ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২ শ’ কোটি ডলার

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

২ শ’ কোটি ডলার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে আরও নিবিড়ভাবে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে বিশ্বব্যাংক। এর অংশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। আগামী তিন বছরে বাংলাদেশ এই সহায়তা পাবে। সফরের শেষ দিন মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। এর আগে সোমবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শিশুর অপুষ্টি রোধে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন জিম ইয়ং কিম। এ হিসেবে ঢাকা সফরে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট মোট ৩০০ কোটি ডলারের নতুন সহায়তা ঘোষণা করলেন। আগামী ডিসেম্বরে এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হতে পারে বলে মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে এ সময় সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ্যানেট ডিক্সন, কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) ডিরেক্টর মিনজিতসু আলামায়েতু, ঢাকা অফিসের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তিন দিনের সফর শেষে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার রাতে ঢাকা ত্যাগ করেন। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো, বিদ্যুত উৎপাদন, যোগাযোগ এবং জলবায়ু খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। বিশ্বব্যাংকের এ বিনিয়োগ পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের নেয়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে এই বিনিয়োগ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়াকে বেগবান করবে। এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্বের ১৮৯টি সদস্য দেশই বিশ্বব্যাংক পরিচালনা করছে। সেখানে বাংলাদেশেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। তাই বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু হওয়ার আশঙ্কা নেই। সদস্য রাষ্ট্রের উন্নয়নই বিশ্বব্যাংকের মূল লক্ষ্য। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) ফান্ড থেকে সহায়তা আরও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, গত চার বছরে আইডিএ প্রতিশ্রুতি বেড়েছে। এ পর্যন্ত আইডিএ-এর প্রতিশ্রুতি রয়েছে ৯৭০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১২ সালে এটি ৪০০ কোটি ডলার ছিল। একইসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) বিনিয়োগও বেড়েছে। গত অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ৬৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১২ সাল পর্যন্ত এটা ছিল ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আগামীতে এই সহায়তার পরিমাণ আরও বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বরিশাল সফর সম্পর্কে বলেন, সেখানে স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার ও সাইক্লোন সেল্টার একই ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। এটি শিক্ষণীয় বিষয়। প্রশংসা করে তিনি বলেন, সামনে বাংলাদেশের জনগণের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, দুর্নীতির ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের অবস্থান জিরো টলারেন্স। প্রত্যেক প্রকল্প দুর্নীতিমুক্ত থাকা উচিত। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা বিশ্বব্যাপী একই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বেসরকারী খাতে অধিক বিনিয়োগের প্রয়োজন। এক্ষত্রে বাংলাদেশ পার্শ¦বর্তী দেশগুলোর চেয়ে এখনও পিছিয়ে রয়েছে। এজন্য ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ সংক্রান্ত নীতি সংস্কার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। জিম ইয়ং কিম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ দরকার। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত করবে। এর আগে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ে যেতে বাংলাদেশ অনেক কিছু মোকাবেলা করছে। তিনি আরও বলেন, আমরা তিনটি বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এগুলো হচ্ছে, বাণিজ্য পরিবেশ উন্নয়নে নীতির সংশোধন করা। বর্তমান পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় বিদেশী বিনিয়োগ বাংলাদেশে কম আসছে। বেসরকারী খাতে যদি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হয়, সেক্ষেত্রে অবকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্পে অর্থায়ন বেশি করতে হবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগ, সরকারী ব্যাংক, রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া, প্রশাসনিক কার্যক্রম গতিশীল এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রেসিডেন্ট কিম আরও বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সাইক্লোন ও বন্যাকে হুমকি মনে করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের দিক থেকে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক সহায়তা করবে। মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছলে বিশ্বব্যাংকের ঋণের সুদের হার সমন্বয় করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জিম ইয়ং কিম বলেন, মধ্যম আয়ের দেশের জন্য উচ্চ সুদ এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে শূন্য সুদেও ঋণ দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে সুদের হার সমন্বয় করা হবে। তবে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের রেকর্ড ভাল। সুদ সমন্বয় করা হলেও সেটি ২ শতাংশের বেশি হবে না। জঙ্গী হামলার পর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগে বিশ্বব্যাংক ঝুঁকি মনে করছে কিনা সংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বের কোন দেশেই সন্ত্রাসের ঝুঁকিমুক্ত নয়। ফ্রান্স, বেলজিমান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোও সম্প্রতি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। তাই নিরাপত্তা ঝুঁকি বাংলাদেশে বিনিয়োগের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। নিজের সফরকালীন বাংলাদেশ সরকারের দেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থারও ভূয়সী প্রশংসা করেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। বিকেলে সংবাাদ সম্মেলনের আগে জিম ইয়ং কিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। আর সকালে তিনি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প পরিদর্শনে বরিশাল সফর করেন।
×