ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ চলছে

ব্লু ইকোনমির সুফল পাওয়ার কৌশলপত্র চূড়ান্ত হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

ব্লু ইকোনমির সুফল পাওয়ার কৌশলপত্র চূড়ান্ত হয়নি

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নিষ্পত্তির পর যে অভূতপূর্ব বিজয় এসেছে তা নিয়ে এখনও কোন কৌশলপত্র চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ চলছে বলে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে ধারণা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নিজস্ব অর্থে বা ঋণে বা ভাড়ায় সর্বাগ্রে প্রয়োজন অত্যাধুনিক জরিপ জাহাজের কাজ শুরু করা। এ থেকে বেরিয়ে আসবে গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের মালিকানায় থাকা বিভিন্ন ধরনের জলজ ও খনিজসম্পদের পরিমাণ ও কোন্ কোন্ অংশে এসব সম্পদ রয়েছে তার দিকটি। ভারত ও মিয়ানমারের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকার ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারপক্ষে ইতোমধ্যে ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে ১৮টি সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত এখনও পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ পর্যায়ে রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির কর্মসূচীও। সমুদ্রে মৎস্য জরিপ চালানোর জন্য মালয়েশিয়া থেকে ‘মিন সন্ধানী’ নামের একটি জরিপ জাহাজ কেনা হয়েছে। এটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। অপরদিকে, সমুদ্রের তলদেশসহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জার্মানি থেকে আরেকটি জরিপ জাহাজ ক্রয় করা হয়েছে, যা এখনও এসে পৌঁছেনি। সমুদ্রে মৎস্যের পাশাপাশি যেসব সম্পদ রয়েছে সেগুলো আহরণে প্রয়োজন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। সমুদ্রের তলদেশে কী পর্যায়ের সম্পদ রয়েছে এবং কোথায় তা চিহ্নিত করতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন জরিপ। জরিপকাজ সম্পন্ন করেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে পরবর্তী করণীয় নিয়ে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা বলা হলেও তা এক ধরনের ধীরগতিতে চলছে বলেই প্রতীয়মান। অপরদিকে, আমাদের সমুদ্রসীমাসংলগ্ন মিয়ানমার ও ভারত বহু আগে থেকে সম্পদ তথা তেল, গ্যাস আহরণ শুরু করে বিপুল অঙ্কের অর্থের মুনাফার দিকটি খুঁজে নিয়েছে। দেশে দীর্ঘদিন যাবত মৎস্য গবেষণার জন্য কোন জরিপ জাহাজ ছিল না। আপাতত যে একটি জাহাজ মালয়েশিয়া থেকে কেনা হয়েছে এটিরও গভীর সমুদ্রে যাওয়ার সক্ষমতা নেই। ফলে গভীর সমুদ্রে মাছের জরিপ হওয়ার পথ সুগম হচ্ছে না বলে মৎস্যসম্পদ নিয়ে অন্ধকারেই থাকতে হচ্ছে। মৎস্যসম্পদ জরিপ নিয়ে আরেকটি জাহাজ এসেছে। এ জাহাজ শুধু ইলিশ নিয়ে জরিপকাজ সম্পন্ন করে থাকে। বর্তমান মৌসুমে যে ২২ দিনের জন্য ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এ সময়ে ওই জাহাজটি বর্তমানে গবেষণা ও জরিপকাজে নিয়োজিত রয়েছে। গভীর সমুদ্রে মৎস্য এবং এর পাশাপাশি বিভিন্ন খনিজসম্পদ নিয়ে জরিপকাজের চিন্তাভাবনা থাকলেও তা চলছে অনেকটা দুর্বল গতিতে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান জানান, সমুদ্র বিজয়ের পর চট্টগ্রাম থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল মহি সোপানের তলদেশে সব ধরনের সম্পদের মালিকানা বাংলাদেশের। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালত থেকে সমুদ্রসীমা নিয়ে যে রায় পেয়েছে তা আরেকটি বাংলাদেশের সমান বলে চিহ্নিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের গভীর এলাকায় রয়েছে মৎস্যসহ বিভিন্ন খনিজসম্পদ। এ সম্পদ সুষ্ঠুভাবে আহরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করতে পারবে বলে ইতোমধ্যে বৈজ্ঞানিক ধারণা ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ করা হচ্ছে, নতুন সমুদ্রসীমা চিহ্নিত হওয়ার পর যেখানে এখনও জরিপকাজের জন্য জাহাজই আনা যায়নি, সেক্ষেত্রে জরিপ সম্পন্ন করার পর আহরণ পর্যায়ে যেতে কত বছর লাগবে তা অগ্রিম বলাও মুশকিল। বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশী সীমানা অভ্যন্তরে প্রায় পৌনে ৫শ’ প্রজাতির মৎস্য, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া ও কচ্ছপ, ১৩ প্রজাতির প্রবালসহ যে জলজসম্পদের অবস্থান রয়েছে বলে বলা হয়ে থাকে এখনও তা বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তি পায়নি। এর পাশাপাশি যে খনিজসম্পদ রয়েছে তা এখনও অনাবিষ্কৃত।
×