ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

২০তম জাতীয় সম্মেলনে ঘোষণা

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুতসহ দশ খাতে অগ্রাধিকার দিল আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুতসহ দশ খাতে অগ্রাধিকার দিল আওয়ামী লীগ

এম শাহজাহান ॥ উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ। সর্বস্তরে উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দশটি খাত অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন কর্মকৌশল ঘোষণা করেছে। এগুলো হচ্ছে- দারিদ্র্য বিমোচন এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান, বিদ্যুত ও জ্বালানি, তথ্য প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও আইসিটি খাত উন্নয়ন, বৃহৎ প্রকল্প (মেগাপ্রজেক্ট) বাস্তবায়ন, ব্লু-ইকনোমি-সমুদ্র সম্পদভিত্তিক উন্নয়ন, বেসরকারী খাত ও বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ ও গণমুখী দক্ষ জনপ্রশাসন নিশ্চিত করা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আশা করছে, এই দশ কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সমপর্যায়ে পৌঁছবে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে- দেশের সব উন্নয়ন হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অগ্রগতি অব্যাহত রাখা হবে। ‘রূপকল্প ২০২১’ কে সামনে রেখে ২০০৯ সালে উন্নয়নের যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল তার গতি ও পরিধি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রয়োজনীয় ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো বিনির্মাণ, বিদ্যুত, জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও বেসরকারী খাতের বিকাশোপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশ আজ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে, রচিত হয়েছে সুউচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ। রূপকল্প-২১-এর ধারাবাহিকতায় এ মেয়াদের মধ্যেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন-জাতিকে উপহার দেবেন একটি নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০৪১’। এ নতুন রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও উন্নত জনপদ। বাঙালী হবে সারাবিশ্বের মাঝে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত জাতি। রূপকল্প-২১ এবং এসডিজি বাস্তবায়নের প্রয়াসকে সামনে রেখে উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য গৃহীত দশ অগ্রাধিকার খাত বাংলাদেশের ভবিষ্যত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচী প্রণয়ন সহায়ক হবে। দারিদ্র্য বিমোচন এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধান ॥ দারিদ্র্য বিমোচন করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার প্রাপ্ত লক্ষ্যের অন্যতম। এই লক্ষ্য অর্জনে উচ্চতম প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা এবং সমাজে ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা আওয়ামী লীগের বিঘোষিত নীতি। ইতোমধ্যে হতদরিদ্রের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিস্তৃত করা হয়েছে। ফলে দারিদ্র্য কমেছে ১০ শতাংশ। হতদরিদ্র, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চলমান প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করা হবে। দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরেপনা সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করা হবে। দারিদ্র্যসীমা ও চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২৩.৫ ও ১১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের সংখ্যা ২.২ কোটির নিচে নামানো হবে। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য অন্যান্য পদক্ষেপের সঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত প্রকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ আশ্রয়ণ, গৃহায়ন, আদর্শ গ্রাম ও ঘরে ফেরা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে যে বিস্ময়কর রেকর্ড সৃষ্টি করেছে তা অব্যাহত থাকবে। সাধারণ মানুষ যাতে ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাবার গ্রহণ করতে পারে, সেজন্য ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত খাদ্য নিরাপত্তা কর্র্তৃপক্ষ শক্তিশালী করা হবে এবং নিরাপদ খাবার সম্পর্কিত সকল আইন প্রয়োজন মাফিক সংশোধন করে বাস্তবায়ন করা হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ॥ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগমুক্ত জীবন যাপনের সুব্যবস্থা করা আওয়ামী লীগের ঘোষিত নীতি। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচী আরও সুবিস্তৃত ও সুবিন্যস্ত করা হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সার্ভিস প্রত্যন্ত গ্রাম, শহর, বস্তি ও নগরবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এ জন্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও, বেসরকারী খাতসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে সাক্ষরতার হার শতভাগ করা হবে। ইতোমধ্যে শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম অবকাঠামো প্রদান, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রায়ণের লক্ষ্যে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ॥ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্জিত উন্নয়নের পথে এখন সবচেয়ে বড় বাধা আইনের শাসন, শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং জনজীবনের নিরাপত্তাবিনাশী বিএনপি-জামাত জোটের ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিএনপি-জামাত চক্র। গণতন্ত্রের নামে তারা অরাজকতা, পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ শান্তি বিনাসী সকল অপকর্মের ইন্ধন যোগাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সুস্পষ্ট অবস্থান এসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আইনী পন্থায় যে কোন ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ কর্মকা-কে প্রতিহত করার জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন সুনিশ্চিত করা হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ এবং জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে। বিদ্যুত ও জ্বালানি ॥ বিদ্যুত ও জ্বালানির ক্ষেত্রে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখা ও আরও দ্রুত করা হবে। বিদ্যুত ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত সার্বিক জ্বালানি নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে তেল, গ্যাস, কয়লা, জলবিদ্যুত, বায়োগ্যাস ও জৈবশক্তি, বায়ুশক্তি ও সৌরশক্তিসহ জ্বালানির প্রতিটি উৎসের অর্থনৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের আওতায় গৃহীত বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বেসরকারী খাতে বৃহৎ বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পুরনো বিদ্যুতকেন্দ্র মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহোলিংয়ের ব্যবস্থা করে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ২০২১ সালে মাথাপিছু বিদ্যুত উৎপাদন ৫১৪ কিলোওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বর্তমানে ৩৭১ কিলোওয়াট। ২০২১ সালে বিদ্যুতের আওতা ৯৬ শতাংশে উন্নীত করা হবে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০২১ সালে বিদ্যুত উৎপাদনে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার মেগাওয়াট। নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ভারত-বাংলাদেশে-মিয়ানমারের ত্রিদেশীয় গ্যাস পাইপ লাইনে অংশগ্রহণ করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও আইসিটি ॥ শেখ হাসিনার অঙ্গীকার অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শহরে গ্রামে ভূমিতে আকাশে অন্তরিক্ষে সর্বত্র ডিজিটাল প্রযুক্তি পৌঁছে গেছে এবং সম্প্রসারিত হচ্ছে।্ এর ফলে একদিকে যেমন মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ছে, তেমনই অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক অর্থনৈতিক, শিক্ষা-সং¯ৃ‹তি সকল কর্মকা-ে এসেছে গতিময়তা, বাড়ছে দক্ষতা। আওয়ামী লীগ এ অভূতপূর্ব তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের সক্রিয় সাথী এবং এর উত্তরোত্তর সম্প্রসারণে দলীয়ভাবে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট’ পুরস্কার লাভ করেছেন। আওয়ামী লীগ এজন্য গর্বিত এবং তথ্যপ্রযুক্তির সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। বৃহৎ প্রকল্প (মেগাপ্রজেক্ট) বাস্তবায়ন ॥ দেশের উন্নয়নের চাকায় নতুন গতি সঞ্চারের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রয়োজন হয়। অর্থনীতির ভাষায় যাকে ‘সজোরে ধাক্কা’ (বিগপুশ) বলা হয়। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দশটি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- স্বপ্নের পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা দ্রুত গণপরিবহন, এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট, মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯.৫ কিমি রেললাইন স্থাপন। আওয়ামী লীগ এ সকল মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ ও ভূমিকা পালনে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। ব্লু-ইকোনমি-সমুদ্র সম্পদভিত্তিক উন্নয়ন ॥ শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যের সুবর্ণ ফসল মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি। এর ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইল এর মধ্যে সমুদয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও তার বাইরে মহাদেশীয় বেষ্টনী এবং একইভাবে ভারতের সঙ্গে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহাদেশীয় বেষ্টনীর মধ্যে সকল প্রকার সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমুদ্রখাত, যা ব্লু-ইকোনমি নামে অভিহিত, বাংলাদেশের উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সমুদ্রবন্দর, জাহাজ নির্মাণ, নৌচলাচল, সাগরে মৎস্য চাষ, জলজ উদ্ভিদ, তেল গ্যাস, খনিজ সম্পদ আহরণ, সমুদ্রে জেগে ওঠা নতুন চর, সামুদ্রিক পর্যটন শিল্প ইত্যাদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। বেসরকারীখাত ও বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ॥ উন্নয়নের সক্রিয় অংশীদার হিসেবে বেসরকারী খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিখাত যাতে নির্বিঘেœ ব্যবসা-বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন, আয়বর্ধন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, সেজন্য আওয়ামী লীগ সবসময় নীতিগত সমর্থন ও পরামর্শ দিয়ে আসছে। বেসরকারী খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার লাভের জন্য বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত ঋণদান, কর ও শুল্কনীতির প্রতি সমর্থন অব্যহত থাকবে। ইতোমধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ, ও বিদ্যুত ব্যবস্থায় যে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে, তাকে আরও ত্বরান্বিত করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা ॥ সুশাসন প্রতিষ্ঠাই হবে আওয়ামী লীগের অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সুশাসন ব্যতিরেকে অর্থনৈতিক মুক্তি একেবারেই অসম্ভব। সুশাসন প্রতিষ্ঠার ৪টি পূর্বশর্ত যার অন্যতম হচ্ছে দুর্নীতি দমন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এ বিষয়ে দলীয় কার্যক্রম ইতোমধ্যেই তুলে ধরা হয়েছে। অন্য তিনটি শর্ত হচ্ছে-আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা বিধান, রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে গণতন্ত্রচর্চা নিরঙ্কুশ করা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধে জনহিতে নিবেদিত নির্বাহী বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং একটি জবাবদিহিতামূলক, পেশাদারি ও দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তোলা। রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরের ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনোপার্জিত আয়, ঋণখেলাপী, বিলখেলাপ, করখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার করে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াফত করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ সুশাসনেরও অন্যতম পূর্বশর্ত। এই ধারা সংহত ও অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনকে আরও শক্তিশালী করা হবে ও প্রশাসনিক সংস্কার সাধন করা হবে। গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ ও গণমুখী দক্ষ জনপ্রশাসন ॥ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র পরিচালনার অন্তরায়সমূহ দূর করেছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকাশ ও কার্যকারিতার ক্রমাগত বৃদ্ধি বিশ্বজনীনভাবে স্বীকৃত ও পরীক্ষিত নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলাই হবে আওয়ামী লীগের ব্রত। নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন পদ্ধতির চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া আওয়ামী লীগ অব্যাহত রাখবে। দেশের ইতিহাসে এ সরকারের আমলে প্রথম রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, এ ধারা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সচিবালয়, নিজস্ব বাজেট বরাদ্দ ও জনবল থাকবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক, নির্বাচনী আইন ও বিধিমালার সংশোধন বিবেচনা করা হবে।
×