ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাহিদুল আলম জয়;###;‘বাফুফে পচে গেছে, ফুটবল মরে গেছে’

এ আন্দোলনের শেষ কোথায়?

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

এ আন্দোলনের শেষ কোথায়?

‘লজ্জা, লজ্জা, লজ্জা। এ লজ্জা রাখি কোথায়’, ‘আমাদের ফুটবল আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’, ‘বাফুফে পচে গেছে, ফুটবল মরে গেছে’Ñ এ রকম অসংখ্য সেøাগানের সাক্ষী এখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ভুটানের কাছে হেরে বাংলাদেশের ফুটবলের ‘মত্যু’ হওয়ার পর ফুঁসে উঠেছে ফুটবলাঙ্গন। ক্ষমাহীন ব্যর্থতার জন্য বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ কমিটির সবাইকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছেন সবশ্রেণীর ফুটবলপ্রেমীরা। ভুটান লজ্জার পর প্রতিদিনই মতিঝিলে বাফুফে ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছেন ফুটবলপাগল জনতা। নিরাপত্তাকর্র্মীরা ভবনে ঢুকতে না দিলেও প্রধান ফটকের বাইরে বিক্ষোভ করে চলেছেন সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলাপ্রেমী সংগঠন। তবে এসবে কর্ণপাত করছে না বাফুফে। রবিবার সে প্রমাণই মিলেছে। ওইদিন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোন অন্যায় করেননি। এমন হতেই পারে, বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলিয়ে দেশগুলোও সাফল্যের জন্য সংগ্রাম করে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বাফুফে প্রধান আরেকবার প্রতিশ্রুতির ডালি সাজিয়েছেন। বিক্ষোভ-কারীদের তিনি ‘ফুটবলের কেউ না’ অভিহিত করে তাদের আন্দোলনকে ‘নাটক’ বলেছেন। বাফুফে সভাপতির এমন কথায় বেজায় চটেছেন আন্দোলনকারীরা। প্রতি-ক্রিয়া জানাতে গিয়ে আবুল বাশার নামের এক ফুটবলপ্রেমী বলেন, বেহায়া না হলে এমন কথা বলতেন না বাফুফে সভাপতি। তিনিই তো নাটক সাজাচ্ছেন। কতবার আর প্রতিশ্রুতি দেবেন। আগে অনেকবার দিয়েছেন, এবার আরও একবার প্রতিশ্রুতির নাটক সাজালেন। আমরা ফুটবলকে ভালবাসি বলেই এর ধ্বংস দেখে কষ্ট পাচ্ছি। তিনি কিভাবে আমাদের ‘ফুটবলের কেউ না’ বলেন। তাহলে কি ফুটবলের জন্য দর্শক-সমর্থকের প্রয়োজন নেই? আসলে উনি এখন উন্মাদ হয়ে গেছেন। চেয়ার ঠিক রাখার জন্য পাগলের প্রলাপ বকছেন। বাফুফের এই কমিটি যে চেয়ারের জন্য পাগল সে প্রমাণ তারা আরেকবার রেখেছে সংবাদ সম্মেলনে। চাপে পড়ে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে ভুটানের বিরুদ্ধে হারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও ক্ষমা চাওয়া বা অনুতপ্ত হননি বাফুফের কর্তারা। বরং ইনিয়ে-বিনিয়ে নিজেদের স্বপক্ষে কথা বলেছেন। এর একটাই উদ্দেশ্য, ব্যর্থতা ধামাচাপা দেয়া। এমন মনে করছেন ফুটবলপ্রেমী ও ফুটবল সংগঠকরা। বাফুফের কর্তাব্যক্তিরা যেদিন সংবাদ সম্মেলন করছিলেন সেদিন ভবনের গেটে বিক্ষোভ করছিলেন বিক্ষুব্ধ ফুটবল সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীরা কাজী সালাউদ্দিনসহ বাফুফের কমিটিকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান। ঢাকা ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠীর একটি ব্যানার সবার দৃষ্টি কাড়ে। কাজী সালাউদ্দিনের ছবিসহ ওই ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমাদের ফুটবল আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’। ওইদিন ব্যানার, পোস্টার, প্লেকার্ড, হ্যান্ডমাইক হাতে জড়ো হয়েছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরামের সদস্যরাও। কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে সেøাগান সেøাগানে চারপাশ মুখর করে তোলেন তারা। সেøাগানের ভাষা ছিল এ রকমÑ ‘সালাউদ্দিনের চামড়া তুলে নেব আমরা’, ‘সালাউদ্দিনের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ভুটানের কাছে হারলাম কেন, জবাব চাই দিতে হবে’। শুধু সংবাদ সম্মেলনের দিনই নয়, ভুটানের কাছে হারের পর থেকে প্রতিদিন বাফুফে ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন ফুটবলপ্রেমীরা। প্রতিদিনই তারা নিত্যনতুন সেøাগান দিয়ে ‘গদি’ ছাড়ার আহ্বান জানাচ্ছেন বাফুফে কর্তাদের। ‘সালাউদ্দিনকে অভিনন্দন, সামনে আমরা র‌্যাঙ্কিংয়ে ২০০ হবো’, ‘এরপরও ফুটবলাররা মৌসুমে ৫০ লাখ টাকা পাবে, হবে না কোন একাডেমি!’, ‘আর কত নিচে নামলে গদি ছাড়বেন?’, ‘মৃত ফুটবলকে শোক জানাতে এলাম’, ‘বাফুফে পচে গেছে, ফুটবল মরে গেছে’, ‘ফুটবল একাডেমির খবর কি?’ ‘বাংলাদেশের ফুটবল এখন মৃত’। বিক্ষোভকারীদের এসব সেøাগান আলোচনায় এসেছে ফুটবলাঙ্গনে। চটকদার সেøাগান নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যও করছেন অনেকে। দেশের ফুটবলের চরম অধঃপতনের সময়ে ঘরে থাকতে পারেননি তারা। কোন সংগঠনের হয়ে নয়, নিছকই ফুটবলের প্রতি ভালবাসার টানে প্রতিবাদ জানাতে বাফুফে ভবনের সামনে অবস্থান নিচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী ফুটবলপ্রেমীরা। ভুটানের মাঠে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ভরাডুবিতে ক্ষুব্ধ সমর্থকরা রসাতলে চলে যাওয়া ফুটবলকে বাঁচাতে বাফুফেতে রদবদল দাবি করছেন। টানা তিনবার বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হওয়া কাজী সালাউদ্দিন ফুটবলকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি বলেই মনে করেন সমর্থকরা। এ কারণেই সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করছেন তারা। ফুটবলারদেরও দায়ী করেছেন সমর্থকরা। দেশের প্রতি ফুটবলারদের নিষ্ঠা, ভালবাসা, দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। বিক্ষোভকারীদের একজন মুক্তার ইবনে রফিক বলেন, বাংলাদেশের ফুটবলে এমন দিন কখনও আসেনি। বর্তমান ফেডারেশনের দাবিÑখেলা সবসময় মাঠে থাকছে। কিন্তু এমন খেলা থাকার দরকার কি, যদি আমরা ভুটানের সঙ্গে হেরে আসি? এতেই বোঝা যায়, আমাদের ফুটবল সঠিক মানুষের হাতে নেই। তিনি আরও বলেন, দেখবেন, এরপরও কেউ দায় নেবে না। ফুটবলারদের দামও ৫০ লাখ টাকা থাকবে। খেলোয়াড়রা একবার অবসর নেন, আবার অবসর ভেঙ্গে ফিরে আসেন। দুদিন পর পর কোচ নিয়োগ দেয়া হয়, বিদায় করে দেয়া হয়। কোন পরিকল্পনা নেই, এভাবে তো চলতে পারে না। যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ফিফা নয়, আমরা চাই আমাদের সরকারই বাফুফে বন্ধ করে দিক! আমরা কারও পক্ষে এখানে আসিনি। আমরা একান্তই ফুটবল সমর্থক। আমাদের দাবি, দয়া করে ফুটবলকে বাঁচান! এতকিছুর পরও ব্যর্থতার দায় নিজের কাঁধে নিচ্ছেন না বাফুফে সভাপতি। তিনি নিজেদের স্বচ্ছ দাবি করে আরেকবার প্রতিশ্রুতির নাটক সাজিয়েছেন। সালাউদ্দিন বলেন, আপনারা দেখবেন, দল যখন বিশ্বকাপের বাছাইয়ে খেলতে গিয়েছে, তাদের মালয়েশিয়াতে চারদিন আগে পাঠিয়েছি। যাতে তারা মানিয়ে নিতে পারে। ভুটানেও চার দিন আগে পাঠিয়েছি। যদি আমাদের কোন গাফিলতি থাকত, তাহলে অবশ্যই এটা (দায়) নিতাম। ব্যর্থতা ঢাকতে তিনি ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ৭ গোল হজম করার প্রসঙ্গ এনে বলেন, আমি আপনাদের সঙ্গে একমতÑভুটানের হারটা খুব খারাপ হার। ব্রাজিলও নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপে ৭ গোল খেয়েছে। তাতে কিন্তু পৃথিবী শেষ হয়ে যায়নি। ফুটবলে এটা হতেই পারে। আজকে বাংলাদেশের ফুটবল সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে আছে। কিন্তু আমাদের এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বাফুফে সভাপতি আরও বলেন, এখন সমস্যা হলো, দল ভাল করছে না, খেলোয়াড়রাও ভাল করছে না। সবধরনের সুবিধা দেয়ার পরও হচ্ছে না। তার মানে, শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পেরেছি এই খেলোয়াড়রা জাতীয় দলে খেলার জন্য যথেষ্ট ভাল নয়। এটা আমি খেলার (ভুটান ম্যাচের) আগেই বুঝেছি।
×