ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনসায়াহ্ন হোক স্বস্তিময়;###;আহমেদ রউফ

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ প্রবীণের সম্মান

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ প্রবীণের সম্মান

বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কী আকুতি! চলার পথে যখন দেখি একজন বৃদ্ধ মানুষ তার বহন ক্ষমতারও বাইরে একটি কষ্টকর কাজ করছে। মনে মনে ভাবি, সে কি তার ন্যায্য মুজুরিটুকু পাচ্ছে, নাকি এখানেও চলছে খেটে খাওয়া মানুষের ওপর অমানবিক অনাচার? ঠিক তখনই মনের ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। বাবার বয়সী একজন মানুষ চোখের সামনে দিনের পর দিন কাজ করছে দেখছি কিন্তু কিছু করতে পারছি না। এটা আমাদের সন্তানের জন্য কতটা লজ্জা আর যন্ত্রণার তা যদি আমরা বুঝতে পারতাম তাহলে হয়ত এই বৃদ্ধ বয়সে আমাদের বাবা মাকে কাজ করে খেতে হতো না; বা বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হতো না। এখন আমার ছেলে বা মেয়ে ফোন করে বলে, আব্বু আমার জন্য ‘মজা’ নিয়ে আসবে কিন্তু আসার সময়। উত্তরে আমরা কখনই বলি না- না... আনতে পারব না, আমার কাছে টাকা নেই। আমার বাবা মাও যে একদিন এমনভাবে নিজে না খেয়ে আমাদের খাইয়েছে। সেই বাবা মা যখন ফোন করে বলে, বাবা কেমন আছিস? ভালো। কেন ফোন দিয়েছো বল। আমার খুব কাজ! এখন বেশিক্ষণ কথা বলতে পারব না। তখন কি আর বাবা মায়ের চাওয়ার কিছু থাকে? থাকে না। আমি বলতে চাচ্ছি বর্তমানে নিজের ঘরেই প্রবীণদের তেমন কদর নেই। বাইরে আর কতটা। একটা সময় দেখতাম বড়রা কোথাও বসলে ছোটরা সম্মান দেখিয়ে অন্য রাস্তায় চলে যেত আর এখন? সরকার প্রবীণদের কল্যাণে পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু বয়স্ক ভাতা তাদের হাতে পৌঁছানোর আগেই রাঘব বোয়ালদের হাতে চলে যায়। এদেশে ভিক্ষুকদের যদি গণনা করা হয়, তাহলে এমন অনেক ফকির পাওয়া যাবে যেখানে রাঘব বোয়ালের দলই ভারি হবে। আমার দেখায় বা আমার চোখে প্রবীণদের তেমনভাবে কেউ সম্মান দেয় না। যারা পায় তারা হয়ত সোনার চামচ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল। এখন প্রশ্ন হলো অসহায় এমন অনেক প্রবীণ আছে যাদের ঘরেও শান্তি নেই এমন কি বাইরেও না। এমন সব অসহায় প্রবীণদের নিয়ে হয়ত বেসরকারীভাবে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠছে, কিন্তু সরকারীভাবে তেমন কোন আশ্রয়স্থল বা নিবাস কি রয়েছে যেখানে তারা জীবনের শেষ সময়টুকু হেসে খেলে পার করবে? সরকারের সদিচ্ছায় প্রবীণদের অন্তিম সময়টুকু স্বস্তিময় হয়ে উঠতে পারে। ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ থেকে
×