ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও পরী

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

আবারও পরী

স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ১৯২০ সালে গার্ডনার নামক এক ব্যক্তিকে রাইট পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পাঠান। গার্ডনার এলসি এবং ফ্রান্সিসকে দুটি ক্যামেরা দেন পরীর ছবি তুলতে। তারা তাদের তৃতীয় পরীর ছবিটি সেই সময়েই তোলে, যেখানে ফ্রান্সিসকে দেখা যায় একটি পরীর দিকে তাকিয়ে হাসতে। একটি ছবিতে এলসির সামনে একটি পরী দেখা যায়। অন্য ছবিটিতে শুধু পরীদের দেখা যায়। পরীর রহস্য! এলসি এবং ফ্রান্সিসের তোলা ছবি সাড়া জাগায় গোটা যুক্তরাজ্যে। ছবিগুলো দেখে পরীর অস্তিত্বে অবিশ্বাস করা যেমন অসম্ভব হয়ে পড়ে, তেমনি অসম্ভব হয়ে পড়ে পরীর অস্তিত্বকে মেনে নেয়াও। মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয় ছবিগুলো নিয়ে। ১৯২১ সালের পর ধীরে ধীরে পরীর রহস্যের ব্যাপারে সাধারণের আগ্রহ কমতে শুরু করে। পরবর্তীতে এলসি এবং ফ্রান্সিসের বিয়ে হয়। অনেকদিন পর একজন সাংবাদিক এলসির খোঁজ পান এবং তার কাছে পরী রহস্য সম্পর্কে জানতে চান। এলসি জানায়, পরিগুলো তার কল্পনাও হতে পারে, কিন্তু ছবিগুলো তারা সত্যিই তুলেছিল। তার এই মন্তব্য পরী রহস্যকে আরও জটিল করে তোলে। ১৯৮৩ সালে এলসি এবং ফ্রান্সিস স্বীকার করে তাদের ছবিগুলো সত্যি ছিল না। ‘দ্য আনএক্সপ্লেইনড’ নামক একটি ম্যাগাজিনে এ বিষয়ে তাদের মন্তব্য প্রকাশিত হয়। সেখানে এলসি এবং ফ্রান্সিস জানায়, ‘প্রিন্সেস ম্যারি’স গিফট বুক’ নামক সে সময়ের জনপ্রিয় শিশুতোষ বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা কার্ডবোর্ড কেটে পরীর অবয়ব তৈরি করেছিল। সেগুলোকেই বিভিন্ন জায়গায় রেখে ছবি তুলে তারা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে ফেলে পুরো পৃথিবীকে। ‘প্রিন্সেস ম্যারিস গিফট বুক’- বইয়ের ছবিগুলোতে ডানা এঁকে তারা পরীর ছবি তৈরি করেছিল। কার্ডবোর্ডে সেসব ছবি এঁকে রং করে সুন্দর পরী তৈরি করে ফেলা এলসির জন্য মোটেই কঠিন ছিল না, কারণ ছবি আঁকায় সে বেশ দক্ষ ছিল। তবে প্রথম চারটি ছবি যে সত্যি ছিল নাÑ তা এলসি এবং ফ্রান্সিস দুজনেই স্বীকার করলেও পঞ্চম এবং শেষ ছবিটি সম্পর্কে তারা দুজন ভিন্ন মত প্রকাশ করে। এলসি জানায় সেই ছবিটিও অন্যগুলোর মতোই কার্ডবোর্ডের তৈরি পরীর ছবি। কিন্তু ফ্রান্সিস দাবি করে শেষ ছবিটি সত্যি ছিল। সে দাবি করে বাগানে খেলতে খেলতেই এক শনিবার বিকেলে সে ঘাসের ওপরে পরী দেখে এবং সেই মুহূর্তেই ছবি তোলে। পরবর্তীতে একটি টেলিভিশন শোতে এলসি বলে, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ছবিগুলোকে সত্যি বলে মেনে নেয়ায় সে এবং ফ্রান্সিস অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। ডয়েলের মতো একজন বুদ্ধিমান মানুষ দুজন কিশোরীর দুষ্টুমি বুঝতে পারবেন নাÑ এটা তারা ভাবেনি। তাই এ বিষয়ে চুপ থাকা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার ছিল না। একই শোতে ফ্রান্সিস বলে, কাউকে ঠকানোর কোন চিন্তাও তারা কখনও করেনি। তারা দুজনে বিষয়টি নিয়ে কেবল মজা করছিল। সেটাকে সবাই এত গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করবে, এটা তারা ভাবেনি। অতঃপর পরী ১৯৮৬ সালে ফ্রান্সিস এবং ১৯৮৮ সালে এলসির মৃত্যু হয়। এরপর তাদের পরীর ছবির প্রিন্ট এবং ডয়েলের লেখা বই ‘দ্য কামিং অফ দ্য ফেয়ারিজ’-এর প্রথম কয়েকটি কপি ২১,৬২০ পাউন্ডে নিলামে বিক্রি হয়। পরীর ছবি তৈরি করতে ব্যবহৃত সামগ্রী বিক্রি করা হয় ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ মিডিয়ার কাছে। সেখানেই ছবিগুলোর প্রিন্ট, ছবি তুলতে ব্যবহৃত ক্যামেরা, এলসির আঁকা পরীর ছবিসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়। এই পরী রহস্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তীতে দুটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়। আর এভাবেই শেষ হয় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে আলোড়ন তোলা পরী রহস্য, যা এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
×