ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেলেরা যেন বঞ্চিত না হয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

জেলেরা যেন বঞ্চিত না হয়

জেলে ও মৎস্য চাষীদের অভুক্ত রেখে বা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্য যেমন অর্জিত হবে না; তেমনি বাঙালীর জন্য প্রযোজ্য হারানো সেই প্রবাদ বাক্য ‘মাছে-ভাতে বাঙালী’ দূরত্ব দূরেই থেকে যাবে। এমন নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির মূলে ১৩ লাখ ৮০ হাজার জেলের মধ্যে তাদের জন্য বরাদ্দ চাল পেয়েছে মাত্র তিন লাখ আর আওতার বাইরে রয়েছে ১০ লাখ- এ বিষয়টি। সরকারী কোনো সিদ্ধান্তে এমন আকাশ-পাতাল পার্থক্য আর বঞ্চনা থাকবে সেটা আশা করা যায় না, মেনে নেয়ার মতোও নয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ মাছ চাষে বিশ্বে চতুর্থ স্থান লাভের খবরে দেশের ভাবমূর্তি যেমন উজ্জ্বল হয়েছে, তেমনি অর্থনীতিতেও যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। মাছ উৎপাদনে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও সাফল্যের জন্য যা যা করণীয় তা করার ফলে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মাছের নামটি হচ্ছে ইলিশ। মোট জিডিপির ১ শতাংশ আসে এই ইলিশ থেকে। এটা অবশ্যই আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্ববহ। এই ইলিশ রক্ষায় সরকারের যে পদক্ষেপ আমরা দেখেছি তা ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ না ধরার জন্য প্রতিবারই সরকারের উদ্যোগ ফলপ্রসূ। বিশেষ একটা নির্দিষ্ট সময়ে জেলেরা যাতে জাটকা ও মা ইলিশ না ধরে তার জন্য রয়েছে কঠোর আইন। দেখা গেছে এ বিষয়ে শক্ত মনিটরিং। এর ফলও পাওয়া গেছে। এবার ১২ অক্টোবর থেকে ২ নবেম্বর ২২ দিন সাগর ও নদীর মোহনায় ইলিশ ও জাটকা ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সময় নদী ও সাগর উপকূলবর্তী ইলিশ ধরা জেলেরা পড়ে আর্থিক সঙ্কটে। এ সঙ্কট উত্তরণে সরকার তাদের জন্য বরাদ্দ করেছে চাল। কিন্তু সিংহভাগ জেলেরাই থাকছে এ সুবিধার বাইরে। আবার পরিমাণও কম। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ৪০ কেজির সুপারিশ করলেও মিলছে অর্ধেক অর্থাৎ ২০ কেজি। তাও তারা নিয়মমাফিক পাচ্ছে না বলে গণমাধ্যমে খবর আসছে। যাদের জন্য বরাদ্দ তারা না পেলে তা হবে দুঃখজনক। সবক্ষেত্রে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব উদ্দেশ্য সাধনের অন্তরায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বঞ্চিত জেলেদের কেউ কেউ জীবন-জীবিকার তাগিদে আইন ভঙ্গ করে মাছ ধরছে এমন খবরও প্রকাশ পাচ্ছে। আইনের জালে আটকে তাদের কারও কারও স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও হচ্ছে ব্যাহত। যে জেলেদের মাধ্যমে ইলিশের সুদিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা তাদের বাস্তবতা যদি হয় এমন, তা হতাশাজনক। মাছ চাষী ও জেলেদের স্বাবলম্বী হওয়া খুব বেশি দূরের বিষয় নয়Ñ এমন আশার আলো আবার উঁকি দিচ্ছে। এই ইতিবাচক মুহূর্তে তারা সুযোগ-সুবিধা ও ন্যায্য পাওনা থেকে যেন বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করা জরুরী। বিশেষ করে জেলেদের যে সিংহভাগ সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধার বাইরে রয়েছে, তাদের এর আওতায় না আনলে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সাফল্যের মুখ দেখবে বলে মনে হয় না।
×