ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এবার টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকের পালা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

এবার টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকের পালা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন ব্যাট হাতে যাচ্ছেতাই সময় কেটেছে। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে অন্যতম নির্ভরতার নাম মুশফিকুর রহিম অবশ্য সেই খরা কাটিয়ে উঠেছেন এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সফরকারী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৭ ইনিংস পর অর্ধশতক পেয়েছেন তিনি। ৬৭ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেলেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। এবার সেখানেই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকের। মাশরাফি বিন মর্তুজা টানা ৬ ওয়ানডে সিরিজ জিতিয়েছেন দলকে নেতৃত্ব দিয়ে, ইংল্যান্ডের সঙ্গেও দারুণ লড়েছে বাংলাদেশ। এবার মুশফিকের পালা তার অধীনে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে দারুণ কিছু করার। সর্বশেষ টেস্টে মুশফিক অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন গত বছর জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। কিন্তু এরপর শুধু ওয়ানডে ও টি২০ খেলেছে বাংলাদেশ দল। এ সময়টাতে একেবারেই বাজে সময় কেটেছে মুশফিকের। ক্ষুদ্রতর এ দুই ফরমেটে সবমিলিয়ে সর্বমোট ২৩ ইনিংসে অর্ধশতক বঞ্চিত ছিলেন। অবশেষে সেই খরাটা কাটান তিনি তৃতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৬২ বলে ৬৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। বিপদের মুখে হাল ধরা পুরনো মুশফিককেই এদিন দেখা গেছে তার চিরাচরিত রূপে। অথচ মাঝে কি বাজে সময়টাই না কাটিয়েছেন! অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে দলে তার অপরিহার্যতা নিয়ে। ব্যাটিং ব্যর্থতার ছাপটা পড়েছিল উইকেট কিপিংয়েও। বারবার ক্যাচ মিস করা, স্ট্যাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া এবং ঠিকভাবে যেন বলগুলোও গ্লাভসবন্দী করতে সমস্যা হচ্ছিল তার আত্মশ্লাঘায় ভোগার কারণে। অথচ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির মালিক মুশফিক। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ গলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া টেস্টে ২০০ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের মিডলঅর্ডারে তিনি অন্যতম নির্ভরতা। কিন্তু মাঝে ১৪ মাস টেস্ট খেলেনি বাংলাদেশ। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলা গত বছর জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত টেস্টে ৬৫ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক। ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেটেই ব্যস্ত ছিল বাংলাদেশ। এ সময়টাতে ব্যাট হাতে দারুণভাবে ব্যর্থ ছিলেন ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ নাম পাওয়া মুশফিক। ধারাবাহিকভাবে রান করে যাওয়া, দলের বিপদের মুহূর্তে মাথা ঠা-া রেখে সাবলীল ব্যাটিং করে রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার নিয়মিত নিদর্শনের জন্যই এমন উপাধি জুটেছে মুশফিকের। এবার টেস্ট সিরিজেও তার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ দল। কারণ ভাল নেতৃত্ব গুণের পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবেই ব্যাট হাতে বেশি সফল তিনি। অধিনায়ক হিসেবে ২৪ টেস্টে ২ সেঞ্চুরি ও ৯ হাফসেঞ্চুরিসহ ৩৮.২৮ গড়ে ১৪৫৫ রান করেছেন। একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে। অথচ টেস্ট ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৩২.৩১ গড়ে ২৬৫০ রান করেছেন মুশফিক ৩ সেঞ্চুরি ও ১৫ হাফসেঞ্চুরিসহ। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরিসংখ্যানটা তেমন সুখকর নয়। ৫ টেস্টে মাত্র ২৬.৯০ গড়ে ২৬৯ রান করতে পেরেছেন দুটি অর্ধশতকসহ। সর্বোচ্চ ৯৫ রানের ইনিংস আছে ২০১০ সালের মার্চে এই সাগরিকার মাঠেই। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অবশ্য সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকই। তিনি এই মাঠে ১১ টেস্টে ৪৫.১১ গড়ে করেছেন সর্বাধিক ৮১২ রান। আছে ১টি সেঞ্চুরি ও ৫টি হাফসেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অতীত বাজে পরিসংখ্যানটার উন্নতি করার চ্যালেঞ্জও থাকবে তার। এই সিরিজের দুই ম্যাচ খেললেই তিনি তৃতীয় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০ টেস্ট খেলার মাইলফলকও স্পর্শ করবেন। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ৬১ টেস্ট খেলেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল, ৫০ টেস্ট খেলে হাবিবুল বাশার দ্বিতীয় অবস্থানে। মুশফিকের টেস্ট সংখ্যা ৪৮! অবশ্য রান করার দিক থেকে দেশের পক্ষে তালিকায় ৫ নম্বরে তিনি। আর ৮৮ রান করতে পারলে ছাড়িয়ে যাবেন আশরাফুলকে। এরপর তার ওপরে থাকবেন শুধু তামিম ইকবাল, হাবিবুল বাশার ও সাকিব আল হাসান। পাশাপাশি দলকেও নেতৃত্ব দেয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে মুশফিককে। দেশের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে সর্বাধিক ২৪ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ৪টি জয় ও ৯টি ড্র এনে দিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরা, অধিনায়কত্বের সাফল্য ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ এ সিরিজে মুশফিকের কাঁধে।
×