ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে, কঠিন পরীক্ষায় মাশরাফির দল

সমতা ফেরাতে পারবে কি বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৯ অক্টোবর ২০১৬

সমতা ফেরাতে পারবে কি বাংলাদেশ?

মিথুন আশরাফ ॥ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে হারায় এখন সিরিজ হারের খপ্পরে পড়ে গেল বাংলাদেশ। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়েও বাংলাদেশ। সিরিজে সমতা আনতে হলে একটাই পথ খোলা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় শুরু হতে যাওয়া আজকের ম্যাচটিতে জিততে হবে। পারবে বাংলাদেশ জিতে সিরিজে সমতা আনতে? সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা যথার্থই বলেছিলেন, ‘আমাদের ফেবারিট বলা কঠিন।’ কেন? মাশরাফি জানিয়েছিলেন, ‘ওদের ব্যাকআপ ক্রিকেটাররাও অনেক ভাল। যারা এসেছে, ওরা অভিজ্ঞ। ওদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো অনেক শক্তিশালী। যারা এসেছে তারা যথেষ্ট যোগ্য ও ভাল বলেই এসেছে। একই সঙ্গে ওদের ম্যাচ উইনিং ক্রিকেটার অনেক আছে, যারা একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। আমাদের ফেবারিট বলা কঠিন। ওদের ৮-৯-১০ নম্বর ব্যাটসম্যানও অনেক ভাল ব্যাট করে। ব্যাটিং তাই অনেক শক্তিশালী ওদের। বোলিং তো ভালই।’ মাশরাফির কথাই সত্যিই হয়েছে। প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়েই আসলে মাত করেছে ইংল্যান্ড। ৩০৯ রান যে করেছে, সেখানেই আসলে পার্থক্য গড়ে গেছে। বেন স্টোকস ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো শতক করেছেন। ১০১ রানের ইনিংস খেলেছেন। অধিনায়ক জস বাটলার ৬৩ রান করেন। আর অভিষেক ওয়ানডেতেই ৬০ রান করে ঝলক দেখান বেন ডাকেট। কাউন্টি ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাই ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের এগিয়ে দেয়। সেখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা যত কমই হোক না কেন। অবশ্য এখানে বাংলাদেশ ফিল্ডারদেরও অবদান আছে। ইংল্যান্ড যে এত রান করল, ২১ রানে জিতল; সেটি হয়ত হত না। উল্টো বাংলাদেশের হাতেই জয় ধরা দিতে পারত। যদি ৬৯ অথবা ৭১ রানে স্টোকসের ক্যাচটি ধরতে পারতেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোশাররফ হোসেন রুবেল। তা করা যায়নি বলেই দুইবার ‘নতুন জীবন’ পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন স্টোকস। তাতে করে শতকও করে ফেলেন। আবার বল হাতেও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন পেসার জ্যাক বল ও লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। অভিষেক ওয়ানডেতেই বল ৫ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের মধ্যে অভিষেকেই রেকর্ড গড়েছেন। আর যে রশিদকে নিয়ে আতঙ্ক ছিল, তিনি নিয়েছেন ৪ উইকেট। বল ও রশিদের এমন দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও বাংলাদেশ ম্যাচটি জিততেই যাচ্ছিল। প্রস্তুতি ম্যাচের পর প্রথম ওয়ানডেতেও শতক করা ইমরুল কায়েস (১১২) ও সাকিব আল হাসান (৭৯) দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। ম্যাচ জেতার আশাও তৈরি হয়। কিন্তু যেই ২৭১ রানের সময় সাকিব আউট হন। বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানরাও ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন। চতুর্থ উইকেটে ইমরুল-সাকিব মিলে ১১৮ রানের জুটি গড়েন। সেই জুটি ভেঙ্গে যেতেই সব আশা যেন শেষ হয়ে যায়। এরপরও আশার আলো খানিক জ্বলে থাকে। ইমরুল যে থাকেন। কিন্তু ৩ রানের মধ্যে আরও ২টি উইকেট পড়ার পর যখন ২৮০ রানের সময় অহেতুক এগিয়ে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হন ইমরুল, তখন সব আশার আলোই এক নিমিষে নিভে যায়। ইমরুলই আশা দেখান। আবার সেই আশা তিনিই হতাশায় পরিণত করেন। সাকিব আউট হওয়ার আগে বল ও রশিদের বোলিংয়েও ধার দেখা যায়নি। এরপর দুইজনই দুর্বার হয়ে ওঠেন। ২৭১ থেকে ২৮৮Ñ এই ১৭ রানেই শেষ ৬ উইকেটের পতন ঘটে। এ ম্যাচটি হারার পেছনে যে ক্যাচ মিসই মুখ্য কারণ, তা মাশরাফির কণ্ঠেও ঝরেছে। তিনি প্রথম ওয়ানডে শেষে বলেছেন, ‘ক্যাচ মিসগুলোই আমাদের ক্ষতি করেছে।’ প্রথম ওয়ানডেতে যা হওয়ার হয়েছে। সিরিজে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে আজ জিততেই হবে। সেই জয়ের আশাতেই এখন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকেই সিরিজ জেতা দেখে অভ্যাস হয়ে গেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। যদি বাংলাদেশ এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হেরে যায়, তাহলে সবার মনের ভেতরই একটা ধাক্কা লাগবে। কষ্ট লাগবে। যে কষ্ট প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের সুযোগ তৈরি করেও হারায় মিলেছে। তারচেয়েও বেশি দুঃখ পাবে ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই দুঃখ এখন না পাওয়ার সব রসদ ক্রিকেটারদের হাতেই আছে। পারবেন ক্রিকেটাররা সিরিজে সমতা আনতে? সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার বলেছিলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। আমার মনে হয় প্রস্তুতি ম্যাচে আমাদের যে পরিস্থিতি ছিল, সেটাতে দারুণ অনুশীলন হয়েছে। আমরা সেদিনটাতে অনেক গরমের মধ্যে মাঠে থেকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভালভাবেই উন্নতি করেছি। সবাই খুব ভাল ব্যাট করেছে। খুব ভাল হয়েছে যে জিতে এসেছি এবং সেটার প্রদর্শনীটা আরেকটা ওয়ানডেতে করতে চাই। জয় অভ্যাসে পরিণত করতে চাই। দারুণ জয় ছিল এবং আরও পাওয়ার দিকে মনোযোগী।’ বাংলাদেশ সফরে প্রস্তুতি ম্যাচের পর আরেকটি জয়ও মিলে গেছে ইংল্যান্ডের। এখন সিরিজ জয়ের দিকেই মনোযোগী তারা। বাটলার বলেছেন, ‘আমরা জয়কে অভ্যাসে পরিণত করছি।’ ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে জিম্বাবুইয়ে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, আবার জিম্বাবুইয়ে ও আফগানিস্তানকে সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এবার দেশের মাটিতে টানা সপ্তম সিরিজ জয়ের স্বপ্নে সবাই বিভোর ছিল। সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশকে সেই স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে হলে আজ জিততে হবে। তখন ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি হয়ে উঠবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ। আর আজ হেরে গেলে তৃতীয় ওয়ানডেটি সান্ত¡নার জয়ের ম্যাচ হবে। আজ বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে সিরিজে ফিরুক, সমতায় ফিরুক; সেটিই সবার প্রত্যাশা।
×