ান্ট’ দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘কায়ান্ট’ দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনাও দূর হয়ে গেছে। হেমন্তের বিকেলে হঠাৎ আকাশভাঙ্গা বৃষ্টিতে রাজধানীর রাস্তাঘাট ও অলিগলি হয়ে ওঠে কর্দমাক্ত। ঢাকায় রেকর্ড ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বিকেলের এই বৃষ্টিতে বেশি দুর্ভোগে পড়ে বাসায় ফেরা নগরীর কর্মজীবী মানুষ। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় সাময়িক জলাবদ্ধতা। আজ শুক্রবারও দেশে বৃষ্টি থাকতে পারে। ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় সমুদ্রবন্দরগুলোকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত নামিয়ে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে (২১নং) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানানো হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৩৫ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৯০ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৯৫ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিমি যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি শুরুতে পানির উষ্ণতা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে মিয়ানমারের দিকে এগোলেও সোমবার তা উল্টো ঘুরে উত্তর-পশ্চিম দিকে ভারতের বিশাখাপত্তম উপকূলের দিকে এগোতে শুরু করে। এরপর মঙ্গলবার সকালে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। শুরু থেকেই বিচিত্র আচরণ করতে থাকা এই ঘূর্ণিঝড় দক্ষিণ পশ্চিমে সরে গিয়ে শুক্রবার বা শনিবার নাগাদ অন্ধ্র উপকূলের কাছকাছি পৌঁছাতে পারেন বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদরা। কিন্তু উপকূলে আঘাত হানার আগেই ঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়লেও এর প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার দাপট চলতে পারে আগামী দুদিন। বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনে ঘূর্ণিঝড় ‘কায়ান্ট’ দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কথা জানানো হয়। এদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীবাসীর সকাল শুরু হয় বৃষ্টির মধ্য দিয়ে। মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত চলতে থাকে টানা দু’ঘণ্টা ধরে। তারপর থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে রাত পর্যন্ত। সকালে বৃষ্টিতে প্রথমে দুর্ভোগে পড়েন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসগামী নগরবাসীরা। ঝিরঝিরে বৃষ্টি, আবার কখনও মুষলধারে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটেছেন তারা। বৃষ্টি উপক্ষো করেই সকাল সাড়ে ন’টায় মগবাজার মোড়ে কর্মজীবী মানুষের ভিড়। নিকটস্থ দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রীবাহী বাহনের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। তাদের অনেকের হাতে ছাতা নেই। সামনে পেয়েও বৃষ্টির কারণে তাদের কেউ কেউ বাসে উঠতে পারেননি। ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের কারণে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মগবাজার মোড় থেকে মালিবাগ, শান্তিনগর এলাকার রাস্তাঘাট। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। বৃষ্টির পানিতে ভরে যায় ওই সব খানাখন্দ। এসব জায়গায় পা রাখতে গিয়ে অনেক পথচারীই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এভাবে বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে হাজারীবাগের নিম্নাঞ্চল, রাজধানী সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, ধানম-ির অনেক স্থানেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পুরান ঢাকা, পীরেরবাগ, সেনপাড়া পর্বতা, শেওড়াপাড়া, আদাবর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, মিরপুর, টিকাটুলি, বাসাবো, মুগদা, মধুবাজার, শ্যামলী, রামপুরা, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমশ শক্তিহীন হয়ে এগুচ্ছে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের দিকে। সেখানে আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকলেও ব্যাপক ক্ষতি সাধানের মতো শক্তি অবশিষ্ট নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
×