ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অপুষ্ট শিশু পায় না বুকের দুধ

সন্তান নিয়ে বিপাকে কিশোরী মা কারিমা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

সন্তান নিয়ে বিপাকে কিশোরী মা কারিমা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৪ অক্টোবর ॥ পাঁজরের হাড় গোনা যায় সহজেই। দেহের শিরা উপশিরা গাছের শেকড়ের মতো জেগে আছে। গায়ের চামড়া বৃদ্ধ মানুষের মতো কুচকে গেছে। নয় মাস বয়সী শিশু আব্দুর রহমানের পরিণতি যে কী, তা কেউ বলতে পারছেন না। কিশোরী মা কারিমা নিজেই নিজের ভালমন্দ বুঝতে পারে না। সেই অনুভূতি পরিলক্ষিত হয়নি তার কথাবার্তায়। শুধু জানাল, বুকের দুধ পায় না সন্তান। বাইরে থেকে দুধ কিনবে সে সঙ্গতি নেই। দেড় মাস হয়েছে স্বামী রুহুল আমিন কোন খোঁজখবর নেয় না। খাওন দেয় না। তিন মাস ধরে শিশু রহমানের এ অবস্থা চলছে। কারিমার দাবি, জন্মের পর ভালই ছিল। জ্বর, টাইফয়েড কিংবা নিউমোনিয়া হয়েছে। নাকি অপুষ্টির শিকার তাও স্পষ্টভাবে জানাতে পারেনি কিশোরী মা কারিমা। চরচাপলী গ্রামে এ শিশু ও তার কিশোরী মায়ের চরম বিপদাপন্ন অবস্থা দেখা গেছে। ৫ম শ্রেণীতে পড়ার এক বছর পরেই বিয়ে দেয় বাবা মফেজ হাওলাদার। স্থানীয় বিয়ের রেজিস্ট্রার (কাজী) আনম আনোয়ার হোসেন কাগজে-কলমে কারিমার বয়স ১৮ করে রেখেছেন। ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর ওই কাজী বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। সাত সন্তানের মধ্যে কারিমা তৃতীয়। চরচাপলী গ্রামে বাড়ি মফেজ হাওলাদারের। কামলা মানুষ। স্ত্রী মাহিনুর মাটি কাটার কাজ করে। এখন বেকার। ওই বয়সেই বিয়ে দেয়া হয় ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের বরকতিয়া গ্রামের মন্নান জোমাদ্দারের ছেলে হারুন জোমাদ্দারের সঙ্গে। বিয়ের এক বছর তিন মাসের মধ্যেই জন্ম নেয় রহমান। শিশু বয়স না যেতেই কারিমা মা হয়ে যায়। দুর্ভাগ্য তখন থেকেই তার পেছনে তাড়া করছে। পাষ- স্বামী মারধর করত। বাবার দেয়া দুইটি গরু বিক্রি করে দিয়েছে। খাবার দিত না। অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করলেও খাবার জুটত না। মাঝেমধ্যে শুধু আলু কিনে দিত হারুন। কারিমার ভাগ্যে জুটেনি স্বাস্থ্য বিভাগের মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিমের কোন সুবিধা। জোটেনি মাতৃত্বকালীন ভাতা। জোটেনি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ছায়াতলে একটু ঠাঁই। সবশেষ ১০ টাকা কেজি দরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর কার্ডও জোটেনি। কিশোরী মেয়ে সন্তান নিয়ে এমন চরম দুরবস্থায় পড়ায় বাবা-মা নিজের জোড়াতালি দেয়ার সংসারে নিয়ে আসেন। প্রায় এক মাস সেখানে। স্থানীয় চাপলী বাজারে এক চিকিৎসককে দেখিয়েছেন। কিছু ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। স্থানীয় যুবক মশিউর রহমান কিছু ওষুধ কিনে দিয়েছেন। কিন্তু মায়ের বুকের দুধ পায় না কঙ্কালসার শিশু রহমান। সবার জন্য ভাত জুটলে তা পিষে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন কিশোরী মা কারিমা ও নানি মাহিনুর। কিন্তু রহমান তা খায় না। কিংবা খেতে পারে না। দুধ কোথায় পাবে। কীভাবে জোটাবে তা ভাবতেও পারছে না অসহায় কিশোরী মা কারিমা।
×