ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাফুফের কঠোর সমালোচনায় সাবেক জাতীয় ফুটবলাররা

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১২ অক্টোবর ২০১৬

বাফুফের কঠোর সমালোচনায় সাবেক জাতীয় ফুটবলাররা

রুমেল খান ॥ ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৮৫। যা সর্বকালের সবচেয়ে বাজে র‌্যাঙ্কিং। এখন ভুটানের সঙ্গে হেরে সেই র‌্যাঙ্কিং যে আরও বাড়বে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ফুটবল বোদ্ধাদের মতে, এই অধঃপতনের জন্য শুধু ফুটবলাররাই দায়ী নয়, দায়ী ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট কমিটিও। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বড় বড় বুলি আউড়িয়েই গেছেন কাজী নাবিল আহমেদরা। তাদের অপেশাদার মনোভাবের কারণেই জাতীয় দলের আজ এই করুণ দুরবস্থা। এ প্রসঙ্গে জাতীয় দলের সাবেক স্থানীয় কোচ সাজ্জাদ আহমেদ সিদ্দিকী লাভলু (১৯৮৯ সালে একবার জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন) বলেন, ‘ভাষা তো অনেক বড় একটা সমস্যা। আমাদের ফুটবলাররা ইংরেজীতে ততটা দক্ষ নয়। ফলে বিদেশী কেচের কথা তারা ঠিকমতো বুঝতে পারে না। বিদেশী কোচরাও আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত নয়। তারা কখনও গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে ফুটবলার খুঁজে আনেন না। তারা নির্ভর করেন রেডিমেড ফুটবলারদের ওপর। আর তাই বাফুফের উচিত অন্তত তিন-চার স্থানীয় কোচ দিয়ে একটা দল গঠন করা।’ সাবেক তারকা ও জাতীয় দলের ফুটবলার-ডিফেন্ডার কায়সার হামিদও এই অধঃপতনের জন্য দায়ী করেছেন বাফুফেকেই। তিনি বলেন, ‘জীবনে কল্পনাও করিনি ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশ হারতে পারে। যে মালদ্বীপ-ভুটানকে আমরা বলে-কয়ে ৭/৮ গোলে হারাতাম, আজ তাদের কাছেই আমরা হারি। দেশের ফুটবল আজ কত নিচে নেমে গেছে!’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ফুটবলের এই অধঃপতনের জন্য দায়ী বাফুফে। বাফুফের বর্তমান কমিটির উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করা এবং নতুনদের সুযোগ করে দেয়া।’ এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে জাতীয় দলের বর্তমান খেলোয়াড়দের বাদ দিলে পর্যাপ্ত ব্যাকআপ খেলোয়াড় নেই। কায়সার বলেন, ‘ব্যাকআপটা হবে কিভাবে? স্কুল ফুটবল নেই, তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবল নেই।’ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক-গোলরক্ষক আমিনুল হক বলেন, ‘কাজী মোঃ সালাউদ্দিনসহ তার ২১ সদস্যের কমিটির সবার উচিত নিজেদেরই ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমে খেলা শুরু করা। সবাই তাদের খেলা দেখবে। এতে যদি দেশের ফুটবলের কিছুটা উন্নতি হয়!’ ক্ষোভমিশ্রিত কণ্ঠে আমিনুল বলেন, ‘আগে থেকেই আমাদের ফুটবল তলানির শেষ ধাপে ছিল, ভুটানের কাছে হেরে আমাদের ফুটবলের কফিনে শেষ পেরেকটি মারা হয়ে গেল। বাফুফের কর্মকর্তারা যেভাবে চেয়ার আঁকড়ে ধরে আছেন, তাতে ওই চেয়ারেরই অবমূল্যায়ন হচ্ছে। গত আট বছরে বাফুফের কমিটি ফুটবলের উন্নয়ন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তাদের উচিত এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা।’ আমিনুল আরও বলেন, ‘এটা ঠিক জাতীয় দলে এই মুহূর্তে কোন কোয়ালিটি ফুটবলার নেই। কিন্তু তাই বলে ভুটানের মতো দলের কাছে হারার মতো দল ছিল না বাংলাদেশ। ফুটবল দলের এই অধঃগতির জন্য দায়ী বাফুফের দায়বদ্ধতার অভাব। তারা মোটেও পেশাদারী নয়। আমরা চাই বাফুফের কমিটিতে নতুন কেউ আসুক। সালাউদ্দিনরা বাস করছেন কল্পনার রাজ্যে। তাদের মাটিতে নেমে আসতে হবে। খেলোয়াড় হিসেবে সালাউদ্দিন সফল হলেও সংগঠক হিসেবে তিনি ব্যর্থ।’ সাবেক জাতীয় ফুটবলার-কোচ হাসানুজ্জামান খান বাবলু বলেন, ‘আমাদের উচিত নেপাল-ভুটান যেভাবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করে সফল হয়েছে, তা অনুসরণ করা। বাফুফের তো কোন প্ল্যানিংই নেই। সব ছিল স্ট্যান্টবাজি! দেশবাসীকে গত আট বছর ধরে ধোঁকা দিয়ে ভুলিয়ে রেখেছে। আর ভোলানো সম্ভব নয়। দেশবাসীর কাছে তাদের ধোঁকাবাজি আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে। ভিশন ২০২২- এটা পুরোটাই বোগাস! আমাদের ফুটবলের দাফন কাজ ইতোমধ্যে হয়ে গেছে।’ বাবলু আরও বলেন, ‘বাফুফে নির্বাচনের সময় ১৫-২০ কোটি টাকা খরচ করা হয়। ফুটবলের এই অবস্থার জন্য কাউন্সিলররাও দায়ী। তারা অর্থের লোভে অযোগ্য লোককে ভোট দিয়ে ফুটবলের বারোটা বাজাতে সাহায্য করেছেন। এখন সালাউদ্দিনের উচিত সসম্মানে সরে দাঁড়ানো।’
×